জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহঃ
বিশ্বাস করুন আর নাই করুন ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে গত এক মাস ধরে কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। শিশু ও গাইনি ছাড়া সব বিভাগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ শুন্য রয়েছে। সবচে গুরংত্বপুর্ন অজ্ঞান, কার্ডিওলজি, মেডিসিন ও সার্জারি বিভাগে চিকিৎসক না থাকায় ১৮ লাখ মানুষের চিকিৎসা কেন্দ্রটি মুখ থুবড়ে পড়েছে। প্রতিদিন প্রায় পনের’শ রোগী চরম দুর্ভোগে পড়েছে। দুরদুরান্তের রোগীরা চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। এদিকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ শুন্য থাকায় প্রতিদিন প্রচুর পরিমান ওষুধ ‘মিসইউস’ হচ্ছে। মেডিসিনের কাজ ডাঃ জাকির হোসেনকে দিয়ে চালানো হচ্ছে। বলা যায় তিনিই এখন গোটা হাসপাতাল সামলাচ্ছেন। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে একজন তত্বাবধায়ক, একজন আবাসিক মেডিকেল অফিসার, ইর্মাজেন্সি মেডিকেল অফিসার ও বিভিন্ন বিভাগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ধরে মোট ৪০ জন মেডিকেল অফিসারের পদ রয়েছে। এ সব পদের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ১৬ জন। এর মধ্যে আবার তিনজন ডেপুটেশনে কাজ করছেন। বাকী ২৪টি পড়ে কোন চিকিৎসক নেই। যারা আছেন, তাদের মধ্যে প্রশাসনকি পদের অনেকেই ট্রেনিংয়ে ও মেডিকেল অফিসররা প্রায় জরুরী প্রয়োজনে সিএল, পোষ্টমটেম, মেডিকেল বোর্ডে, ভিকটিম ও কোর্টে হাজিরা দিয়ে থাকেন। এতে চিকিৎসা সেবা মারাত্মক ব্যহত হচ্ছে। ফলে প্রতিদিন এই ১৬ জন ডাক্তারের মধ্যে অনেকেই হাসপাতালে আসতে পারেন না। শনিবার দুপুরে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল পরিদর্শন করে দেখা গেছে তত্বাবধায়ক ডাঃ আইয়ূব আলী জরুরী কাজে খুলনা গেছেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চেম্বারের সামনে কোন রোগী নেই। সুত্র জানায়, নভেম্বর মাসে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের ৪ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পদোন্নতি পেয়ে ডিসেম্বরের প্রথম দিকে চলে গেছেন। সেই সব পদে এখনো কোন চিকিৎসককে পদায়ন করা হয়নি। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের পরিসংখ্যান অফিসার আব্দুল কাদের জানান, বর্তমানে হাসপাতালে নাক-কান-গলা, হাড়জোড়, চক্ষু, অজ্ঞান, কার্ডিওলজি, মেডিসিন ও সার্জারি বিভাগে কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। গাইনি বিভাগে ডাঃ আলাউদ্দীন ও শিশু বিভাগে ডাঃ আনোয়ারুল কর্মরত আছেন। সার্জারি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ জাহিদকে জরুরী প্রয়োজনে ডেপুটিশেন দিয়ে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে রাখা হয়েছে। সবচে গুরুত্বপুর্ন অজ্ঞান বিভাগে কোন চিকিৎসক নেই। অজ্ঞান বিভাগে ডাঃ আব্দুর রহমানকে ডেপুটেশনে কাজ করানো হচ্ছে। তত্বাবধায়ক পদটিতেও ডাঃ আইয়ুব আলীকে ডেপুটেশনে রাখা হয়েছে। হাসপাতালের সব অপারেশন বন্ধের পথে। এক কথায় জোড়াতালি দিয়ে চলছে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল। স্বাস্থ্য সচিবের বাড়ি ঝিনাইদহে হলেও এ ব্যাপারে তিনি নিশ্চুপ বলে অনেকেই মন্তব্য করেন। সাধুহাটী ইউনিয়ন থেকে চিকিৎসার জন্য আসা রোকনুজ্জামান নামে এক টাইলস মিস্ত্রি অভিযোগ করেন, আমরা ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি বানায়। অথচ তারা আমাদের সমস্যা দেখেন না। হাসপাতালে এসে শুনি বছরের পর বছর ডাক্তার থাকে না। কোন পদায়ন নেই। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন জনপ্রতিনিধিরা আসলে করেন কি ? হিরা খাতুন নামে এক রোগী জানান, তারা হাসপাতালে এসে বেড পান না। অনেক রোগী মেঝে, বারান্দা ও সিড়ি ঘরে চিকিৎসা নেন। অথচ আড়াই’শ বেডের নতুন ভবনটি আজো চালু হচ্ছে না। জুয়েল মাজহার নামে এক ছাত্র অভিযোগ করেন, তিনি কানের ডাক্তারের কাছে এসেছিলেন। কিন্তু এসে জানতে পারেন এই বিভাগে কোন চিকিৎসকই নেই। জুয়েলের মতো ১০/১২ জন রোগী চিকিৎসা নিয়ে তাদের ক্ষোভ ও অসন্তোষের কথা জানান। বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ অপুর্ব কুমার জানান, পদোন্নতি পাওয়ায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা চলে গেছেন। সে সব পদে কোন ডাক্তার আসেনি। তিনি বলেন প্রতিদিন এক হাজারেরও বেশি রোগী আউটডোরে চিকিৎসা নেন। আর ভর্তি হন তিন’শর উপরে। এই বিশাল রোগীর চাপ ডাক্তার সংকটের কারণে আমরা হিমশিম খাচ্ছি।