-পুলিশ-বিজিবির হস্তক্ষেপে দূর্ভোগের অবসান
হাবিবুল ইসলাম হাবিব, টেকনাফ: টেকনাফে মডেল থানার পুলিশের একটি দল বসত-বাড়িতে ইয়াবা বিরোধী অভিযানের নামে নগদ টাকা ও মহিলাদের ব্যবহৃত স্বর্ণালংকারসহ দুই ব্যবসায়ীদের আটকের প্রতিবাদে গতকাল ২ এপ্রিল সকালে দিকে হোয়াইক্য ইউনিয়নের খারাংখালী বাজারে বিক্ষুদ্ধ জনসাধারণ কক্সবাজার-টেকনাফ প্রধান সড়কে খুঁটি ফেলে ও টায়ার জালিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে ৩ ঘন্টা যাবত যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। এতে মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়ার সংবাদ পেয়ে টেকনাফ মডেল থানার ওসি ও বিজিবি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। পরিস্থিতি শান্ত করে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করেন। কিন্তু আটক ব্যবসায়ীদের মুক্তি না হওয়ায় এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। তবে পুলিশ আটককৃতদের বিরুদ্ধে মাদক ও পুলিশী
কাজে বাঁধার মামলা দায়ের করেছে।
সুত্রে জানা যায়, গতকাল ২ মে ভোর রাত ৩টারদিকে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের খারাংখালীতে স্থানীয় কতিপয় চিহ্নিত দালালদের ইন্দনে টেকনাফ মডেল থানার একদল পুলিশ পূর্ব মহেশখালীয়া পাড়ার ঠান্ডা মিয়ার পুত্র বিকাশ ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম (৪০) প্রকাশ ভূলুর বাড়ি ইয়াবা বিরোধী অভিযানে গিয়ে তল্লাশী চালিয়ে বিকাশ ব্যবসার প্রায় ১০ লক্ষ টাকাসহ আটক করে। এরপর আটক ব্যক্তির বড় ভাই মুদি দোকানদার আবুল কাশেম প্রকাশ হাছিম সওদাগরের বাড়িতে গিয়ে তল্লাশী চালিয়ে মহিলাদের ব্যবহৃত ৩ ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার ও নগদ ৪২ হাজার টাকা নিয়ে আটক করে নিয়ে যায় বলে গৃহবধু হালিমা আক্তার দাবী করেন। দালালের ইন্দনে এই ঘটনার পর স্থানীয় জনসাধারণ ক্ষুদ্ধ হয়ে খারাংখালী ষ্টেশনে টেকনাফ-কক্সবাজার সড়কে বৈদ্যুতিক খুঁটি ফেলে, গাছপালা কেটে এবং টায়ার জালিয়ে প্রায় ৩ঘন্টাব্যাপী অবরোধ সৃষ্টি করে। এই ঘটনায় আতংকে স্থানীয় ব্যবসায়ী দোকান-পাট বন্ধ করে নিরাপদ স্থানে চলে যায়। ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে বিক্ষুদ্ধ জনসাধারণ পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া করে। তখন পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ফাঁকাগুলি বর্ষণ করে। পরে খবর পেয়ে টেকনাফ ২বিজিবি ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক মেজর আবু রাসেল ছিদ্দিকী ও ওসি মাঈন উদ্দিন খাঁনের নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ-বিজিবি ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি শান্ত করে। পরে যান চলাচল স্বাভাবিক করে দেন। এরপর স্থানীয় ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি ও জনতার সাথে আলাপকালে ভূক্তভোগী পরিবার পুলিশী অভিযানের বর্ণনা দেন। এই ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান এবং প্রধান সড়কে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে জনদূর্ভোগ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আশ্বস্থ করেন ওসি মাঈন উদ্দিন। এদিকে আটক দুই সহোদরকে মাদকসহ পৃথক দুইটি মামলায় আটক দেখানো হয়েছে।
এব্যাপারে স্থানীয় মেম্বার জাহেদ হোছাইন বলেন, ঘটনার রাত থেকে আমি বাইরে রয়েছি। স্থানীয় লোকজন থেকে জানতে পারি যে, বিকাশ এবং মুদি দোকানদারকে টাকা- স্বর্ণালংকারসহ আটক করে নিয়ে যায়। গতকাল সকালে বিক্ষুদ্ধ জনতা সড়ক অবরোধ সৃষ্টি করার বিষয়টি জানতে পেরে নিষেধ করার পরও জনতা মানেনি।
হোয়াইক্যং ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ নুর আহমদ আনোয়ারী বলেন, পুলিশ ও দালালদের যোগ-সাজশে দীর্ঘদিনের এই জাতীয় কর্মকান্ড স¤পর্কে বিভিন্ন আইন-শৃংখলা সভায় বার বার বলা হলেও কোন পদক্ষেপ না থাকায় এই জাতীয় ঘটনার সুত্রপাত। পুলিশ ইয়াবা বিরোধী অভিযানের নামে নিরীহ দুই ব্যবসায়ীদের আটকের জেরধরে জ্বালাও-পোড়াও এবং অবরোধের সৃষ্টি হয়েছে। এই ঘটনায় জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানাচ্ছি। অন্যথায় আগামীতে আরো বড় ধরনের সহিংস ঘটনার সুত্রপাত হতে পারে।
টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মাঈন উদ্দিন খাঁন জানান, পুলিশ দুইজন ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আটকের জেরধরে অপর ইয়াবা ব্যবসায়ীরা মিলে সড়ক অবরোধ করে। খবর পেয়ে পুলিশ-বিজিবির বিশেষ টহলদল ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি স্বভাবিক করেন।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, পুলিশ এলাকার কতিপয় চিহ্নিত দালালের ইন্দনে ইয়াবা ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন অপরাধীদের নিকট মোটা অংকের টাকা বাণিজ্য করে আসছে। গত ২৯ এপ্রিল স্থানীয় বাছু মিয়ার পুত্র আমির হোছনকে আটক করে দালালের মধ্যতায় সাড়ে ১০ লক্ষ টাকায় ছেড়ে দেন বলে আমির হোছন জানান। গত দুই সপ্তাহ আগে জাফর আলীর পুত্র ইসমাঈলকে আটক করে ৩লক্ষ টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেন। ৩ সপ্তাহ আগে মৃত মীর কাশেমের পুত্র মোহাম্মদ আলমকে আটক করে ৩ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেন বলে জানান। আসল অপরাধীদের টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া এবং টাকা দিতে না পারলে ইয়াবা দিয়ে চালান দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। তাই মানুষ ক্ষোভে ফুঁসছে। তাই সাধারণ মানুষ ক্ষুদ্ধ হয়ে সড়ক অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াওর মত ঘটনার আশ্রয় নিয়েছে বলে মন্তব্য করেন। উপরোক্ত ঘটনাকে পুঁজিকরে এলাকায় বিদ্যমান দুইটি গ্রুপ পর¯পরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে নেমেছে বলে সুশীল সমাজ মনে করেন।