স্টাফ রিপোর্টার,ঝিনাইদহঃ নিজের নামে বরাদ্দ নিয়ে সেখানে অন্যদের থাকতে দেওয়ায় সংসদ সদস্যদের ন্যাম ভবনের ফ্ল্যাটগুলো ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে সংসদীয় কমিটি। রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে ছয়টি ভবনে এরকম অবৈধভাবে দখলে রাখা ৪৭টি ফ্ল্যাট ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বুধবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সংসদ কমিটির ১১তম বৈঠক শেষে একথা জানান কমিটির সভাপতি ও জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ.স.ম ফিরোজ।
তিনি জানান, ৪৭ জন সংসদ সদস্য সেখানে না থেকে তাদের আত্মীয়-স্বজন কিংবা গাড়ির ড্রাইভার থাকেন। কারো কারো ফ্ল্যাটে কেউ থাকেন না। এজন্য ফ্ল্যাটগুলো ছাড়ার সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। আগামী ৭ দিনের মধ্যে তাদেরকে এ বিষয়ে জানানোর জন্য বলা হয়েছে। এর আগেও ফ্ল্যাটগুলো ছাড়ার নির্দেশ দিলেও মাত্র চারজনের সাড়া মিলেছে। কমিটির বৈঠকে উত্থাপিত তালিকা থেকে জানা যায়, এমপিদের জন্য বরাদ্দকৃত ছয়টি ন্যাম ভবনে ৪৭ জন এমপির জন্য বরাদ্দকৃত ফ্ল্যাটে অন্যরা অবৈধভাবে বসবাস করছেন।
ওই তালিকা অনুযায়ী ১ নম্বর ভবনের ১/৪০১নং ফ্লাটের বরাদ্দ নিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের এমপি মো. নজরুল ইসলাম বাবু। এ ফ্ল্যাটে থাকেন তার কাজের লোক। ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার এর ১/৫০২নং ফ্ল্যাটে থাকেন তার ব্যক্তিগত সহকারী। ঝিনাইদহ-২ আসনের এমপি তাহজীব আলম সিদ্দিকীর ফ্ল্যাট নং ১/৮০৪। এতে থাকেন তার ব্যক্তিগত সহকারীর পরিবার। ফেনী-২ আসনের এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারীর ১/৬০১নং ফ্ল্যাটে থাকেন তার কাজের লোক। গাইবান্ধার-৩ আসনের এমপি ইউনুস আলী সরকারের ১/৬০৪নং ফ্ল্যাটে থাকেন এলাকার লোকজন। রাজবাড়ী-১ আসনের এমপি কাজী কেরামত আলীর ১/৭০২নং ফ্ল্যাটে থাকেন তার অফিসের লোক। রাজশাহী-৫ আসনের এমপি আবদুল ওয়াদুদের ১/৯০২নং ফ্ল্যাটে থাকেন তার ব্যক্তিগত সহকারী।
নেত্রকোনা-২ আসনের এমপি ওয়ারেস হোসেন বেলালের ২/১০২নং ফ্ল্যাটে থাকেন তার কাজের লোক। চট্টগ্রাম-৪ আসনের এমপি দিদারুল আলমের ২/১০৪নং ফ্ল্যাটে থাকেন তার ব্যক্তিগত সহকারী। যশোর-১ আসনের এমপি আফিল উদ্দিনের ২/১০৪নং ফ্ল্যাটে থাকেন তার ব্যক্তিগত সহকারী। সুনামগঞ্জ-১ আসনের এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের ২/৩০১নং ফ্ল্যাটে থাকেন তার কাজের লোক। রাজশাহী-৪ আসনের এমপি এনামুল হকের ২/৪০৪নং ফ্ল্যাটে থাকেন তার অফিসের লোক। নরসিংদী-২ আসনের এমপি কামরুল আশরাফ খানের ২/৫০৪নং ফ্ল্যাটে থাকেন তার ব্যক্তিগত সহকারী। সংরক্ষিত মহিলা আসন-৪০ এমপি লুতফা তাহেরের ২/৬০১নং ফ্ল্যাটে থাকেন তার কাজের লোক। লালমনিরহাট-৩ আসনের এমপি আবু সালেহ মোহাম্মদ সাইদের (দুলাল) ২/৭০১নং ফ্ল্যাটে থাকেন তার ব্যক্তিগত সহকারী। কুমিল্লা-২ আসনের এমপি মোহাম্মদ আমির হোসেনের ২/৭০৩নং ফ্ল্যাটে থাকেন তার ব্যক্তিগত সহকারী।
