ঝিনাইদহে ৪০ দিনের কর্মসুচীতে ব্যাপক দুর্নীতি-অনিয়ম:
দরিদ্র শ্রমিকদের বরাদ্দের বিপুল অর্থ ও সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করে গিলে খাচ্ছে ৩ মেম্বর
স্টাফ রিপোর্টার,ঝিনাইদহঃ ঝিনাইদহ সদর উপজেলার শাগান্না ইউনিয়নের ওহাব, রবিউল, সাগরী ও রাজু মেম্বরের পর এবার সদর উপজেলার ৪০ দিনের কর্মসুচিতে শ্রমিক ও কাজ-কর্ম ছাড়াই সরকারী অর্থ তিন মেম্বারের পকেটে উঠেছে। সাগান্না ইউনিয়নে ৪০ দিনের কর্মসুচিতে হত দরিদ্রদের তালিকায় ভুয়া নাম দিয়ে চলছে এ মহান কর্মসুচির কাজ। এভাবে প্রকৃত হত দরিদ্ররা সুবিধা বঞ্চিত হলেও তিন মেম্বার ও সংশ্লিষ্টরা হাতিয়ে নিয়েছে সরকারের বিপুল পরিমান অর্থ। গত কয়েক দিন ঐ ইউনিয়নের ৪০ দিনের কর্মসুচিতে গিয়ে লেবার পাওয়া যায়নি, তাছাড়া কাজ-কর্ম ছাড়াই ৪০ দিনের কর্মসুচির তিনটি রাস্তার সমুদয় টাকা তিন মেম্বার ও সংশ্লিষ্টরা হাতিয়ে নিয়েছে মর্মে প্রমান পাওয়া যায়। জানা গেছে, অতিদরিদ্র বেকার শ্রমিকদের কর্মসংস্থান কর্মসূচীর ৪০ দিনের প্রকল্পে ঝিনাইদহের বিভিন্ন উপজেলায় কাজ শুরু হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে ৪০জনের স্থলে ¯্রফে ৫/৭জন শ্রমিক দিয়ে কাজ করিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে গরীব শ্রমিকদের নামে বরাদ্দকৃত বিপুল পরিমান সরকারী অর্থ।
প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যোগসাজসে জনপ্রতিনিধিদের স্বেচ্ছাচারিতায় ভেস্তে যাচ্ছে সরকারের এ মহান উদ্যোগ। অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির (ইজিপিপি) আওতায় বছরের কর্মহীন মৌসুমে কর্মক্ষম বেকার শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করণে বছরে দুই মৌসুমে (৪০ দিনের কর্মসূচী) চালু করেছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। স্বল্প মেয়াদী কর্মসংস্থানের মাধ্যমে কর্মক্ষম দুঃস্থ পরিবারগুলোর দারিদ্র নিরসনের লক্ষ্যে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে সক্ষমতা বৃদ্ধিই এ কর্মসূচীর মূল উদ্দেশ্য বর্তমান সরকারের। ইজিপিপি প্রকল্প বাস্তবায়নে বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর ওই দুই মাসের মাঝামাঝি ৪০দিন এবং মার্চ থেকে এপ্রিল ওই দুই মাসের ৪০দিনকে শ্রমিকদের কর্মহীন মৌসুম হিসেবে চিহ্নিত করেছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। আর দুই পর্বে মোট ৮০দিন অদক্ষ ও দরিদ্র শ্রমিকদের কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ইউনিয়ন পর্যায়ের সমাজিক, ধর্মীয় ও জনস্বার্থে বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজের মাধ্যমে ওই বেকার শ্রমিকদের নিয়োজিত করার কথা রয়েছে। যার উপকারভোগী হবে অতিদরিদ্র শ্রমিক।
সে মোতাবেক ঝিনাইদহের বিভিন্ন উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে যথা সময়ে ৪০ দিনের কর্মসূচী বাস্তবায়নের উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে একাধিক কর্মসূচী হাতে নেওয়া হয়েছে। কাগজে-কলমে মার্চের আগেই কর্মসূচী রেজুলেশনভূক্ত হয়ে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যসহ নেতা-কর্মীদের মধ্যে ওইসব প্রকল্প বিতরণ করা হলেও মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত কর্মসূচী বাস্তবায়নে ধারে কাছেও নেই। দুর্নীতি-অনিয়ম ও সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করাই যেন ওই প্রকল্পের মূল কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার শাগান্না ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত রেজুলেশনে ৪০দিনের কর্মসূচীর আওতায় বর্তমানে ৩টি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ওই ৩টি প্রকল্পে তদারকি করছেন প্রকল্প সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদ ওয়ার্ড মেম্বার মিজানুর রহমান মিজান, মহিলা মেম্বর মরিয়ম ও শিউলি রানী। ওই তিনটি প্রকল্পে প্রতিদিন ১২০জন শ্রমিক কাজ করার কথা রয়েছে। কিন্তু ওই তিনটি প্রকল্পে কাজ করার স্থলে গিয়ে দেখা গেছে শুধু মাত্র ৮নং ওয়ার্ডের মিজান মেম্বারের দায়িত্বে শাগান্নায় প্রতিদিন আদরি, রেখা, শিবা রানী, অরবিজন, জামেনা, অলেহা, তহিরুল, অন্তরা সহ ৫/৭ জন শ্রমিক কাজ করে।
