নিউজ ডেস্ক:
রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের জেরে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও আওয়ামী লীগের কদমতলী থানার জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ এবং তার গাড়িচালক হারুনুর রশিদ হত্যা মামলায় ছয়জনকে মৃত্যুদণ্ড ও দুজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ জাহিদুল কবির এ রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- রায়হান খোকন (পলাতক), জাকির হোসেন ওরফে কালা জাকির, মো. জাভেদ ওরফে প্রিন্স, আরিফ হোসেন, মো. জুম্মন ও হীরা (পলাতক)। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- শরিফুল (পলাতক) ও আমির হোসেন (পলাতক)।
অপর চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় আদালত তাদের খালাস দিয়েছেন। এরা হলেন- শাহ আলম প্রধানিয়া, শফিকুল আলম ওরফে সুমন, ইমন ওরফে কালু মিয়া (পলাতক) ও মিলন মোড়ল (পলাতক)।
রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিহতের স্ত্রী এবং মামলার বাদী কোহিনুর বেগম। তিনি বলেন, রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক রায়হান খোকনের মৃত্যুদণ্ড হওয়ায় আমরা সন্তুষ্ট। সে আমার স্বামীকে খুন করিয়েছে।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি দুপুরে রাজধানীর কদমতলী থানাধীন কমিশনার রোড মিষ্টি পট্টির কাছে কাকলী পাঠাগারের সামনের রাস্তায় মোহাম্মদ উল্লাহ এবং তার গাড়িচালক হারুনুর রশিদকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় নিহত মোহাম্মদ উল্লাহর স্ত্রী কোহিনুর বেগম কদমতলী থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত করে ওই বছরের ৩১ অক্টোবর তৎকালীন ডিবি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার রুহুল আমিন আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। মামলাটির বিচারকাজ চলাকালে আদালত ২৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।
বাদী এজাহারে উল্লেখ করেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে ওই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। মূলত ৫৩ (প্রাক্তন ৮৯) নং ওয়ার্ড কাউন্সিল নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রায়হান খোকন এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়। মোহাম্মদ উল্লাহ ৪০-৪৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি এলাকায় জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। রায়হান খোকনও ওয়ার্ড কমিশনার পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। কিন্তু তার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য এলাকাবাসী তাকে প্রত্যাখ্যান করে। তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম প্রকাশ্যে মোহাম্মদ উল্লাহকে আওয়ামী লীগ মনোনীত কমিশনার প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন। রায়হান খোকন এটা মেনে নিতে পারেননি। ফলে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মোহাম্মদ উল্লাহ এবং রায়হান খোকনের মধ্যে বিরোধ চলছিল। রায়হান খোকন মোহাম্মদ উল্লাহকে পথের কাঁটা মনে করতেন। ওয়ার্ড কাউন্সিল নির্বাচনে নিজের প্রার্থিতা নিশ্চিত করতে দক্ষিণ আফ্রিকায় পলাতক সন্ত্রাসী ইমন ওরফে কালু মিয়া এবং ভারতে পলাতক সন্ত্রাসী ও ভাড়াটে খুনি কাইল্লা আমিরের সঙ্গে যোগাযোগ করে এ হত্যাকাণ্ড সংগঠিত করেন।