৩ নম্বর ভবনে মহিলা সংসদ সদস্য শিরিন নাইমের ৩/১০২নং ফ্ল্যাটে থাকেন তার গাড়িচালক। বাগেরহাট-১ আসনের এমপি শেখ হেলাল উদ্দীনের ৩/৩০৪নং ফ্ল্যাটে থাকেন তার ব্যক্তিগত সহকারী। মহিলা এমপি কাজী রোজীর ৩/৪০১নং ফ্ল্যাটে থাকেন তার ব্যক্তিগত সহকারী। মহিলা এমপি লায়লা আরজুমান বানুর ৩/৮০৩নং ফ্ল্যাটে থাকেন তার ব্যক্তিগত সহকারী। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের এমপি উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর ৩/৯০২নং ফ্ল্যাটে থাকেন অফিসের লোক। বেগম মেরিনা রহমানের ৩/৬০৪নং ফ্ল্যাটে থাকেন তার বক্তিগত সহকারী।
৪ নম্বর ভবনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী (ব্রাক্ষণবাড়িয়া-১ আসনের এমপি) মোহাম্মদ ছায়েদুল হকের ৪/১০২নং ফ্ল্যাটে কেউ থাকেন না। ময়মনসিংহ-১১ আসনের এমপি ডা. এম আমানউল্লাহর ৪/১০৪ নং ফ্ল্যাটে থাকেন তার আত্মীয়স্বজন। বরিশাল-৪ আসনের এমপি পঙ্কজ দেবনাথের ৪/২০৩নং ফ্ল্যাটে থাকেন তার ব্যক্তিগত সহকারী। শরীয়তপুর-২ আসনের এমপি শওকত আলীর ৪/২০৪নং ফ্ল্যাটে থাকেন তার আত্মীয়। লক্ষ্মীপুর-৪ আসনের এমপি মো. আবদুল্লাহর ৪/৪০৩নং ফ্ল্যাটে থাকেন তার ব্যক্তিগত লোকজন। নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের ৪/৪০৪নং ফ্ল্যাটে কেউ থাকেন না। পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উ শৈ সিং ৪/৬০১নং ফ্ল্যাটে নিজে বসবাস করেন না।
৫ নম্বর ভবনে টাঙ্গাইল-৭ আসনের এমপি মো. একাব্বর হোসেনের ৫/২০১নং ফ্ল্যাটে তার ব্যাক্তিগত সহকারী ও ড্রাইভার বসবাস করেন। এ্চ এম ইব্রাহীমের ৫/ ৬০৪, রাজশাহী-১ আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর ৫/২০৪নং ফ্ল্যাটে তার ব্যক্তিগত সহকারী থাকেন। বরিশাল-৫ আসনের এমপি বেগম জেবুন্নেছা আফরোজের ৫/৭০২নং ফ্ল্যাটে তার ব্যক্তিগত সহকারী বসবাস করেন।
৬ নম্বর ভবনে মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের এমপি মৃণাল কান্তি দাসের ৬/২০১নং ফ্ল্যাটে থাকেন তার ব্যক্তিগত লোকজন। ভোলা-২ আসনের এমপি আলী আজমের ৬/২০৩নং ফ্ল্যাটে থাকেন তার ব্যক্তিগত লোকজন।
ময়মনসিংহ-৮ আসনের এমপি ফখরুল ইসলামের ৬/৪০৪নং ফ্ল্যাটে থাকেন তার ব্যক্তিগত লোকজন। ঢাকা-১৩ আসনের এমপি জাহাঙ্গীর কবির নানকের ফ্ল্যাট নং ৬/৫০২। সেখানে তিনি থাকেন না। তবে লোকজনের সঙ্গে সেখানে সাক্ষাৎ করেন। ভোলা-৩ আসনের এমপি নুরুন্নবী চৌধুরীর ৬/৫০৩নং ফ্ল্যাটে থাকেন তার ব্যক্তিগত সহকারী। চট্টগ্রাম-১০ আসনের এমপি মো. আফছারুল আমীনের ৬/৬০৩নং ফ্ল্যাটে থাকেন তার ব্যক্তিগত সহকারী। নোয়াখালী-৬ আসনের এমপি বেগম আয়েশা ফেরদৌস তার ৬/৬০৪নং ফ্ল্যাটে বসবাস করেন না। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান তার ৬/৭০৪নং ফ্ল্যাটে আসা-যাওয়া করেন।
খুলনা-২ আসনের এমপি মুহাম্মদ মিজানুর রহমান তার ৬/৮০২নং ফ্ল্যাটে মাঝে মধ্যে আসেন। বরগুনা-১ আসনের এমপি ধীরেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ ৬/৪০৩নং ফ্ল্যাটে আসা যাওয়া করেন। ঢাকা-১০ আসনের এমপি ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের ৬/৯০৩নং ফ্ল্যাটে তার ভাইয়ের পরিবার বসবাস করে। নড়াইল-২ আসনের এমপি শেখ হাফিজুর রহমানের ৬/৮০৪নং ফ্ল্যাটে তার আত্মীয়স্বজন থাকেন।
বৈঠকে কমিটির সদস্য ও বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মো. তাজুল ইসলাম চৌধুরী, মোঃ আব্দুস শহীদ, নূর-ই-আলম চৌধুরী, জাতীয় সংসদের হুইপ মাহাবুব আরা বেগম গিনি, পঞ্চানন বিশ্বাস, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মোঃ আসলামুল হক এবং তালুকদার মোঃ ইউনুস বৈঠকে অংশ নেন।