নিউজ ডেস্ক:
ম্যাট বোমার ‘হোয়াইট কলার’ সিনেমায় শিল্পকর্ম চুরির কিছু টিপস দিয়েছিলেন। যার মূল লক্ষ্য ছিল বিশ্বের অনন্য ও বিরল সংগ্রহনীয় চিত্রকর্ম বা চিত্রশিল্প চুরির ওপর। যদিও হোয়াইট কলার কাল্পনিক, কিন্তু বিশ্বে চিত্রকর্মের যে চুরিগুলো হয়েছে তা মোটেও কাল্পনিক নয়।
জাদুঘরে বিখ্যাত শিল্পীদের আঁকা চিত্রকর্মগুলো অনেক সুরক্ষিত থাকে তবুও অনেক ঘটনা আছে যেখানে এসব চিত্রকর্ম সুপরিকল্পিতভাবে চুরি করা হয়েছে। অনেকটা হলিউডের সিনেমার আদলে যার ঘটনা শুনলে আপনিও চমকে উঠবেন।
বলে রাখা প্রয়োজন এ ধরনের চুরির মামলা পর্যবেক্ষণের জন্য এফবিআইয়ের একটি পৃথক ইউনিট রয়েছে। যারা এসব দামি দুর্মূল্য চিত্রের ওপর নজর রাখে। এমনই কিছু চিত্রশিল্প চুরির ঘটনা রয়েছে যা আপনাকে হোয়াইট কলার সিনেমাটির কথা স্মরণ করিয়ে দেবে। আসুন এক নজরে জেনে নেওয়া যাক পৃথিবীর বিশ্ব বিখ্যাত সব চুরি।
১. মোনালিসা
ফ্রান্সের রাজধানীতে প্যারিসের লুভর মিউজিয়ামের একজন কর্মচারী মোনালিসা চিত্রকর্মটি চুরি করে ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দে, মিউজিয়ামটি তখন বন্ধ ছিল। মোনালিসা যে চুরি করেছিল তার নাম ছিল ভিনসেনজো পেরুগিয়া। সে দুই বছর পর ধরা পড়ে, চিত্রকর্মটি বিক্রি করতে গিয়ে। এই দুই বছরের মধ্যে মোনলিসার অনেক নকল বিক্রি হয়েছিল। লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির আঁকা মোনালিসা অনেক জনপ্রিয় একটি চিত্রশিল্প।
২. গার্ডনার জাদুঘর
১৯৯০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনের গার্ডনার জাদুঘর থেকে চুরি হয়েছিল ১৩টি চিত্রশিল্প। যার মূল্য আনুমানিক ৫০০ মিলিয়ন ডলার। দুইজন ব্যক্তি পুলিশ কর্মকর্তার ছদ্মবেশে জাদুঘরের নিরাপত্তা রক্ষীদের চোখে ধুলো দিয়ে জাদুঘরে প্রবেশ করে ও কয়েক ঘণ্টার মধ্যে জাদুঘর লুট করে। লুট করা ছবির মধ্যে রয়েছে- ভার্মার এর আঁকা ‘The Concert’, রেমব্র্যান্ড এর আঁকা ‘The Storm on the Sea of Galilee’ এবং ‘A Lady and Gentleman in Black’। ওই ১৩টি ছবি এখনো পাওয়া যায়নি। যেখানে এগুলো রাখা ছিল সে ফ্রেমগুলো এখনো ফাঁকা পড়ে আছে।
৩. দ্য স্ক্রিম
দ্য স্ক্রিম চিত্রকর্মটি ১৯৯৪ সালে দুইজন ব্যক্তি নরওয়ের অসলোর জাতীয় আর্ট জাদুঘর থেকে চুরি করে। তারা যাওয়ার সময় একটি নোট রেখে যায় যাতে লেখা ছিল ‘Thanks for the poor security’ (দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য ধন্যবাদ)। পেইন্টিংটির মুক্তিপণ হিসেবে তারা ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দাবি করে কিন্তু কর্তৃপক্ষ তা দিতে রাজি হয়নি। তিন মাস পরে, একটি স্টিং অপারেশন করা হয় এবং পেইন্টিংটি অক্ষতভাবে উদ্ধার করা হয়।
‘দ্য স্ক্রিম’ ২০০৪ সালে আবারও চুরি হয়ে যায় মাঞ্চ জাদুঘর থেকে ‘ম্যাডোনা’ নামক আরেকটি চিত্রকর্মের সঙ্গে। বন্দুকধারীরা মুখোশ পড়ে দিনের আলোয় প্রকাশ্যে জাদুঘরে ঢুকে এবং চুরি করে পালিয়ে যায়। ২০০৬ সালে ছজনকে এই অপরাধের জন্য বিচারের মুখোমুখি করা হয় কিন্তু তখনো পেইন্টিংগুলো নিখোঁজ। নরওয়ের পুলিশ ২০০৬ সালে এই ছবি পুনরুদ্ধারের কথা জানান কিন্তু এগুলো উদ্ধারের বিবরণ প্রকাশ করা হয়নি।
