স্টাফ রিপোর্টার,ঝিনাইদহঃ
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে হলুদ সাংবাদিকের উপদ্রবে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ে এরা পুলিশ থেকে শুরু করে এলাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গিয়ে প্রতারণা আর চাঁদাবাজি করছে। এদের হাত থেকে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত রক্ষা পাচ্ছে না। একটি সংঘবদ্ধ চক্র রাতারাতি সাংবাদিক সেজে নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।
এদের মধ্যে কেউ আগে চোরাচালান, কেউ কোট টাই পরে হাতে ব্রীফকেস নিয়ে হেরোইনের ব্যবসা করতো। আবার কেউ ফেন্সিডিল খাওয়াসহ নানা রকম সুবিধার জন্য অখ্যাত পত্রিকা, টিভি চ্যানেল ও অনলাইনের কার্ড তৈরি করে সুবিধা নিচ্ছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ রোববার দুপুরে ঝিনাইদহ শহরের ডক্টরস ক্লিনিকে অভিযান চালিয়ে নাজমূল সালেহীন রোমান নামের এক প্রতারক নামধারী ভূয়া সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করেছে। সে নিজেকে সাংবাদিক, তথ্যমন্ত্রীর পিএস, র্যাব পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন ক্লিনিক ও বড় বড় প্রতিষ্ঠানে গিয়ে চাঁদাবাজি করে থাকে বলে পুলিশ জানায়। তার বাড়ি কুষ্টিয়া জেলায়।
একাধিক সূত্র জানায়, কালীগঞ্জে সম্প্রতি একটি চক্র নিজেদেরকে রাতারাতি সাংবাদিক বানিয়ে হাজার হাজার টাকা চাঁদাবাজি করছে। এদের কারণে বিব্রত হয়ে পড়েছে স্থানীয় প্রশাসন। এই চক্রের কয়েকজন সদস্য এরশাদ সরকারের সময় চোরাচালান ব্যবসা করতো। এরা হুন্ডি কাজলের এজেন্ট ছিল বলেও খোঁজ নিয়ে জানা যায়।
এদের মধ্যে একজন মাঝে হেরোইন ও নারী ব্যবসা করতো বলে থানার এক এসআই জানান। মূলত এরা মাদক নারী ব্যবসা আড়াল করতে এ পেশায় নেমেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এই হলুদ সাংবাদিকের এক সদস্য সম্প্রতি নিজেকে প্রেসক্লাবের নেতা দাবি করে হাইওয়ে পুলিশের কাছে পিকনিকের জন্য বাস দাবি করে। এছাড়া উপজেলা রেজিষ্ট্রি অফিস থেকে ১০ হাজার টাকা চাঁদাবাজি করেছে বলে রেজিষ্ট্রি অফিস সূত্রে জানা গেছে।
এভাবে কালীগঞ্জের বিভিন্ন ছোট বড় অসংখ্য প্রতিষ্ঠানে গিয়ে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এই সদস্য কালীগঞ্জ শহরের নিমাই কর্মকারকে অপহরণ করে দিনাজপুর এলাকায় নিয়ে হত্যা করে। অপর একজন সে শিশু হত্যা মামলার আসামী ও চরমপন্থি পূর্ব বাংলা কমিউনিষ্ট পার্টির সদস্য। পুলিশের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সে সাংবাদিক সেজে টাউট বাজি করে বেড়াচ্ছে।
এদের কারণে স্থানীয় প্রশাসন ও প্রকৃত সাংবাদিকরা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন। কালীগঞ্জ থানার একাধিক এসআই ও এএসআই জানান, বেশ কয়েকজন ব্যক্তি নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ঘুম থেকে উঠে থানায় এসে বসে থাকে। সারাদিন তারা থানার মধ্যে বসে নিজেকে টিভি চ্যানেল, নামীদামী পত্রিকার সাংবাদিক দাবি করে।
ওই পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, তারা কোন পত্রিকায় কাজ করে আর তাদের রিপোর্ট কোন পত্রিকায় প্রকাশ হয় তা তারা কোনদিন দেখতে পাননি। এই টাউট সাংবাদিকরা থানা, উপজেলা প্রশাসন ও শহরে দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে। রাতের বেলায় জুয়ার মাঠে ল্যাপটপ বসিয়ে সাংবাদিকতা জাহির করে সেই জুয়ার মাঠ থেকে টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয়।
কালীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক সমকাল প্রতিনিধি জামির হোসেন জানান, যারা এসব করছে তারা কোন সাংবাদিক নয়, তারা চাঁদাবাজ। রাতারাতি সাংবাদিক পরিচয়দানকারী এরা প্রেসক্লাবের কোন সদস্য নয়। এসব হলুদ সাংবাদিকরা নিজ ব্যক্তি স্বার্থ হাসিল, চোরাচালান ও মাদক ব্যবসার সুবিধা আদায়ে এ পেশায় নেমেছে। এরা মূলত চাঁদাবাজ। এদের চিহিৃত করে পুলিশে সোপর্দ করার জন্য তিনি সকলের প্রতি আহবান জানান।
কালীগঞ্জ থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, রোববার দুপুরে শহরে অভিযান চালিয়ে পুলিশ এক চাঁদাবাজ সাংবাদিককে গ্রেফতার করেছে। এসব চাঁদাবাজ, হলুদ ও ভুয়া সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ দিলে পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা নিবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ছাদেকুর রহমান জানান, যদি এ ধরণের কোন অভিযোগ আসে বা অফিস আদালতে গিয়ে চাঁদাবাজি করে আর সেটা যদি আমাদের নজরে পড়ে তাহলে তাদের টাউট আইনে মোবাইল কোর্ট চালিয়ে জেল-জরিমানা করে শাস্তির আওতায় আনবো।