নিউজ ডেস্ক:কৃষক পর্যায়ে উচ্চ ফলনশীল, লেটব্রাইট প্রতিরোধক এবং পরিবর্তনশীল আবহাওয়া উপযোগী উদ্ভাবিত নতুন জাতের আলুর চাষ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট কুষ্টিয়ার সরেজমিন গবেষণা বিভাগের সহযোগিতায় জেলার বিভিন্ন এলাকায় বারি ৭, ৮, ৪১ ও ৫৬ জাতের আলু চাষ হচ্ছে।কৃষক পর্যায়ে উচ্চ ফলনশীল, লেটব্রাইট প্রতিরোধক এবং পরিবর্তনশীল আবহাওয়া উপযোগী উদ্ভাবিত নতুন জাতের আলুর চাষ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট কুষ্টিয়ার সরেজমিন গবেষণা বিভাগের সহযোগিতায় জেলার বিভিন্ন এলাকায় বারি ৭, ৮, ৪১ ও ৫৬ জাতের আলু চাষ হচ্ছে। জানা গেছে, বারি’র সরেজমিন গবেষণা বিভাগ কুষ্টিয়ার ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (এসএসও) ড. জাহান আল মাহমুদের উদ্যোগে এ আলু চাষ হচ্ছে। উচ্চফলনশীল জাতের এ আলুর রোগ ও পোকা-মাকড় প্রতিরোধ ক্ষমতাও বেশি। বারি উদ্ভাবিত আলুর জাতের উৎপাদন কর্মসূচির অভ্যন্তরে চুয়াডাঙ্গা জেলার বেলগাছি, সুমিরদিয়া, জয়রামপুর, তিতুদহে ১২ জন চাষির ২ হেক্টর জমিতে এ আলু চাষ হচ্ছে। কৃষি বাতায়ন সূত্রে জানা গেছে, বারি আলু-৭ এর আঞ্চলিক নাম ডায়ামন্ট, ৯০-৯৫ দিন জীবনকাল, প্রতি হেক্টর জমিতে ২৫-৩৫ টন কেজি উৎপাদন হবে। মড়ক ও ভাইরাস রোগ প্রতিরোধী এ জাতের আলু ডিম্বাকার, মাঝারী থেকে বড় আকৃতির, ত্বক মসৃণ, হালকা হলুদ বর্ণের, শাঁস ফ্যাকাসে হলুদ এবং চোখ অগভীর। বারি আলু-৮ এর আঞ্চলিক নাম কার্ডিনাল, জীবনকাল ৯০-৯৫ দিন দিন প্রতি হেক্টর জমিতে ২৫-৩৫ টন কেজি উৎপাদন। মড়ক ও ভাইরাস রোগ প্রতিরোধী এ জাতের আলু ডিম্বাকার, মাঝে মধ্যে কিছুটা সরু লম্বাকার হয়, মাঝারী আকার, ত্বক মসণ ও লাল, শাঁস ফ্যাকাসে হলুদ এবং চোখ অগভীর। বারি আলু-৪১, ৯০-৯৫ দিনে পরিপক্কতা লাভ করে। প্রতি হেক্টর জমিতে ৩৮-৫৪ টন কেজি উৎপাদন হয়। প্রক্রিয়াজাতকরণ বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন এ আলু গোলাকার থেকে চ্যাপ্টা গোলাকার আকারের। আলুর রং গাঢ় লাল, চামড়া মসৃণ। আলুর রং গাঢ় লাল, চামড়া মসৃণ। আলুর শাসের রং হালকা হলুদ। চোখ মধ্যম অগভীর। বারি আলু-৫৬ এর জীবনকাল ৯০-৯৫ দিন। প্রতি হেক্টর জমিতে উৎপাদন ২৯.৬৪-৪৫.০১ টন কেজি। এ আলু খাট ডিম্বাকৃতি থেকে মধ্যম আকারের।চুয়াডাঙ্গার এমএলটি সাইটের বৈজ্ঞানিক সহকারী (এসএ) রাসেল কবির তরফদার জানান, এ আলু চাষে এক বিঘায় সব মিলিয়ে ১৪ থেকে ১৬ হাজার টাকা খরচ হবে। উচ্চ ফলন পাওয়া যাবে। খাওয়ার জন্যও বেশ সুস্বাদু। টকটকে লাল এবং সাদা রঙের আলুগুলো দেখতেও বেশ ভালো। বারি ৪১ সাধারণ টেম্পাচারে ২ থেকে ৩ মাস রাখা যাবে। সুতরাং বেশি করে কিনে বাসায় রেখে খাওয়ার ক্ষেত্রে খুব ভালো জাতের আলু। নষ্ট হবে না। ব্যাকটেরিয়া সহনশীল হওয়ায় চাষের ক্ষেত্রে সুবিধাজনক। অনেক সময় চাষিরা বীজ কিনে প্রতারণা হয়, তবে এ আলুর বীজ থেকে বিজ উৎপাদন করা সম্ভব। বিষা প্রতি ১ শ মণের বেশি আলু উৎপাদন হবে। আবার খাওয়ার জন্য ৭০-৭৫ দিনেই ওঠানো যাবে। বিজের জন্য বপনের সময় ২০ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর। ৮০ থেকে ৯৫ দিনের মতো রাখলে বীজ করা যাবে।আলুচাষি কৃষক চুয়াডাঙ্গা বেলগাছি গ্রামের হুমায়ন কবির জানান, ‘বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কুষ্টিয়ার সরেজমিন গবেষণা বিভাগের দেওয়া বীজে প্রথমবারের আমি এ আলু চাষ করছি। ফলন থেকে আমি খুবই আনন্দিত। বিঘা প্রতি কম খরচে আলুর এতো ফলন হবে আমি ভাবতে পারিনি। আগামীতেও এ জাতের বীজ পেলে আমরা উপকৃত হব।’আলুচাষি দামুড়হুদার জয়জামপুর গ্রামের হায়দার আলী বলেন, যা দেখছি আলুর উৎপাদন অনেক বেশি। অনেক সময় বীজ কিনে প্রতারণার স্বীকার হতে হয়। সরকারিভাবে এ আলুর বীজ পেলে ভালো হবে। যেহেতু ফলন ভালো, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে বীজ পেলে চাষ করার ভালো হবে।কয়েকজনের আলু চাষ দেখে কৃষক শাহিন আলম ও আব্দুল কাদের বলেন, ‘যদিও আমরা এ আলুর বীজ পাইনি, তবে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট যদি আমাদের বীজ দেয়, তাহলে আমরা চাষ করব। এতো ফলন সাধারণত দেখা যায় না। আলুগুলো খুব ভালো জাতের। অনেক সময় বীজ কিনে আলু বপনের পর ফলন ভালো হয় না। ভালো ফলন না পওয়ায় আমরা হতাশ হয়, আবার কষ্টের টাকায় চাষ করে ক্ষতিও হয়। সরকার যদি উদ্যোগী হয়ে এ জাতের আলুর বীজ সরবরাহ করে, তাহলে কৃষকের মুখে হাসি ফুটবে। ভবিষ্যতে আলু চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে।’