দিনাজপুর প্রতিনিধি –
২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে দুই জনকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ২৯ সেপ্টেম্বর রবিবার রাতে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ থানায় সাবেক এমপি মনোরঞ্জন শীল গোপাল সহ ২৭ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামা ৯০/১০০ জন রয়েছে।
মামলাটি করেন ১০ নং মোহনপুর ইউনিয়নের ভোগীরপাড়া গ্রামের আবুল কালাম আজাদের স্ত্রী জহুরা খাতুন (৪৫)। ঐ মামলায় এক জনকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে বীরগঞ্জ থানা পুলিশ। দিনাজপুর-১ (বীরগঞ্জ- কাহারোল) আসনের সাবেক এমপি মনোরঞ্জন শীল গোপাল ছাড়াও পৌর শহরের আব্দুল বারীর পুত্র ইয়াসিন আলী, শতগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান মতি, মরিচা ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি মৃত শামসুল হক মাস্টারের পুত্র শফিউল আজম, গোলাপগঞ্জ আওয়ামীলীগ সভাপতি তোজাম্মেল হক রিমন, নিজপাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক সরকার, বীরগঞ্জ ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক, সাতোর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি রেজাউল করিম শেখ, বীরগঞ্জ ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক ও মোহনপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি জিয়াউর রহমান জিয়া, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য নুর ইসলাম নুর, শতগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ঝাড়বাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা সহ ২৭ জনরএই মামলায় এজাহার নামীও আসামী।
মামলার এজাহারে বাদী জানায়, ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন ২০ দলীয় জোট বর্জন করে। ৪ জানুয়ারি বিকেলে আমার ছেলে সালাউদ্দিন (১৬) গণপৈত গ্রামে তার খালু কারী মোঃ দেলোয়ার হোসেনের বাড়িতে বেড়াতে যায়। ৫ জানুয়ারি সালাউদ্দিন বাড়িতে ফেরার সময় তার বন্ধু সাহাডুবি (উত্তরপাড়া) গ্রামের আলিম উদ্দিনের পুত্র আসাদুল ইসলাম (১৫) এর সঙ্গে দেখা করে দুই বন্ধু পায়ে হেঁটে বাড়ির দিকে আসার পথে শিবরামপুর ইউনিয়নের বাবুরহাট ভেলাপুকুর নামক স্থানে পৌছলে এজাহার নামীও আসামিগণ সহ ৯০/১০০ জন তাদের পথ রোধ করে শিবির শিবির বলে চিৎকার করিয়া বে-আইনী দলবদ্ধ হয়ে সালাউদ্দিন ও আসাদুলকে পিটিয়ে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে গুরুতর আহত অবস্থায় রাস্তায় ফেলে পালিয়ে যায়।
পরে লোকজনের সহায়তায় তাদেরকে উদ্ধার করে মুমূর্ষ অবস্থায় বীরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করে। তাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত ডাক্তার দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। ৫ জানুয়ারি বিকেল ৫ টায় তার ছেলে ভিকটি সালাউদ্দিন দিমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন এবং পরের দিন ৬ জানুয়ারি সকাল সাতটার দিকে অপর ভিকটিম আসাদুল ইসলাম মারা যায়।
ময়নাতদন্ত শেষে ভিকটিম দুজনকে ৬ জানুয়ারি নিজ নিজ বাড়িতে নিয়ে এসে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন কার্যসম্পন্ন করেন। বাদী জহুরা খাতুন মুঠোফোনে জানায়, ঐ সময় তার ছেলে সালাউদ্দিন কাঠগড় দাখিল মাদ্রাসার নবম শ্রেণী হতে দশম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়েছিল মাত্র। সে সময় পরিস্থিতি আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে থাকায় আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারি নাই। পরিবেশ পরিস্থিতি ফিরে আসায় ১০ বছর পর ন্যায় বিচারের স্বার্থে ছেলে হত্যার মামলা করলাম।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সাতোর ইউনিয়নের প্রাণনগর গ্রামের নিজ বাড়ি হতে ২৯ সেপ্টেম্বর রবিবার জালাল উদ্দিনের পুত্র জাহের আলী (৩৫) কে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করেছেন। বীরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মজিবুর রহমান আজকের পত্রিকাকে জানায়, বাদীর এজাহারের প্রেক্ষিতে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর ও গুরুতর জখমের ঘটনায় বীরগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা হয়েছে। যার নং- ২৩/১১৮। তারিখ ২৯/০৯/২০২৪।