তিনদিনে ৯ ভরি রুপার গহনাসহ বিভিন্ন মালামাল চুরি!
নিউজ ডেস্ক:চুয়াডাঙ্গা শহরে আবারও বেড়েছে চুরির ঘটনা। গত দু’মাসে বেশ কয়েকটি দুঃসাহসিক চুরি সংঘটিত হলেও পুলিশের নেই উল্লেখযোগ্য সাফল্য। পুলিশ যেন বার বার চোরের কাছে পরাস্ত হচ্ছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন আর চোর ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে আশ্বাসের গন্ডি পেরিয়ে চোর ধরেত ও মালামাল উদ্ধারে পুলিশের নেই উল্লেখযোগ্য কোন সাফল্য। যদি গত তিনদিনের হিসাবও করা হয় তাতেও পুলিশ চোরের কাছে পরাস্ত বলে জানাচ্ছেন পৌরবাসীর অনেকে।
জানা যায়, গতকাল চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা কে এম আব্দুস সবুর খানের ভাড়া বাড়ির গ্রিল কেটে দুঃসাহসিক চুরির ঘটনা ঘটেছে। চোরেরা তেমন কিছু নিতে না পারলেও ৯ ভরি রুপার গহনা নিয়ে গেছে। সেই সাথে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখে গেছে কাপড়-চোপড় ও আসবাবপত্র। চারদিন পর বাড়ি ফিরে এই চুরির ঘটনা দেখতে পান তিনি। খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুল খালেক ও সদর ফাঁড়ির টিএসআই মুহিতুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন
গত বৃহস্পতিবার অফিসের কাজ শেষে কুষ্টিয়ার খোকসায় নিজ গ্রামের বাড়িতে যান পৌর কর্মকর্তা কে এম আব্দুস সবুর খান। ছুটি শেষে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গা কোর্টপাড়ার (চাঁদমারী মাঠ সংলগ্ন) ফজলুল হকের ভাড়া বাড়িতে ফিরে দেখতে পান ঘরের দরজা ভেতর থেকে আটকানো। বাড়ির মালিককে সঙ্গে নিয়ে বাড়ির চারপাশ ঘুরে দেখতে পান, বারান্দার গ্রিলের একপাশে চার-পাঁচটি লোহার পাতি ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করা হয়েছে। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে দেখেন, সব ঘরে জামা-কাপড় ও আসবাবপত্র ছড়ানো ছিটানো। চোরেরা চিরুণী অভিযান চলিয়ে ৯ ভরি রুপার গহনা নিয়ে গেছে। ফ্রিজে রাখা মাছ-মাংস ঘরের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখে গেছে। অপর ঘরে থাকা স্বর্ণের গহনা চোখে পড়েনি তাদের। চুরির ঘটনাই প্রথমে বাড়ির মালিক ভেবেই বসেছিলেন স্বর্ণের গহনাসহ সব কিছু নিয়ে গেছে চোর চক্র। কিন্ত খোঁজাখুজির একপর্যায়ে ছড়ানো ছিটানো জামা কাপড়েরর মধ্যে থেকে স্বর্ণের গহনা খুজে পেলেও রুপার গহনাগুলো পাইনি বলে জানা যায়। খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুল খালেক ও সদর ফাঁড়ির টিএসআই মুহিতুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
