নিউজ ডেস্ক:
বাজেটের মৌসুম এলেই বড় ব্যবসায়ীদের মধ্যে তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। বড়দের দাবিদাওয়ার চাপে ছোট ব্যবসায়ীদের বেশির ভাগ দাবি নীতিনির্ধারকেরা আমলে নিতে পারেন না। অথচ এই ছোট উদ্যোক্তারাই তৃণমূল পর্যায়ে কর্মসংস্থান করে যাচ্ছেন। প্রতিবছর বিভিন্ন প্রাক্-বাজেট আলোচনায় এসে ছোট উদ্যোক্তারা উঁচু গলায় নিজেদের দাবিগুলো জানান। কিন্তু বাজেটে এর খুব বেশি প্রতিফলন হয় না। এসব ছোট ব্যবসায়ীর দাবি নিয়ে এবারের আয়োজন।
দেশি কৃষি যন্ত্রপাতির বিকাশ চাই
আগে কৃষকদের কাছে যন্ত্রপাতি বলতে মই, লাঙল, কাস্তেই ছিল মূল ভরসা। এখন দিন বদলে গেছে। এসেছে কলের লাঙল, মই, ধান কাটা ও মাড়াই যন্ত্রসহ বিভিন্ন ধরনের কৃষি যন্ত্রপাতি। একসময় বিদেশ থেকে এসব যন্ত্রপাতি আনা ছাড়া কোনো বিকল্প ছিল না। ছোট পরিসরে হলেও দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে এখন দেশেই তৈরি হচ্ছে এসব যন্ত্রপাতি। ক্রমশ দেশি যন্ত্রপাতির চাহিদাও বাড়ছে। তবে অসম শুল্ক-কর বৈষম্যের কারণে বিকাশমান এই খাতটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করেন উদ্যোক্তারা।
কৃষি যন্ত্রপাতির জন্য ৪৩ ধরনের খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানি করতে হয়। নাটবল্টু, বল-বিয়ারিং, ক্লাচসহ মাত্র ৯ ধরনের যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্ক-কর রেয়াত পাওয়া যায়। কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদক সমিতি দাবি করেছে, সব যন্ত্রাংশ আমদানিতেই যেন শুল্ক-করমুক্ত থাকে। বর্তমানে এসব যন্ত্রাংশ আমদানি করতে ২৫ থেকে ৬১ শতাংশ পর্যন্ত কর ভার পড়ে। অন্যদিকে তৈরি যন্ত্রপাতি আমদানিতে মাত্র ২ থেকে ৬ শতাংশ পর্যন্ত কর ভার।
এই বিষয়ে সমিতির সভাপতি আলীমুল আহসান চৌধুরী বলেন, এটি একটি বিকাশমান খাত। কিন্তু কর বৈষম্যের কারণে দেশীয় উৎপাদকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। যদি কৃষি যন্ত্রাংশ শুল্কমুক্ত করা হয়, তবে কৃষি যন্ত্রপাতির উৎপাদন খরচ কমবে। কৃষককে কম দামে পণ্য দেওয়া যাবে। এতে উৎপাদনশীলতা বাড়বে।
আলীমুল আহসান চৌধুরী আরও বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে এই খাতের উদ্যোক্তাদের কাঁচামাল কিনতে হলে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) দিতে হয়। আবার যন্ত্রপাতি সরবরাহের সময়ও মূসক দিতে হয়। নতুন মূসক আইনে এই কর অব্যাহতি দেওয়া উচিত। কেননা বন্যা, খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে কৃষকেরা প্রায়ই ক্ষতিগ্রস্ত হন। যন্ত্রপাতি কিনতে খরচ কিছুটা কমলে তাঁরা উৎসাহ পাবেন।
মিষ্টি বিক্রিতে ৬% মূসক
মিষ্টি কিনতে গেলে ১৫ শতাংশ মূসক দিতে হয়। এটাই আইন। অনেক বিক্রেতা বিশেষ করে অলিগলির মিষ্টি দোকানিরা মূসকের টাকা নিলেও রসিদ দেন না। আবার অনেকে মূসক ছাড়াই মিষ্টি বিক্রি করেন। এবার মিষ্টি বিক্রেতারাই দাবি করলেন ১৫ শতাংশ নয়; ৬ শতাংশ মূসক চান তাঁরা।
