নিউজ ডেস্ক:
বিশ্বের সবচেয়ে বিতর্কিত অঞ্চল এখন দক্ষিণ চীন সাগর। বলা যায়, বিশ্বের দুই পরাশক্তি—যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের তিক্ত সম্পর্কের ‘মধ্যমণিও’ এই সাগর। সম্প্রতি ওই অঞ্চলে টহলে যায় মার্কিন নৌবাহিনীর বিমান ‘পি-৮এ পোসাইডন’। টহলের সময় বিমানের ক্রুদের ছয়বার সতর্কবার্তা পাঠায় চীনের সামরিক বাহিনী। সতর্কবার্তায় বলা হয়, ‘এই মুহূর্তে ফিরে যাও; নইলে যেকোনো সময় ভুল-বোঝাবুঝি হতে পারে।’
দক্ষিণ চীন সাগরের প্রায় ১৪ লাখ বর্গমাইল এলাকার মালিকানা নিয়ে চীনের সঙ্গে কয়েকটি দেশের বিরোধ রয়েছে। মালিকানার দাবিদার দেশগুলোর মধ্যে আছে ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ব্রুনেই ও তাইওয়ান। কিন্তু চীন এই বৃহৎ জলসীমার প্রায় পুরোটাই নিজেদের দাবি করে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান চীনের বিপক্ষে। বিরোধপূর্ণ এলাকাগুলো হলো স্পার্টলি, প্যারাসেল ও স্কেয়ারবোরো দ্বীপপুঞ্জ। এর মধ্যে স্পার্টলিতে বেশ কয়েকটি কৃত্রিম দ্বীপ বানিয়েছে চীন। এ ছাড়া দখলকৃত দ্বীপে তারা সামরিক স্থাপনা নির্মাণ করেছে বলেও দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্ররা অভিযোগ করে আসছে।
এ অবস্থায় বিতর্কিত অঞ্চলে নিয়মিত টহল দেয় যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী। গতকাল শুক্রবারও টহলে যায় তাদের পি-৮এ পোসাইডন। এই বিমানে ক্রুদের সঙ্গে ছিলেন মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনের এক সাংবাদিকও।
তাঁর বরাত দিয়ে সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিমানটি প্রায় ১৬ হাজার ৫০০ ফুট ওপর দিয়ে উড়ছিল। এটি স্পার্টলি দ্বীপপুঞ্জের চারটি প্রবাল প্রাচীর অতিক্রম করে। এগুলো হলো সুবি রিফ, ফ্লেরি ক্রস রিফ, জনসন রিফ ও মিশেফ রিফ। এগুলোর একটি জায়গায় পাঁচতলা একটি ভবন দেখা গেছে। আছে রাডার ব্যবস্থা, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও বিমানের রানওয়ে। ওই রানওয়ে এতটাই পরিকল্পিতভাবে বানানো যে এর মাধ্যমে যেকোনো যুদ্ধবিমান উড্ডয়ন অথবা অবতরণ করতে পারবে।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, পি-৮এ পোসাইডনকে উদ্দেশ করে ছয়টি সতর্কবার্তায় পাঠায় চীনের সামরিক বাহিনী। বলা হয়, ‘তোমরা চীনের ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছ। এই মুহূর্তে ফিরে যাও; নইলে যেকোনো সময় ভুল-বোঝাবুঝি হতে পারে।’
চীন যতবারই সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে, ততবরাই একই জবাব দিয়েছেন পি-৮এ পোসাইডনে থাকা মার্কিন নৌ সদস্যরা। তাঁরা বলেন, ‘আমি স্বাধীন ও সার্বভৌম যুক্তরাষ্ট্রের একটি নৌবিমান। আমি আন্তর্জাতিক আকাশসীমায় আইন মেনেই টহল কার্যক্রম চালাচ্ছি। আর আন্তর্জাতিক আইন আমাকে এই টহল দেওয়ার অধিকার দিয়েছে।’
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক অর্থনীতি, ভূরাজনীতি কিংবা কূটনীতি—সব ক্ষেত্রেই দক্ষিণ চীন সাগর খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক জলসীমা। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, জাহাজপথে বিশ্বে যে পরিমাণ বাণিজ্য হয়, তার এক-তৃতীয়াংশই হয় দক্ষিণ চীন সাগর দিয়ে। এ ছাড়া সাগরের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেলের মজুদ রয়েছে। এসব কারণেই এর মালিকানা নিয়ে এত বিরোধ।
সূত্র : সিএনএন।