ঝিনাইদহ সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসে অনলাইনে বদলি জালিয়াতির সত্যতা মিলেছে। প্রমাণিত হয়েছে কারসাজির মাধ্যমে সিনিয়র শিক্ষকদের অনলাইন আবেদন ত্রুটিপূর্ণ দেখিয়ে বাতিল করে অর্থের বিনিময়ে জুনিয়রদের বদলি করা হয়েছে। সম্প্রতি খুলনা উপ-পরিচালক অফিসের এডি ফজলে রহমান সরেজমিন তদন্ত করে এই অনিয়মের সত্যতা পান। এ সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন তিনি মহাপরিচালক বরাবর পাঠিয়েছেন।
এদিকে, দোষ প্রমাণিত হওয়ার পরও দায়ী উপজেলা শিক্ষা অফিসার খালেকুজ্জামান ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার শাজাহান রিজুর বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। তারা বহাল তবিয়তে আছেন। এখনো ছড়ি ঘুরাচ্ছেন অভিযোগকারী শিক্ষকদের ওপর। ফলে তারা ভীতসন্ত্রস্ত্র হয়ে পড়েছেন। তাদেরকে চাকরি কেড়ে নেয়ারও হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। দুর্নীতিবাজ শিক্ষা অফিসার খালেকুজ্জামান ও শাজাহান রিজুর বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় উপজেলার সাধারণ শিক্ষকদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের ৩১ মার্চ ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় অনলাইন বদলির আবেদন শুরু হয়। জেলার ৬৮৮টি শূন্য পদের বিপরীতে ৩৭৮ জন শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করেন। অনলাইনে বদলির আবেদন শেষ হলে উপজেলা শিক্ষা অফিসার খালেকুজ্জামান, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. শাজাহান রিজু ও প্রধান শিক্ষক তৌহিদুজ্জামান সার্ভার জালিয়াতির আশ্রয় নেন। তারা সিনিয়র শিক্ষকদের অনলাইন আবেদন ত্রুটিপূর্ণ দেখিয়ে বাতিল করে তদস্থলে অপেক্ষকৃত জুনিয়রদের বদলির সুযোগ করে দেন। এ কাজ করতে তারা অনলাইনে তথ্য বিকৃতি ঘটিয়ে ৬ জন সিনিয়র নারী শিক্ষককে বদলির অধিকার থেকে বঞ্চিত করেন।
অভিযোগ উঠেছে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার শাজাহান রিজুর স্ত্রী সুরাইয়াকে এই মহাজালিয়াতির মাধ্যমে বদলি করেন। এছাড়া সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মিথুন সাহার স্ত্রী স্মৃতি বিশ^াসকে প্রতিবন্ধী বানিয়ে বদলি করেন। এভাবে অন্তত ৬ জন শিক্ষককে জালিয়াতির মাধ্যমে বদলি করিয়ে আনেন। বিষয়টি জানাজানি হয়ে পড়লে প্রথমে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আনন্দ কিশোর সাহার সহায়তার ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কাড়ি কাড়ি টাকা নিয়ে ঢাকায় দেন-দরবার করে দফায় দফায় তদন্ত কাজ বাঁধাগ্রস্ত করা হয়। এরপর শিক্ষকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে মহাপরিচালকের দপ্তর থেকে তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয়। গত মাসে তিনি ঝিনাইদহে সরেজমিন তদন্ত করে অনলাইনে বদলি জালিয়াতির সত্যতা পান এবং সে মোতাবেক প্রতিবেদন মহাপরিচালক বরাবর পাঠিয়ে দেন। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, অনলাইনে বদলি জালিয়াতির তদন্ত প্রতিবেদন মোতাবেক এখনো কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
এদিকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে দীর্ঘদিন যাবত ঘটে যাওয়া বিভিন্ন অনিয়ম এবং পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের বিষয়ে আবারো নতুন করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। নতুন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে কুষ্টিয়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোস্তাফিজুর রহমানকে। তিনি আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসে এসে এই তদন্ত কাজ শুরু করবেন। এক চিঠিতে তিনি অভিযোগকারীদের আবেদন, পত্রিকায় অভিযোগসমূহের প্রমাণক ও স্বাক্ষীসহ যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য বলেছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে নতুন করে এই তদন্ত করা হচ্ছে।
এদিকে এই তদন্ত কর্মকর্তা আসার খবরে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসের দুর্নীতিবাজদের সিন্ডিকেট নড়েচড়ে বসেছে। তারা অভিযোগকারীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে আবার কখনো অফিসে ডেকে অনুনয় বিনয়ের পাশাপাশি ভয়-ভীতি দেখাচ্ছেন বলে অভিযোগ। তবে অভিযোগকারী শিক্ষকরা কোনো ছাড় দিতে রাজি নন। তারা মনোবল শক্ত করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতাদের সঙ্গে নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তার সম্মুখে প্রমাণসহ হাজির হবেন বলে জানা গেছে।
এদিকে, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার শাজাহান রিজুর বিরুদ্ধে নারী কেলেংকারী ভয়ঙ্কর তথ্য উঠে আসছে। তিনি নারী শিক্ষকদের উত্যাক্ত করার পাশাপাশি গোপন কক্ষে নিয়ে জড়িয়ে ধরেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। তাছাড়া শাজাহান রিজুর বিরুদ্ধে দুই ঠিকানায় চাকরি নেওয়ারও গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এসব বিষয়ও তদন্ত কমিটি খতিয়ে দেখবেন বলে সূত্রটি নিশ্চিত করেছে।