সাবিনা আক্তার নামের রংপুরের এক শিক্ষার্থীকে সরকারের একটি সংস্থার পক্ষ থেকে ফোনে হুমকি দিয়ে আন্দোলনে না যেতে বলা হয়েছিলো। তার বাসার সামনে ছাত্রলীগ অস্ত্রসহ মহড়া দিয়ে আন্দোলনে ছাত্র-ছাত্রীদের না যেতে ভয় দেখায়।
আরেক শিক্ষার্থী সাজ্জাদকে নানাবাড়ি ও মেসে পালিয়ে থাকতে হয়েছে। যদিও এসব হুমকি ও ভয় উপেক্ষা করে রংপুরের এই শিক্ষার্থীরা জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিলেন। তারা পাশে ছিলেন পুলিশের গুলিতে নিহত আবু সাঈদের।
আজ শনিবার (৯ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজের উদ্যোগে আয়োজিত এক ওয়েবিনারে তারা এসব অভিজ্ঞতা জানান। ‘মৃত্যুর মুখোমুখি: জুলাই ১-৩৬ বিপ্লবে আবু সাঈদের রংপুরে কী ঘটেছিলো?’ ব্যানারের এই ওয়েবিনারে রংপুরের তিন শিক্ষার্থী অংশ নেন।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাবিনা আক্তার প্রতিদিনই মাঠে থেকে আন্দোলনে অংশ নেন। তিনি বলেন, গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা নানাভাবে হুমকি দিতেন। দমিয়ে রাখার জন্য ফোনে হয়রানিমূলক কথা বলতেন। ৫ আগস্টের পর এসে ক্ষমা চান তারা।
সাবিনা থাকতেন মেসে। ৪ আগস্ট সকালে তিনি দেখতে পান, মেসের সামনে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা অস্ত্রসহ এসে বসে আছেন। সেদিন আন্দোলনে না যাওয়ার জন্য ভয় দেখিয়েছিলেন তারা।
রংপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন আবু সাঈদকে গুলি করার সময় ঘটনাস্থলের কাছেই ছিলেন। ১৬ জুলাইয়ের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বলেন, দুপুর থেকে শহরে সব স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জমায়েত করেন। একসময় সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে এগোতে চান।
দুপুরের পরে বর্তমান আবু সাঈদ গেটের সামনে সাঈদের সঙ্গে দেখা হয়। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে সাঈদের তর্ক হয়।
এর মধ্যে পেছন থেকে একজন পুলিশ সদস্য ফাঁকা গুলি ছোড়েন। এতে অনেকেই ছোটাছুটি শুরু করেন। এক শিক্ষার্থীকে ধরে পেটান। পেছন থেকে সাঈদকে মাথায়ও আঘাত করেন। তখন সাজ্জাদ ওখান থেকে সরে যাওয়ার জন্য সাঈদকে বলতে থাকেন। কিন্তু সাঈদ পুলিশের সামনে বুক পেতে দাঁড়ান। পুলিশ তাকে গুলি করে। সরকার পতনের আগপর্যন্ত পালিয়ে থেকে আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন বলে জানান। নিজেও সাঈদের নিহত হওয়ার ঘটনার দিন আহত হন।
জুলাইয়ের শুরু থেকেই আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাবিনা ইয়াসমিন। তিনি বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন একসময়ে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনে পরিণত হয়। আন্দোলনে প্রশাসন, পুলিশ, ছাত্রলীগ একযোগে বাধা দিত। গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন এসে নানা তথ্য নিতেন।
সাবিনা ইয়াসমিন আরও বলেন, আবু সাঈদ যখন মারা যান, তাকে হাসপাতালে নিয়ে কোথায় রাখা হয়, তা অনেকক্ষণ কাউকে জানানো হয়নি। নোংরা একটা পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে রাখা হয়েছিল তাকে। যে মানবিকতাটুকু দরকার ছিল, সেটাও পাননি সাঈদ। তার বন্ধুদের চাপে রাখা হয়।
ওয়েবিনারে কলামিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নৃশংসতা ও বর্বরতার অনেক প্রমাণ রেখে গেছে। এগুলো নথিভুক্ত করতে হবে।’
এসময় তিনি আরও বলেন, ‘এত বীভৎসতার পরও শেখ হাসিনা নিজেই ইচ্ছা করে কল রেকর্ড প্রকাশ করে এখনো দেখে নেওয়ার কথা বলে যাচ্ছেন। কোনো অনুতাপ নেই।’
এইদিন সাংবাদিক মনির হায়দার ওই ওয়েবিনার সঞ্চালনা করেন। এতে অংশ নেন মালয়েশিয়ার ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটির ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক মো. মাহমুদুল হাসান।