জ্বালানি তেল আমদানিতে বিদেশি জাহাজের পাশাপাশি দেশি জাহাজও ব্যবহার করতে হবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে (বিপিসি)।
সচিবালয়ে রোববার এক আন্তমন্ত্রণালয় সভায় এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। সূত্র জানায়, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিপিসি সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) বহরে থাকা তিনটি জাহাজ তেল আমদানির জন্য ব্যবহার করবে। ব্যবহারের বিষয়টি ঠিক করতে দুই পক্ষ বৈঠক করবে। আগামী জানুয়ারি থেকে বিএসসির জাহাজ ব্যবহার শুরু হবে।
সূত্র বলছে, বিএসসির জাহাজ ব্যবহার করলে একদিকে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে, অন্যদিকে তেল আমদানিতে বাংলাদেশের মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। বিপিসি এখন শুধু বিদেশি জাহাজে করে তেল আমদানি করে।
আন্তমন্ত্রণালয় সভায় সভাপতিত্ব করেন নৌপরিবহন সচিব মোস্তফা কামাল। এতে বিপিসির পরিচালক খালিদ আহম্মেদ, বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর এস এম মনিরুজ্জামান, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সঞ্জয় কুমার বণিকসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে উপস্থিত বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিদেশ থেকে আমদানিতে ৫০ শতাংশ পণ্য দেশি জাহাজে করে আনার বিষয়টি বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ (স্বার্থরক্ষা) আইনে স্পষ্ট বলা আছে। আইনে আরও বলা আছে, সরকারি তহবিলের অর্থে সমুদ্রপথে পরিবাহিত পণ্য রাষ্ট্রমালিকানাধীন বিএসসির মাধ্যমে পরিবহন করতে হবে। ফলে এটি বিএসসির অধিকারের মধ্যে পড়ে। তা ছাড়া বিদেশি জাহাজের মাধ্যমে তেল আমদানির কারণে দেশীয় বিমা কোম্পানি অর্থ আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বৈঠকে উপস্থিত কর্মকর্তারা আরও বলেন, দেশীয় জাহাজ ব্যবহার করলে আপত্কালীন পণ্য পরিবহন অধিক নিরাপদ হবে। বিদেশি জাহাজ নির্ভরশীলতা কমবে। এতে ডলার সাশ্রয় হবে।
অন্যদিকে বিপিসির বক্তব্য হচ্ছে, জ্বালানি তেলের চাহিদার পুরোটা আমদানি করার মতো সক্ষমতা বিএসসির নেই। তাদের হিসাবে, বাংলাদেশ বছরে ১৫ লাখ টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করে। এ ছাড়া ৪০ লাখ টন ডিজেল আমদানি করে। পুরোটাই আমদানি করা হয় বিদেশি জাহাজে করে। এর বাইরে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমেও জ্বালানি তেল আমদানি করে বিপিসি। এত বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেল আমদানির সক্ষমতা বিএসসির নেই।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বিদেশ থেকে তেল আমদানির সময় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ক্রয় চুক্তিতে নতুন একটি ধারা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ ক্রয় চুক্তিতে দেশীয় জাহাজ ব্যবহারের কথা উল্লেখ থাকবে। আর বিএসসি যদি দরপত্রে অংশগ্রহণ না করে তাহলে তারা অনাপত্তিপত্র দেবে।
জানতে চাইলে বিএসসির উপমহাব্যবস্থাপক মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, বৈঠকটি ফলপ্রসূ হয়েছে। আগামী জানুয়ারি থেকে জ্বালানি তেল আমদানির সময় দরপত্রে দেশীয় জাহাজ অন্তর্ভুক্তের কথা উল্লেখ থাকবে। তার আগে দুই পক্ষ বৈঠকে বসবে। তাতে সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে আলোচনা হবে। সম্ভাব্যতা যাচাই হবে। সেখান থেকে একটা সমাধানের পথ বের করা হবে।
বিএসসি বলছে, তাদের বহরে বর্তমানে আটটি জাহাজ রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি জাহাজ ‘প্রোডাক্ট অয়েল ট্যাংকার’, যাতে তেল পরিবহন করা যায়। ট্যাংকারগুলো হচ্ছে এমটি বাংলার অগ্রযাত্রা, বাংলার অগ্রদূত ও বাংলার অগ্রগতি। ট্যাংকারগুলোর প্রতিটির ধারণক্ষমতা ৩৯ হাজার টন।
বিএসসি বলছে, তাদের তিনটি জাহাজ এখন দেশের বাইরে ভাড়ায় খাটছে। আগামী অক্টোবর ও নভেম্বরের মধ্যে এসব জাহাজ দেশে ফিরে আসার কথা রয়েছে। এসব জাহাজ বসিয়ে রাখলে লোকসান গুনতে হয়। আর বিপিসি বিদেশি জাহাজ ভাড়া করে বলে বছরে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়।