নিউজ ডেস্ক:জাতীয় নির্বাচনের রেশ কাটতে না কাটতেই দুয়ারে কড়া নাড়ছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। দেশের ৪৯২টি উপজেলার মধ্যে এবার নির্বাচন হবে ৪৮০টিতে। মামলা, সীমানা জটিলতা ও মেয়াদ শেষ না হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে ১২টি উপজেলায় আপাতত নির্বাচন হচ্ছে না। মার্চ থেকে ৫ দফায় সব উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ফেব্রুয়ারিতেই ঘোষিত হবে তফসিল। এর আগে স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনটি সাধারণভাবে অনুষ্ঠিত হলেও এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে হচ্ছে। এর আগে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হয়। এদিকে প্রতিটি উপজেলায় এখনি বইতে শুরু করেছে নির্বাচনী হাওয়া। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যদিও বিএনপিসহ তাদের জোট এ নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা তা নিয়ে এখনো সংশয় রয়েই গেছে। তবে তাদের প্রার্থীরা কিছু কিছু এলাকায় সরব রয়েছেন। এ ছাড়া নিবন্ধন হারানো জামায়াতে ইসলামীও ধানের শীষ অথবা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এরই মধ্যে নির্বাচন নিয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে চা দোকান থেকে শুরু করে প্রতিটি অলি-গলিতে চলছে নানা আলোচনা-পর্যালোচনা। শুরু হয়েছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের গণসংযোগ। এলাকায় এলাকায় দৌড়ঝাঁপ। সম্ভাব্য প্রার্থীর ছবিসহ ‘দোয়া প্রার্থী’ লেখা পোস্টারে পোস্টারে ছেঁয়ে গেছে প্রতিটি গ্রাম ও মহল্লার অলি-গলি। প্রার্থীরা বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছেন। উঠান বৈঠক করছেন। মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন। দোয়া ও সমর্থন চাচ্ছেন। দলের সমর্থন পেতে তৃণমূলের নেতাকর্মীদেরও টানছেন নিজের পক্ষে। চলছেন সুসম্পর্ক বজায় রেখে। যদিও এখনো ঠিক হয়নি কোন প্রক্রিয়ায় প্রার্থী মনোনয়ন দেবে রাজনৈতিক দলগুলো। তবে প্রার্থীরা ধারণা করছেন, বরাবরের মতো এবারো দলের তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে প্রার্থী চূড়ান্ত করবে দলীয় মনোনয়ন বোর্ড। কেউ কেউ আবার স্থানীয় সংসদ সদস্যের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। তারা ভাবছেন স্থানীয় সাংসদ যাকে সমর্থন দেবেন তৃণমূলের মতামত তাদের পক্ষেই যাবে। সে জন্য সারাক্ষণ সাংসদদের আশপাশেই থাকছেন তারা। সাংসদের প্রতিটি কর্মসূচিতেই সরব উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে উপজেলায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা পরিষদে যারা মনোনয়ন চাচ্ছেন, তাদের সিংহভাগ প্রার্থীই একাদশ জাতীয় নির্বাচনে নিজ নিজ দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। পরে অবশ্য দল মনোনীত প্রার্থীর পক্ষেই জোরালোভাবে মাঠে কাজ করেছেন তারা। উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার পথ পরিষ্কার রাখতেই দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করেছেন। এদিকে এমপিদের পক্ষে যেসব নেতা সক্রিয়ভাবে কাজ করেছেন, তাদের বেশিরভাগই উপজেলা পরিষদে প্রার্থী হয়েছেন। ফলে কাকে সমর্থন দেবেন, কাকে দেবেন না তা নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থির মধ্যে পড়েছেন এমপিরা। তারাও গাঁ বাঁচিয়ে চলার চেষ্টা করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রংপুরের একজন সংসদ সদস্য ভোরের কাগজকে বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকায় দুটি উপজেলা। চেয়ারম্যান ও ভাইস-চেয়ারম্যান পদে প্রায় ৫০ জন প্রার্থী হয়েছেন। নির্বাচনে সবাই আমার পক্ষেই কাজ করেছে। প্রত্যেকেই দক্ষ ও যোগ্য প্রার্থী। প্রার্থীরা মনে করছেন- এমপি হিসেবে আমি যাকে সমর্থন দেব, তিনিই মনোনয়ন পাবেন। কিন্তু তাদের এই ধারণা ভুল। কারণ তৃণমূলের মতামত নিয়ে দলীয় হাইকমান্ডের নিদ্ধান্ত অনুযায়ী মনোনয়ন দেয়া হয়ে থাকে। দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড এ ব্যাপারে যাকে যোগ্য মনে করবেন- তাদেরই চূড়ান্ত করবেন। কাজেই বিতর্ক ও নেতাকর্মীদের চাপ এড়াতেই কোনো প্রার্থীকে প্রকাশ্য সমর্থন দিচ্ছেন না এই সাংসদ। এদিকে আরো কয়েকজন সংসদ সদস্যের সঙ্গে কথা বলে তাদের এই বিব্রতকর পরিস্থিতির কথা জানা গেছে। উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন নিয়ে কোনো প্রকার বিতর্কে জড়াতে চান না তারা। দলীয় হাইকমান্ড ও প্রধানমন্ত্রীর ওপরই ভরসা রাখছেন সাংসদরা।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগত সময়গুলোতে দলীয় প্রতীকে না হলেও প্রার্থীদের প্রতি সমর্থন ছিল হাইকমান্ডের। কিন্তু এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে সব উপজেলায় নির্বাচন হবে। তৃণমূলের মতামতের পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে এমপি প্রার্থীদের নিয়ে যখন জরিপ চালানো হয়, তখনই সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী সবার ওপরই জরিপ করা হয়। সেখান থেকে সংসদ নির্বাচনে জরিপে এগিয়ে থাকারাই দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন। ওই সময়েই উপজেলা প্রার্থীদেরও জরিপ করা হয়েছে। সেই ফলাফল নেত্রীর কাছে আছে। মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে সেটি বিবেচনায় নেয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এ দিকে প্রার্থীরা স্থানীয় নেতাকর্মী ও সাংসদ ছাড়াও দৌড়ঝাঁপ করছেন দলীয় হাইকমান্ডের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের কাছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকার মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নিজেদের অবস্থান তুলে ধরতে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে দেখা করছেন। কথা বলছেন। সমর্থন চাচ্ছেন। কিন্তু কোনো প্রার্থীকেই এখনো সমর্থন দিচ্ছেন না তারা। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আসন্ন। নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থীরা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় মাঠে কাজ করছেন। এলাকার মানুষের কাছে যাওয়ার পাশাপাশি আমরা যারা কেন্দ্রীয় নেতা আছি, আমাদের কাছেও অনেকেই আসছেন, তাদের কথা বলছেন, দোয়া চাইছেন। কিন্তু দলের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত আমরা কাউকেই কোনো নির্দেশনা দেইনি। দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে দলীয়ভাবে এখনো কোনো আলোচনা বা সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে এই নির্বাচনে মনোনয়ন ও প্রার্থী চূড়ান্ত করার জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড আছে। বোর্ডেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।