মাথাভাঙ্গা ও ভৈরবে নদী প্রবাহে অবৈধ কোমর-বাঁধ, পলিমাটি জমে হারাচ্ছে নাব্যতা
রাহুল রাজ চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি:মাছে-ভাতে বাঙালি’ কথাটি যেন খুব সহসায় বাসি হতে চলেছে। এর কারণ, বাঙালির রুচি পরিবর্তন কিংবা মাছ খাওয়ার অভ্যাস কমে যাওয়া নয়! এর কারণ হল মাছের আকাল। বিশেষ করে প্রাকৃতিক উৎস থেকে পাওয়া মাছের স্বল্পতা এতটাই প্রকট হয়ে উঠেছে যে, মাছের বদলে বিকল্প আমিষের উৎস খুঁজতে হচ্ছে আমাদের। নদী, খাল ও অন্য জলাধার, জলজ উদ্ভিদ ও মাছ আমাদের বিশাল প্রাকৃতিক সম্পদ। মানবসৃষ্ট কারণে সেই সম্পদ আজ ধ্বংসের পথে। নদীতে অবৈধ বাঁশের বাঁধ ও জাল ব্যবহার করে মাছ শিকার করার কারণে যেমন নদী হারাচ্ছে তার নাব্যতা, তেমনি বিলুপ্ত হচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ। যেখানে এক সময় আমিষের সহজলভ্য উৎস ছিল মাছ। শুধু আমিষ নয়, রসনা বিলাসেও এর জুড়ি ছিল না। কিন্তু এখন মাছের আকাল, সেই সঙ্গে মূল্যবৃদ্ধি অতৃপ্ত রসনা বিলাসের পাশাপাশি মানুষের পুষ্টিস্বল্পতার জন্যও দায়ী। চুয়াডাঙ্গায় মাথাভাঙ্গা, ভৈরবসহ পাঁচটি নদী রয়েছে। এর মধ্যে শুকিয়ে যাওয়া নবগঙ্গা ও কুমার নদ বাঁচাতে খনন কার্যক্রম চলছে। আর যে নদীগুলোতে পানি বা জলাধার রয়েছে, সেগুলো এখন কোমর-বাঁধ দখলদারদের কবলে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, দামুড়হুদা উপজেলায় প্রায় ২৬ কিলোমিটার মাথাভাঙ্গা ও ৫৮ কিলোমিটার ভৈরব নদের প্রবাহ রয়েছে। এ অঞ্চলে নদীতে আড়াআড়ী বাঁধ দেওয়ার কারণে মাটির পলি এবং অন্য পরিপোষক পদার্থ বিভিন্ন কাঠামোতে আটকে যাওয়ায় নদীর পানিতে মিশে ছড়িয়ে যেতে পারছে না। যার কারণে, পলি জমে নাব্যতা হারাচ্ছে নদী, তেমনি ¯্রােত বৃদ্ধি পেয়ে নদীর পাড় ভাঙনের সৃষ্টি হচ্ছে। মাথাভাঙ্গা নদীর বিষ্ণুপুর ব্রিজ, কেশবপুর, বাস্তপুর, রঘুনাথপুর, আরামডাঙ্গা গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মাথাভাঙ্গা নদীতে বাঁধ দিয়ে অবৈধভাবে মাছ শিকার করা হচ্ছে। একই চিত্র ভৈরব নদীতেও।
অপর দিকে, কিছু দেশী প্রজাতির মাছ প্রজননের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ খুঁজে থাকে। কিন্তু কোমর-বাঁধের কারণে তারা গন্তব্যে প্রজননের উপযুক্ত পরিবেশে যেতে পারে না। ফলে সঠিক সময়ে ডিম দিতে না পারায় এসব দেশীয় প্রজাতির মাছের বংশবিস্তার হুমকির মুখে। এ ছাড়া কারেন্ট জাল ব্যবহারের ফলে ছোট পোনা এবং মা মাছ ধরা এবং বিক্রিও বিলুপ্তির অন্যতম কারণ।
পরিবেশবিদদের মতে, কৃষিজমিতে অনিয়ন্ত্রিত কীটনাশক ও অবৈধ কারেন্ট জালের ব্যবহার, খাল-বিল-ডোবা ভরাট, উন্মুক্ত জলাশয়ে বাঁধ নির্মাণসহ মাছের বিচরণক্ষেত্রের প্রতিকূল পরিবর্তনের কারণে দিন দিন দেশীয় মাছ বিলুপ্ত হচ্ছে। মানুষ বাজার থেকে নিয়মিত দেশি মাছ কিনতেন। অনেকে নিজেদের পলো, জাল, বড়শি দিয়ে খাল, বিল, পুকুরে মাছ ধরতেন। এ ছাড়া টাঁকি/চ্যাং, আইড়, পুঁটি, খলিসা, তাঁরা গুছে, ট্যাংরা, বাইন, কালবাউশসহ ৫৫ প্রজাতির মাছ বিপন্ন প্রায়। জলাশয়-ডোবা ভরাট, অবৈধ কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ ধরা, জমিতে কীটনাশকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারসহ মাছের অনূকূল পরিবেশ তৈরি না হওয়ায় অনেক মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
দামুড়হুদা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, কিছু অসাধু মৎসজীবী গোপনে চুরি করে নদীতে বাঁধ দিচ্ছে। এদের তালিকা তৈরি করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট দেওয়া হয়েছে। খুব দ্রুত এসব উচ্ছেদ করাসহ সমস্যা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মুনিম লিংকন বলেন, ‘নদীতে অবৈধভাবে বাঁধ দেওয়ার কারণে নদী যেমন নাব্যতা হারাচ্ছে, তেমনিভাবে দেশী প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হচ্ছে। নদী রক্ষার্থে আমাদের সবার সচেতন হওয়া দরকার। তবে খুব দ্রুত এসব অপসারণসহ জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’