চুয়াডাঙ্গায় চলতি মৌসুমে বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড ৩৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস
নিউজ ডেস্ক:দাবদাহে পুড়ছে চুয়াডাঙ্গা। শুরু হয়েছে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ। গতকাল রোববার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। তীব্র গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে মানুষ। আবহাওয়া অধিদপ্তরের রেকর্ড পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অন্যান্য বছরে মে মাসের মাঝামাঝি গরমের তীব্রতা বাড়লেও এবার এক মাস আগে থেকেই তা শুরু হয়েছে। ২০১৪ সালের ২১ মে চুয়াডাঙ্গায় স্বাধীনতার পর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া ২০১২ সালের ১৪ মে ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও ২০১৪ সালের ১৮ মে ৪১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
গত চার দিন থেকে চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় জনজীবন অনেকটা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তবে বিদ্যুতের খুব একটা লোডশেডিং না থাকায় কিছুটা স্বস্তির পেয়েছে মানুষ। তপ্ত রোদের গরমে জীবিকা নির্বাহের জন্য রাস্তায় বের হওয়া খেটে খাওয়া মানুষগুলোর কাহিল অবস্থা। রাস্তাঘাটে লোকজন চলাচল কমে গেছে। দুপুরের আগেই শহর ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে। গরমজনিত রোগবালাই বেড়ে চলেছে।
সদর উপজেলার মাখালডাঙ্গা গ্রামের দিনমজুর জামাত আলী বলেন, ‘ভ্যাপসা গরমে কারণে গেল চার-পাঁচ দিন ধইরে লোকজন কাজে বেরাচ্চে না।’ একই কারণে রিকশা চলাচলও কমে গেছে। জাফরপুর গ্রামের এক রিকশাচালক বলেন, ‘য্যারাম গরম পড়চে, তাতে রিশকা চালাতি গেলি গা পুইড়ে ঝলসে যাচ্চে। লোকজন বাজারে তেমন বের হচ্চে না। তাই আয়-রুজগারউ কুমে গিয়েচে।’
এদিকে, গরমে একটু স্বস্তি পেতে জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে ডাব, জুস ও শরবতের দোকানে ভিড় জমাচ্ছে তৃষ্ণার্থরা। সাধারণ শ্রমিক বাচ্চু মিয়া জানান, গরম ও তাপদহের কারণে শরীর একেবারে ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। যে কারণে লেবুর শরবত পান করে একটু স্বস্তি নিচ্ছি। চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের সামনে এক শরবত বিক্রেতা জানান, প্রচন্ড তাপদহ ও গরমের কারণে লেবুর শরবতের চাহিদা বেড়েছে। আগে প্রতিদিন ২শ’ গ্লাস শরবত বিক্রি হতো। আজ (গতকাল) প্রচন্ড গরমের কারণে প্রায় ৭শ’ গ্লাস শরবত বিক্রি হয়েছে।
অন্যদিকে, তীব্র দাবদাহ শুরু হওয়ায় সদর হাসপাতালে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাড়তি রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্তব্যরত নার্সরা। ডায়রিয়া, আমাশয় ও পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। অতিরিক্ত গরমে শিশু ও বয়োবৃদ্ধরা সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। হাসপাতালে বেড়েছে রোগীর সংখ্যা। ফলে জায়গা সংকটে বিপাকে পড়েছেন চিকিৎসা-সেবিকারা। গতকাল সদর হাসপাতালের আউটডোরে দেখা যায়, চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের লম্বা লাইন। আবহাওয়াজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসছেন বেশিরভাগ রোগী। গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও রোগীর চাপ বাড়তে পারে বলেও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।
সদর হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডে অতিরিক্ত রোগী ও স্বজনদের চাপে ব্যহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। রোগীরা বলেন, যেমন গরম পড়ছে সাথে রোগীদের ও ভিড় রয়েছে ওয়ার্ডগুলোতে। অতিরিক্ত রোগীদের চাপে গরমে অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছি। এ বিষয়ে সদর হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শামীম কবির বলেন, তীব্র তাপদাহের কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে চুয়াডাঙ্গাবাসীর জনজীবন, হাসপাতালে বেড়েছ গরমজনিত রোগীর সংখ্যাও। যে কারণে স্যালাইনের সাথে প্রচুর পরিমাণে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন খাবার পানি আর ঠান্ডা স্থানে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
তিনি আরও জানান, এখন গরমের কারণে রোগের প্রভাব বেশি। বিশেষ করে গরমে রোটা ভাইরাসের কারণে ডায়রিয়া বেড়ে যায়। তাই হাসপাতালে আসতে হয়। তবে ভয়ের কিছু নেই। ডায়রিয়া হলে ঘন ঘন খাবার স্যালাইন খেতে হবে। এছাড়া শ্বাসকষ্ট ও জ্বরের প্রভাব বেশি হওয়া স্বাভাবিক। রোগ প্রতিরোধে স্বাভাবিক খাবার ছাড়া বাইরের খাবার খাওয়ানো যাবে না, গরম ও রোদের তাপ থেকে শিশুদের মুক্ত রাখতে হবে। যত সম্ভব শিশুদের ঠা-া জায়গায় রাখা, বুকের দুধ পান করানোর আগে স্তনের পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। এছাড়া পরিবেশ-পরিস্থিতি বুঝে শিশুদের যতœ নিতে হবে। রোগ থেকে রক্ষা পেতে বিনা কারণে বাইরে না যাওয়া, প্রচুর পরিমাণে পানি পান, ফলের রস পান না করা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।
শামীম কবির বলেন, ভাইরাসজনিত জ্বর, ডায়রিয়া, সর্দি-কাঁশি শিশুদের বেশি আক্রমণ করছে। এছাড়া হিটস্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি বেশি রয়েছে। তাই গরমে বাইরে বের না হওয়াই ভাল। এছাড়া গরমের আগে জরুরি কাজ শেষ করা উত্তম। তিনি বলেন, গরমে রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি সেবা দেওয়ার। তবে রোগীর তুলনায় জনবল কম, তাই কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে কর্তব্যরত নার্স ও আয়াদের। দেড়’শ শয্যার সদর হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন হাজারের বেশি রোগী চিকিৎসা নিতে আসছে।
এদিকে আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে গতকাল (রোববার) চুয়াডাঙ্গা ছিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯ দমমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও হচ্ছে না। তবে ঘুর্নি ঝড়ের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
নিজস্ব প্রতিবেদক: