ডাকাতির টাকা ভাগ নিয়ে যুবককে গুলি করে হত্যা, গ্রেফতার ১

0
55

নিউজ ডেস্ক:

নরসিংদী শহরের খালপাড় এলাকায় আমির হোসেন (৪০) নামে এক যুবককে গুলি করে হত্যা করা হয়। দুপুরেই হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রসহ হত্যাকারী শাহীন মোল্লাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পাওনা টাকার দ্বন্ধের জেড় হিসেবে আমীর হোসেনকে বাড়ি থেকে ডেকে এনে গুলি করে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ পরিবারের।

রোববার (৩০ আগষ্ট) ভোর সাড়ে পাঁচটায় নরসিংদী সরকারি কলেজ সংলগ্ন খালপাড় এলাকায় অ·ফোর্ড সুপার শপ নামের দোকানের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এরই মধ্যে অভিযুক্ত হত্যাকারীকে রায়পুরা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানান।

নিহত আমির হোসেন নরসিংদী সদর উপজেলার চিনিশপুর ইউনিয়নের সংগীতা এলাকার ফাইজুদ্দিনের ছেলে। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও চার মেয়েকে নিয়ে সংগীতা এলাকায় বসবাস করতেন। নিহত আমির হোসেন কখনো নরসিংদী বাজারে মাছের ব্যবসা করতেন, আবার কখনো সিএনজি বা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালাতেন।

পুলিশ ও নিহত আমীর হোসেনের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, ১৮ আগস্ট আমির হোসেনের কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা ধার নেয় তারই বন্ধু মো. শাহীন ওরফে পেটকাটা শাহীন। উক্ত টাকা সম্প্রতি ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও ফেরত দিচ্ছিলেন না শাহীন। এ নিয়ে আমির হোসেনেরে সাথে বিরোধ চলে শাহীনের। টাকার জন্য আজ ভোরে শাহীনকে ফোন দিলে তাঁর সাথে কিছুটা রাগারাগি হয় আমির হোসেনের। পরে শাহীন ৪০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলে আজ ভোড়ে আমিরকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। কিছুক্ষন পর খবর হয় শহরের খালপাড় এলাকার একটি সুপার শপের সামনে আমির হোসেনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ তাঁর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নিহত আমির হোসেনের ছোট বোন মোমেলা বেগমের সাথে কথা বলে জানা যা, ভোরে কাজে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে ভাই বোন একই অটোতে উঠে রওনা দেন। রেলস্টেশন খালপাড়া এলাকায় ওভারব্রিজের সামনে অটো থেকে নেমে ভাই বানকে সাড়া দিয়ে সামনে এগিয়ে যান। এরই মধ্যে দৌড়ে এসে শাহীন আমিরকে গুলি করে দেয়। ভাই মাটিতে লুটিয়ে পড়লে বোন মোমেলা দৌড়ে গিয়ে তাঁকে ধরেন। ভোইয়ের মৃত্যুতে বোন মোমেলার চিৎকারে কেউ এগিয়ে আসেনি। চোখের সামনেই ভাইকে মেরে ফেলে চলে গেলো শাহীন।

নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক সুদীপ সাহা জানান, হাসপাতালে আমিরকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে। তার বাঁ পায়ের ওপরের অংশে ও কোমরের নিচে একটি ক্ষতচিহ্ন লক্ষ করা গেছে। ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। তবে প্রাথমিকভাবে বলা যায়, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই আমিরের মৃত্যু হয়েছে।

নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিপ্লব কুমার দত্ত চৌধুরী জানান, নিহত ও হত্যাকারী দুজনই পরস্পর পরিচিত এবং বন্ধু ছিলেন। তাদের নিজেদের মধ্যে পাওনা টাকার দ্বন্ধে এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। অভিযুক্ত হত্যাকারী শাহীন ১০ দিন আগে জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর এমন ঘটনা ঘটালেন। তাঁকে এরই মধ্যে রায়পুরা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এই হত্যঅকাণ্ডের পর নরসিংদী মডেল থানার এস আই সৈয়দ রুহুল আমিন ও জেলা গোয়েন্দা শাখার এস আই তাপস কান্তি রায় তদন্তে নামে। এসময় হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র পিস্তলসহ রায়পুরা থানার রাজনগর গ্রাম হতে দুপুরে হত্যাকারী আসামী শাহিন মোল্লা (৩৭) (পেট কাঁটা শাহিন) কে গ্রেপ্তার করে। এসময় শাহীন মোল্লার কাছ থেকে হত্যঅকান্ডে ব্যবহৃত ৭.৬ ইঞ্চি লম্বা একটি পিস্তল ও একটি ম্যাগজিন উদ্ধার করা হয়। শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহীন মোল্লা রায়পুরা উপজেলার রাজনগর গ্রামের খোরশেদ মোল্লার ছেলে।

পুলিশ সুপার কার্যালয়ের মিডিয়া সমন্বয়ক এস আই রুপন কুমার সরকার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, আসামী শাহীনের বিরুদ্ধে এর আগে খুনসহ ডাকাতি মামলা ১টা, ডাকাতি মামলা ৪টা, অস্ত্র মামলা ১টা সহ মোট ৬টা মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত আসামী শাহিন মোল্লা ও আমির হোসেন একই ডাকাত দলের সদস্য। তাদের মধ্যে ডাকাতির টাকা ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে আজকে সকালে হত্যার ঘটনা ঘটে। তারা দীর্ঘদিন যাবত দলগতভাবে ডাকাতি করে আসছিল। আমির হোসেন হত্যাকান্ডে নরসিংদী মডেল থানার মামলা নং-৭০,তাং-৩০/০৮/২০২০খ্রিঃ,ধারা-৩০২ পেনাল কোড রুজু হয়েছে। মামলাটি এসআই সৈয়দ রুহুল আমিন তদন্ত করছেন। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার সংক্রান্তে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানালেন পুলিশ সুপার কার্যালয়ের মিডিয়া সমন্বয়ক এস আই রুপন কুমার সরকার।