আরো দেখা গেছে, শাগান্না ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বর মরিয়মের দায়িত্বে বাদ-পুকুরিয়া গ্রামে ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বর শিউলি রানীর দায়িত্বে ৪০ দিনের কর্মসূচী বাস্তবায়ন প্রকল্পে রাস্তায় কোন প্রকারের নারি বা পুরুষ শ্রমিক খুঁজে পাওয়া যায়নি। স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন ৪০জন শ্রমিকের নামে-বেনামে ৪০দিন কর্ম তালিকায় সরকারি অর্থ উত্তোলন করা হবে। নাম প্রকাশ না করা শর্তে ওই ইউনিয়নের শ্রমিকরা ও স্থানীয়রা সাংবাদিকদের জানান, তালিকা ভূক্ত শ্রমিকদের কাছ থেকে ৪০ টাকা ও ছবি নিয়ে তাদের নামে ব্যাংক একাউন্টও খোলা হয়েছে। তাদের নামে টাকা উঠানোর পর তাদেরকে ৫শ টাকা রিক্সা ভাড়া দিয়ে বিদায় করা হয়। প্রতিদিন ৪০জন শ্রমিক কাজ করার কথা থাকলেও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার ও প্রকল্প সভাপতি মিজান প্রতিদিন ৫/৭জন শ্রমিক দিয়ে কাজ শেষ করে ৪০জনের নামে হাজার হাজার টাকা করে বিল উত্তোলন করেন। আবার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নামে প্রতি শ্রমিকের কাছ থেকে ১ হাজার টাকা করে আদায় করে নেন ওই মেম্বররা। এছাড়া শ্রমিকদের টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে তাদের প্রতিজনকে ৫শ টাকা রিক্সা ভাড়া দিয়ে টাকা করে হাতিয়ে নেন ওই মেম্বাররা। একটি বিশিষ্ট সুত্র জানায়, ইঞ্জিনিয়ার শুভাগত, উপ-প্রকৌশলী হাসিবুর রহমান ও শিক্ষা একাডেমির সুজন কুমারকে চড়া ঘুষে ম্যানেজ করে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ ও লুট পাট করেছেন ঐ তিন মেম্বর। ! তাছাড়া ইতিপুর্বে শাগান্না ইউনিয়নের ওহাব, রবিউল, সাগরী ও রাজু মেম্বরের ৪০ দিনের কর্মসূচী বাস্তবায়ন প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল।
এ বিষয়ে শাগান্না ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড মেম্বার মিজানুর রহমান মিজান, মহিলা মেম্বর মরিয়ম ও শিউলি রানী সাংবাদিকদের বলেন, ধান কাটার কারনে শ্রমিক পাওয়া যায়নি, তবে খুব শিঘ্রই সমস্ত শ্রমিকের ব্যাবস্থা করা হচ্ছে। চরম দুর্নীতি-অনিয়মে দরিদ্র শ্রমিকদের বরাদ্দের বিপুল অর্থ ও সরকারি অর্থ আত্মসাৎ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে শাগান্না ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন জানান, এঘটনা সত্য, আমি ঐ তিন মেম্বরদের যথেষ্ট বলেছি, তারা আমার কথা মতো কাজ করেনা, আপনারা সাংবাদিক এলাকা দেখে শুনে যথা যথ ব্যাবস্থা নেন। এব্যাপারে মুখ খুলেন ৪০ দিনের কর্মসূচীর তালিকায় অন্তর্ভূক্ত নারীরা। তারা জানান, মিজানুর রহমান মিজান, মহিলা মেম্বর মরিয়ম ও শিউলি রানী আমাদের কার্ড করে দেওয়ার নামে প্রতি জন থেকে ২শ টাকা নেয়। আমরা জন প্রতি টাকা উত্তোলন করার পর টিএনও (উপজেলা নির্বাহী অফিসার) স্যারের নামে ১ হাজার টাকা নিয়ে যান। এদিকে ৪০ দিনের কর্মসূচী প্রকল্পের ব্যাপক দুর্নীতি-অনিয়মে দরিদ্র শ্রমিকদের বরাদ্দের বিপুল অর্থ ও সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করে গিলে খেয়েছেন ৩ মেম্বর ও কাজ-কর্ম ছাড়াই সরকারী অর্থ তিন মেম্বারের পকেটে বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাম্মি ইসলামের সদয় হস্তক্ষেপ ও সুষ্ঠু তদন্ত দাবী করেন এলাকার ভোক্তাগন, গিলাপোল ও রাধানগর এলাকার তাহাজদ্দিন, নুর মহাম্মদ মোল্লা, কামাল মানোয়ার সহ শাগান্না ইউনিয়নবাসী। এ বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাম্মি ইসলাম মুঠোফোন রিসিভ করেন নি।