হাবিবুল ইসলাম হাবিব, টেকনাফ : টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মাদক আসক্তদের হার দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। ফলে ছাত্র ও যুব সমাজের অভিভাবকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে জীবন-যাপন করে যাচ্ছে। কারন পাশ^বর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে খুব সহজে বিভিন্ন প্রকার মাদক পাচার হয়ে আসছে দেশের সর্ব দক্ষিণে উপজেলা সীমান্ত উপ-শহর টেকনাফ। এই সীমান্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকা দিয়ে প্রতিনিয়ত কোটি কোটি টাকার প্রকার মাদক অনুপ্রবেশ করছে। নাফনদীর সীমান্ত প্রহরী ২ বিজিবি সদস্যরা রাত-দিন আটক করছে লক্ষ লক্ষ টাকার বিভিন্ন প্রকার মাদক দ্রব্য।
সীমান্তের বিভিন্ন সুত্রে জানা যায়, ইদানিং মাদক ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি মাদক সেবনকারীদের সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে। মাদক সেবনকারীদের মধ্যে বেশির ভাগ তরুণ ও যুব সমাজের কম বয়সি ছেলেরা। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত মাদক সেবনকারীদের দেখা না গেলেও সন্ধ্যার পর তাদের দেখা মিলে তাদের আড্ডায়।
নাম প্রকাশ্যে অনিশ্চুক টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মাদক সেবনকারীদের বেশ কয়েকটি নির্দিষ্ট স্থান রয়েছে। এই স্থান গুলোতে সন্ধ্যা হওয়ার পর পর অত্র এলাকার কম বয়সি যুবকরা বিভিন্ন প্রকার মাদক সেবনের আড্ডায় মেতে উঠে। তার পাশাপাশি টেকনাফ পৌরসভার বেশ কয়েকটি হোটেল ও নিজস্ব প্রতিষ্টানেও সন্ধ্যার পর মাদক সেবনকারীদের আড্ডা মেঠে।
দীর্ঘ বছরের পর বছর মাদকে আসক্ত এই রকম একজন যুবকের সাথে কথা বলে জানা যায়, আমি মাদককে ছাড়তে চাই, কিন্তু মাদক আমাকে ছাড়তে চায় না। দেশী-বিদেশী তৈরী এমন কোন মাদক নেই, যা আমি সেবন করিনি। দেশীয় তৈরী বাংলামদ (ছোলাই মদ) থেকে শুরু করে বিয়ার, মিয়ানমার থেকে বিভিন্ন প্রকার বিদেশী মদ, গাজাঁ, ফেন্সিডিল, হিরোইন, দেশীয় ফার্মেসী থেকে বিভিন্ন প্রকার ঔষধ নিয়ে সৃষ্ঠ করা ককটেল, সিরিজ দিয়ে পুশ করা নেশার ইনজেকশন, মিয়ানমারের মরণ নেশা ইয়াবাসহ বলতে গেলে কোনটাই বাদ নেই। আমি যখন মাদক সেবন করি, তখন বউ-বাচ্চাসহ দুনিয়াদারীর কোন কিছুই আমার খেয়াল থাকে না। এই মাদক সেবন করতে গিয়ে জীবনে আমার পরিবারের অনেক টাকা আমি ক্ষতি করেছি। এবং করে যাচ্ছি, একথাগুলো র্নিদ্বিধায় বলে গেলেন মাদকে আসক্ত যুবকটি।
খবর নিয়ে আরো জানা যায়, টেকনাফ উপজেলা ও পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় মাদক সেবকদের খপ্পরে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এলাকার শিক্ষিত ও সুশীল সমাজের সর্বস্থরের মানুষ। পাড়া-মহল্লায় ও গ্রামেগঞ্জে যত ধরনের অপরাধ সংঘঠিত হয়। এই সমস্ত অপরাধের পেছনে মাদকাসক্তদের হাত থাকে। কারণ এলাকার প্রভাবশালী ও অপরাধ কর্মকান্ডের চক্রান্তকারীরা মাদকাসক্তদের মাদক সেবন করিয়ে অল্প টাকার বিনিময়ে অপরাধ সংঘঠিত করায়। চুরি, ছিনতাই, জবরদখল, অপহরণ, ডাকাতি ও খুনসহ এমন কোন অপরাধ নেই তারা ব্যবহার হয় না। টেকনাফ উপজেলার অপরাধ দমনে থানা থেকে শুরু করে বিভিন্ন দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিমাসে ১০/১৫ জন মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে আটক এবং অভিভাবকরা আইনের হাতে তুলে দিচ্ছে। এদের মধ্যে অনেকেই পাচ্ছে ভ্রাম্যমান আদালতের সাজা, আবার অনেকেই বিভিন্ন মাদক মামলার আসামী হয়ে যাচ্ছে কারাগারে। এদের মধ্যে বেশির ভাগ মাদক আসক্ত যুবক হচ্ছে হতদরিদ্র পরিবারের।
এব্যাপারে টেকনাফ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লোকাশীষ চাকমা জানান, টেকনাফ উপজেলায় মাদক পাচার ও মাদক সেবনকারী হার বেড়েই যাওয়ায় এই বিষয় গুলো জাতীর জন্য খুবই দু:খজনক। এবং টেকনাফ উপজেলার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের জনবল খুবেই কম তার পরও এলাকারবাসীর সহযোগীতা পেলে যেকোন মাদক পাচার ও মাদক সেবনকারীদের খবর পাওয়া মাত্র আমরা অভিযান পরিচালনার জন্য প্রস্তুত থাকব।