নিউজ ডেস্ক:
নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হলে আবাসন খাতের কফিনে শেষ পেরেক মারা সম্পন্ন হবে বলে মন্তব্য করেছেন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) প্রেসিডেন্ট আলমগীর শামসুল আলামিন।
গত শনিবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ‘প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট ২০১৭-১৮ এর ওপর রিহ্যাবের প্রতিক্রিয়া’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ কথা বলেন রিহ্যাবের প্রেসিডেন্ট।
আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, ‘জাতীয় সংসদে বাজেট প্রস্তাব উত্থাপনের আগে রিহ্যাবের নেতারা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বিভিন্ন দাবি নিয়ে পৃথক পৃথক বৈঠক করেছিলেন। গণমাধ্যমের কাছে আমাদের দাবি এবং প্রস্তাবগুলো তুলে ধরার লক্ষ্যে সংবাদ সম্মেলনেরও আয়োজন করেছি। রিহ্যাবের বাজেট প্রস্তাবনায় আমরা সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছিলাম, সরকারের পক্ষ থেকে একটি তহবিল গঠনের ওপর। কারণ, মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের জন্য আবাসন খুব সহজেই সম্ভব, যদি সরকারের পক্ষ থেকে সিঙ্গেল ডিজিট সূদে ঋণের ব্যবস্থা করা হয়। মধ্যবিত্তের আবাসনের স্বপ্ন পূরণ করতে এবং আবাসন খাতে গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে আমরা ‘হাউজিং লোন’ নামে ২০ হাজার কোটি টাকার রিফিন্যান্সিং করার দাবিও জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে এ সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা বা বক্তব্য ছিল না। এ ছাড়া ব্যাংক ঋণের সুদ কমলেও তা যেকোনো সময় বাড়তে পারে বলে ক্রেতারা সে ঋণ তেমন নিচ্ছেন না। সরকারের বরাদ্দ করা আবাসন ঋণ হলে সে ক্ষেত্রে রিস্ক থাকে না বলে ইতিপূর্বে সে ধরনের ঋণ নিতে ক্রেতারা আগ্রহী ছিল। ঘোষিত প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে এই তহবিল গঠনের কোনো প্রতিফলন নেই।
রিহ্যাবের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি নুরন্নবী চৌধুরী শাওন বলেন, ‘বর্তমানে রেজিস্ট্রেশন ব্যয় ১৪ শতাংশ থেকে ১৬ শতাংশের ওপরে হওয়ায় ফ্ল্যাট এবং জমি কেনাবেচা ভয়াবহভাবে কমে গেছে। আমরা রেজিস্ট্রেশন খরচ ৭ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছিলাম। কিন্তু আমাদের এ দাবি বিবেচনা করা হয়নি। একটা ফ্ল্যাট কেনার পর বিক্রি করলে নামমাত্র খরচে রেজিস্ট্রেশন হওয়ার নিয়ম বিভিন্ন দেশে আছে। তাতে সম্পদ হস্তান্তর সহজ হলে মানুষ এ খাতে বিনিয়োগ করতে বেশি আগ্রহী হতো। সেকেন্ডারি মার্কেট সৃষ্টির সে সুবিধাও বাজেটে রাখা হয়নি। এ ছাড়া আরো বেশকিছু দাবি আমরা করেছিলাম, যার কোনোটারই কোনো প্রতিফলন এই প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে নেই।
তিনি আরো বলেন, ‘২০১৭-১৮ অর্থবছরে অর্থমন্ত্রী যে বাজেট উপস্থাপন করেছেন, তাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে নির্মাণ তথা আবাসন খাত। ফ্ল্যাট কেনাবেচায় ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রয়োগ শুরু হলে আবাসন খাতে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কারণ, ফ্ল্যাটের ওপর ভ্যাট ছিল ১ দশমিক ৫ থেকে ৪ দশমিক ৫ পর্যন্ত। গড়ে ৩ শতাংশ। এটা বর্তমানে হবে ১৫ শতাংশ। এমনিতেই এই খাত খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে আছে, এর মধ্যে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর করা হলে তা হাবে আবাসন খাতের কফিনে শেষ পেরেক মারা।’
নুরন্নবী চৌধুরী শাওন বলেন, ‘বর্তমান বাজারমূল্যে এক টন রডে ভ্যাট হবে সাড়ে ৭ হাজার টাকা। এ ছাড়া কাঁচা লোহা কিংবা স্ক্র্যাপ থেকে রড তৈরির সময় ফেরো ম্যাঙ্গানিজ, ফেরো সিলিকন, ফেরো সিলিকো ম্যাঙ্গানিজসহ বিভিন্ন উপাদান লাগে। এবার বাজেটে এই তিনটি পণ্যে আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ হারে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বসানো হয়েছে। এতে সার্বিকভাবে এসব পণ্য আমদানি খরচ বাড়বে, যা রড তৈরির খরচ আরো বাড়িয়ে দেবে। এবার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বেড়েছে। এর ওপর ভ্যাট বাড়বে। সব মিলিয়ে রডের দাম প্রতি টন ৯-১০ হাজার টাকা বৃদ্ধির আশঙ্কা আছে।’
তিনি বলেন, ‘রডের পরে আসে সিমেন্টের কথা। এই সিমেন্টের প্রধান কাঁচামাল ফ্লাই অ্যাশ। ফ্ল্যাই অ্যাশ আমদানিতেও ১০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বসানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আগামী ১ জুলাই থেকে বোল্ডার স্টোন ও স্যান্ডস স্টোন আমদানিতে যথাক্রমে ১৫ ও ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রক শুল্ক দিতে হবে। একইভাবে নির্মাণ খাতের অন্যতম উপাদান ইটের খরচও বাড়বে ভ্যাটের কারণে। প্রাকৃতিক বালুর উপরও ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। যা আগে কোনো সময়েই ছিল না। সার্বিকভাবেই নির্মাণের পাঁচটি উপাদান রড, সিমেন্ট , ইট ও পাথর, বালির দাম বাড়বে। ফলে এই সেক্টরে আরো ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হবে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ খাতে জড়িত ২ কোটি মানুষের আয়ের পথ আরো মুখ থুবড়ে পড়বে।’
দেশের উন্নয়নের স্বার্থে, মানুষের মৌলিক অধিকার প্রাপ্তির স্বার্থে আমরা এই নতুন ভ্যাট আইন আবাসন খাতে যেন প্রয়োগ না হয় এবং বাজেট পাশের আগে রিহ্যাবের অন্য দাবিগুলো যেন বিবেচনা করা হয়, সে অনুরোধ জানান সরকার দলীয় এ সংসদ সদস্য।