বাংলাদেশ মিষ্টি প্রস্তুতকারক সমিতি বলেছে, মিষ্টি তৈরির মূল উপাদান হলো দুধ, চিনি ও ময়দা। দুধ কেনা হয় কৃষকের কাছ থেকে; আর চিনি ও ময়দা বিক্রি করেন খুচরা দোকানিরা। এই তিনটি পণ্য কেনার সময় কোনো রসিদ পাওয়া যায় না। তাই উপকরণ রেয়াত পাওয়ার সুযোগ নেই। তাই মিষ্টি বিক্রির সময় ৬ শতাংশের বেশি মূসক আরোপ করা উচিত নয়। মিষ্টি প্রস্তুতকারক সমিতি আরও বলেছে, বর্তমানে মিষ্টি তৈরিস্থল ও বিক্রিস্থলে ১৫ শতাংশ করে মূসক আদায় করা হয়। সমিতির দাবি, বিক্রিস্থলে যেন মূসক আদায় করা হয়।
চশমা ব্যবসায়ীরা দাম কমাতে চান
চশমা দৈনন্দিন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হয়ে গেছে। বর্তমানে চশমা আমদানি করলে সব মিলিয়ে ৭৪ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ শুল্ক-কর দিতে হয়। এই খাতের ব্যবসায়ীরা জানান, পার্শ্ববর্তী ভারতে শুল্ক-কর হার ২৬ শতাংশ। তাই চীন থেকে আমদানি করা চশমা অবৈধ পথে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসে। এর ফলে বাজারে ভারত থেকে অবৈধ পথে আসা প্রতিটি চশমা ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চীন থেকে আমদানি করা চশমা বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা। এতে মার খাচ্ছেন স্থানীয় চশমার ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা চশমার ফ্রেমের ট্যারিফ মূল্য কমানোর পাশাপাশি সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। বাংলাদেশ চশমা শিল্প ও বণিক সমিতির দাবি, ট্যারিফ মূল্য প্লাস্টিক ফ্রেম ৯০ সেন্টের পরিবর্তে ৪০ সেন্ট; মেটাল ফ্রেম ১ ডলারের পরিবর্তে ৫০ সেন্ট; সানগ্লাস ১ ডলারের পরিবর্তে ৩৫ সেন্ট, রিডিং ফ্রেম ১ ডলারের পরিবর্তে ৩০ সেন্ট এবং বেবি ফ্রেম ১ ডলারের পরিবর্তে ২০ সেন্ট নির্ধারণ করা। এ ছাড়া এসব চশমার ফ্রেম আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ প্রত্যাহারের দাবিও জানানো হয়েছে।
টিকে থাকতে চায় দেশি বিস্কুট
দুই বছর আগে আমদানি করা বিস্কুটে সম্পূরক শুল্ক ৬০ থেকে ৪৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। অন্যদিকে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বিস্কুটের ট্যারিফ মূল্য ২০-৩০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। তাই বিদেশি বিস্কুটের ভিড়ে প্রতিযোগিতায় টিকতে চায় দেশি বিস্কুট।
ট্যারিফ মূল্য পুনর্নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ অটো বিস্কুট ও ব্রেড প্রস্তুতকারক সমিতি। সমিতির প্রস্তাব অনুযায়ী, ক্র্যাকারস, ডাইজেস্টিভ, চকলেট বিস্কুটের কেজিপ্রতি ১২০ টাকা থেকে কমিয়ে ১০০ টাকা; ক্রিম বিস্কুট ১০০ টাকা থেকে কমিয়ে ৮০ টাকা এবং ড্রাই কেক কেজিপ্রতি ৮৫ টাকা থেকে কমিয়ে ৬৫ টাকা নির্ধারণ করা।