নিউজ ডেস্ক:
শীতজনিত রোগ রোটা ভাইরাস ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে; সদর হাসপাতালের মেঝেতে রেখেই চলােছ চিকিৎসা !
চুয়াডাঙ্গায় রোটা ভাইরাস ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। গত তিনদিনে সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে ১৪৩ রোগী। এছাড়া বহির্বিভাগেও প্রতিদিন চিকিৎসা নিচ্ছে শতাধিক রোগী। হাসপাতালে সেবা নিতে আসা এসব শিশুর অধিকাংশই শীতজনিত রোটা ভাইরাস ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত। বিপুলসংখ্যক রোগীর সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের। শীত মওসুমের শুরুতেই হঠাৎ আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে গত কয়েক দিনে চুয়াডাঙ্গায় রোটা ভাইরা, নিউমোনিয়া, সর্দিকাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়েছে শতশত শিশু। গতকাল শনিবার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে দেখা যায় ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে মায়েরা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত তিনদিনে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১৪৩ শিশু। রোটাভাইরাসজনিত ডায়রিয়ায় আক্রান্তে মৃত্যু হয়েছে এক শিশুর। তাদের মধ্যে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ২৯ শিশু ও রোটা ভাইরাস ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ১১৪ শিশু। গতকাল শনিবার রাত পর্যন্ত নিউমোনিয়া আক্রান্ত ২৯ ও ডায়রিয়া আক্রান্ত ৬ শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। ফলে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক এবং নার্সদের। এদিকে, ডাইরিয়া ওয়ার্ডে নির্ধারিত শয্যার কয়েকগুন বেশি রোগী থাকায় অসুস্থ শিশুদের নিয়ে হাসপাতালের মেঝেতে থেকে সেবা নিতে হচ্ছে। শিশু রোগীর স্বজনরা জানান, হাসপাতালে এসে বেড পাইনি। ঠান্ডায় ছোট ছেলে-মেয়েকে নিয়ে মেঝেতেই শুয়ে আছেন তারা। বেশি ঠাসাঠাসিতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) শামিম করিব জানান, গত তিনদিনে শীতজনিত রোগে রোটা ভাইরাস ও নিউমোনিয়া ১৪৩ শিশু সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। শুধু গতকালই ভর্তি হয়েছে ৩০ জনেরও বেশি শিশু। তাদের মধ্যে রোটা ভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা বেশি।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মাহবুবুর রহমান মিলন জানান, হঠাত আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে রোটা ভাইরাস, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। শিশুদের ঠিকমতো টিকা প্রদান ও ৬ মাস বয়স পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো হলে নিউমোনিয়া হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে। তাছাড়া ঠান্ডা আবহাওয়া থেকে শিশুকে দূরে রাখা এবং গরম কাপড় পরিধান করানো অত্যন্ত জরুরি। ডায়রিয়া এক ধরনের পানিবাহিত রোগ। রোটা ভাইরাসের কারণে ডায়রিয়া হয়ে থাকে। ৬-১৬ মাস বয়সী আক্রান্ত শিশুকে ঘনঘন স্যালাইন ও মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। এছাড়া শিশুদের মায়ের বুকের দুধ ও রোটারিং টিকা দিলে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে। তিনি আরও বলেন, এসব রোগ থেকে রক্ষা পেতে শিশুদের ছয় মাস বয়স পর্যন্ত নিয়মিত বুকের দুধ পান করাতে হবে। সব শিশুর প্রতি যতœশীল হতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। শিশুদের জ্বর, অস্বাভাবিক কাশি ও পাতলা পায়খানা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে। মুখে খাবার স্যালাইন দেয়া যেতে পারে। শিশু যদি বুকের দুধ পান করে তা চালিয়ে যেতে পারে। চিকিৎসকের নির্দেশনা ব্যতিত বাচ্চাকে ডায়রিয়ার জন্য “এন্টি-ডায়রিয়াল” কোন ওষুধ দেয়া যাবে না। কারণ এর ফলে সংক্রমণ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া বাচ্চার যদি প্রচুর সংক্রমন থাকে ও পানিশূন্যতা থাকে, বাচ্চাকে হাসপাতালে ভর্তি করা লাগতে পারে। হাসপাতালে চিকিৎসক বাচ্চাকে শিরার মাধ্যমে ফ্লুইড দিতে পারেন পানিশুন্যতা দূর করতে। আপনার হাত ভালভাবে সাবান দিয়ে পরিস্কার করুন বাচ্চার ডায়পার পরিবর্তনের পর। খাবার রান্না করার পাশে বাচ্চার ডায়পার পরিবর্তন করবেন না। বাচ্চার ডায়পার ভালভাবে পলিথিন ব্যাগে প্যাক করে ফেলবেন। ডায়পার পরিবর্তনকৃত স্থানে ভাল ভাবে পরিস্কার করতে হবে। ডায়াপার, খেলনা, যেসব জায়গায় ডায়াপার বদল করা হয় (বাসায় বা ডেকেয়ার সেন্টারে), হাত পরিষ্কার করার স্থানে, এমনকি খাবার তৈরি করার স্থানেও এই ভাইরাস থাকতে পারে। এটি অনেক দিন বেঁচে থাকে। এ কারণে এমন সব স্থান ও খেলনা প্রতিদিন অ্যান্টিসেপটিক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।