৪.কানস্থল জাদুঘর
ক্লড মনেটের আঁকা ‘ওয়াটারলু ব্রিজ’ চিত্রকর্মটি ২০১২ সালে নেদারল্যান্ডসের রোটারডামের কানস্থল মিউজিয়াম থেকে ৭টি চিত্রকর্ম চুরি হয়। এগুলোর মধ্যে ছিলো মনেট এর আঁকা ‘Waterloo Bridge’ ও ‘Charing Cross Bridge, London’ এবং পিকাসো এর আঁকা ‘Tete d’Arlequin’। দুষ্কৃতকারীরা রাত ৩টায় তাদের কার্যক্রম শুরু করে। মিউজিয়ামের অ্যালার্ম বাজা স্বত্ত্বেও তারা নিরাপত্তা কর্মীদের আসার আগেই পালিয়ে যায়। অভিযুক্তরা ধরা পড়ে কিন্তু পেইন্টিংগুলো এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অভিযুক্তরদের একজনের মা বলেন, তিনি কয়েক মিলিয়ন ইউরো দামি পেইন্টিংগুলো পুড়িয়ে ফেলেছেন, যাতে করে প্রমাণগুলো মিটিয়ে ফেলে তার ছেলেকে বাঁচাতে পারেন।
৫.প্যারিসের জাতীয় মডার্ন আর্ট জাদুঘর
পাবলো পিকাসোর আঁকা ‘লে পিজন অক্স পেটিটস্ পয়েস’ চিত্রকর্মটি ২০১০ সালে ফ্রান্সের প্যারিসের জাতীয় মডার্ন আর্ট জাদুঘর থেকে এক রাতে ৫টি পেইন্টিং চুরি হয়, যার মূল্য ছিল প্রায় ১৬২ মিলিয়ন ডলার। পেইন্টিংগুলো চুরির সময় অ্যালার্ম বাজেনি। এগুলো যে চুরি হয়েছে, তা পরের দিন সকালে জাদুঘর কর্মীদের নজরে পড়ে। পিকাসোর ‘Le pigeon aux petits pois’ চিত্রকর্মটি এগুলোর মধ্যে একটি, কেউ কেউ বিশ্বাস করে এগুলো উদ্ধার করা যাবে না। কারণ চোর, চুরি করা মাত্রই সেগুলো ময়লায় ফেলে দেয়। ময়লাগুলো পরিষ্কার করার পরে কর্তৃপক্ষ সে বিষয়ে জানতে পারে।
৬.দ্য জাস্ট জাজেস
দ্য জাস্ট জাজেস চিত্রকর্মটি গির্জার বেদির পেছনের নিচের বাম প্যানেলের, এটি এঁকেছিলেন জ্যান ভ্যান ইক অথবা তার ভাই হুবার্ট ভ্যান ইক। এটা ১৯৩৪ সালে বেলজিয়ামের জাদুঘর থেকে চুরি হয়েছিল এবং কোনোদিন খুঁজে পাওয়া যায়নি। চুরির কিছুদিন পরেই চোর বা চোরেরা পুলিশরে কাছে চিঠি লেখে এবং এভাবে ১১টা পত্র আদান প্রদান হয়। চিত্রকর্মটির মুক্তির জন্য তারা এক মিলিয়ন বেলজিয়ান ফ্রাঙ্ক দাবি করে এবং মুক্তিপণ দেওয়া হলে প্যানেলের একটি অংশ ফেরত দেওয়া হয়। স্বঘোষিত চোর, আর্সেন গোয়েদার্তিয়ার-ই শুধুমাত্র জানতেন পুরো চিত্রকর্মটি কোথায়, তিনি তখন মৃত্যুশয্যায় ছিলেন এবং এ অজ্ঞাত তথ্যটি তিনি তার কবরে নিয়ে যান। এই দিন থেকে একজন গোয়েন্দা পুলিশ এ মামলায় নিযুক্ত হন।
৭.পপি ফ্লাওয়ার্স
ভিনসেন্ট ভ্যান গগ’র আঁকা ‘পপি ফ্লাওয়ার্স’ চিত্রটি মিশরের কায়রোর মুহম্মদ মাহমুদ খলিল জাদুঘর থেকে ২০১০ সালের আগস্ট মাসে চুরি হয় এবং আজ পর্যন্ত তা পাওয়া যায়নি। পেইন্টিংটির আনুমানিক মূল্য ছিল ৫০ থেকে ৫৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার।
একজন মিশরীয় কোটিপতি এটির সন্ধানদাতার জন্য ১,৭৫,০০০ ইউএস ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন। এর আগে ‘পপি ফ্লাওয়ার্স’ সর্বপ্রথম ১৯৭৭ সালে চুরি হয় এবং ১০ বছর পরে সেটি কুয়েত থেকে পুনরুদ্ধার করা হয়েছিল।