তবে গত দু’মাসে শহরের বেশ কয়েকটি চুরির শিকার ক্ষতিগ্রস্থরাসহ শহরের ব্যবসায়ীরা বলছেন, পৌর শহরে আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে চুরির ঘটনা। বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের টিন, ক্লপসিবল গেটসহ সাটারের তালা, বাসা বাড়ির তালা গ্রীল ভেঙ্গে চুরির ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্কে রয়েছেন এ এলাকার ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ। শহরের মধ্যে বিভিন্ন স্থানে পর পর কয়েকবার নগদ টাকাসহ বিভিন্ন মালামাল সোনার গহনা চুরির ঘটনায় থানায় কয়েকটি অভিযোগ দায়ের হলেও, এর সাথে জড়িত কেউ আটক ও চুরি হওয়া মালামাল উদ্ধারে পুলিশের তেমন কোনো সাফল্য না থাকায়, সেই আতঙ্ক আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে, গত (২০ এপ্রিল) কোর্টপাড়ায় পরশ ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোর ও হেলথ্ এন্ড হোপ নামে দুটি দোকানের টিন কেটে নগদ টাকাসহ ৩৬ হাজার টাকার মালামাল নিয়ে গেছে চোরেরা। তাছাড়াও গত (৫ মার্চ) দিবাগত রাতে চুয়াডাঙ্গা পৌর শহরের সিএন্ডবি অফিসের সামনে তরফদার মটরস নামে একটি টায়ারের দোকানের ক্লপসিবল গেট ও সাটারের তালা কেটে দুঃসাহসিক চুরির ঘটনা ঘটায় একদল সংঘবদ্ধ চোর। ওই দোকান থেকে ১২লাখ টাকার টায়ারসহ নগদ ৪০হাজার টাকা লুট করে তারা। এখনো পর্যন্ত চোরসহ চুরি হওয়া মালামাল উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। আবার গত (২৯ মার্চ) দিবাগত রাতে পৌর শহরের টার্মিনাল এলাকায় মালিহা টায়ার হাউজের সাটারের তালা কেটে একইভাবে দুঃসাহসিক চুরির ঘটনা ঘটে। চুরি হওয়া ওই দোকান থেকে প্রায় ৭ লাখ টাকার টায়ার নিয়ে যায় তারা। এই চুরিরও হদিস নেই। তবে একই দিন রাতে রেল বাজারে ৫টি দোকানের টিন কেটে, একটি দোকান থেকে নগদ টাকাসহ ৫০ হাজার টাকার মালামাল লুট করে পালানোর সময় নাইট গার্ড চোরদের চিনতে পারে।
পরে সকালে নাইট গার্ডের কাছে চোরসহ চুরির বর্ণনা শুনে চোর চক্রের মূলহোতা ঈদগাহ মোড়ের ভাংড়ী ব্যবসায়ী বাবুসহ ওই চুরির মাস্টার মাইন্ড রেলপাড়ার রুবেল (১৮), আশিক (১৮) ও তার ভাই সুমনকে (২২) আটকসহ টিন কাটার অস্ত্র ও চুরি হওয়া মালামাল উদ্ধার করে শহর ফাঁড়ি পুলিশ। পরে গ্রেফতারকৃতদের সদর থানার মাধ্যমে আদালতে প্রেরণ করা হলে বিজ্ঞ আদালত তাদের জেলহাজতে প্রেরণ করেন।
এদিকে গত (১৪ এপ্রিল) দিবাগত রাতে একাডেমি মোড় আলমডাঙ্গা রোডে প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন মেসার্স জোহরা ষ্টোর ও সোয়া থাই এ্যালুমিনিয়াম এর দোকানের টিন কেটে ড্রয়ারের তালা ভেঙ্গে নগদ টাকাসহ লক্ষাধিক টাকার মালামাল চুরি করে সংঘবদ্ধ ওই চোরের দল। অপরদিকে একই রাতে চুয়াডাঙ্গা রেল ষ্টেশন সংলগ্ন আলম স্টোরের দোকানের টিন কেটে নগদ টাকাসহ ২৫-৩০ হাজার টাকার মালামাল চুরি হয়। এছাড়াও আলম স্টোরের পাশে তারেক ষ্টোর নামে অপর একটি দোকানের টিন কাটে ওই চোরের দল। কিন্ত তারেক স্টোর থেকে তেমন কিছু¦ নেয়নি বলে জানায় দোকান মালিক।
এছাড়াও গত (৩ এপ্রিল) চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার ফিরোজ রোড সংলগ্ন সবুজপাড়ায় দিনের বেলায় বসতবাড়িতে দুঃসাহসিক চুরির ঘটনা ঘটে। ওইদিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চোরেরা আতিয়ার রহমান বিপ্লবের বাড়ির প্রাচীর টপকিয়ে গ্রিল কেটে ঘরে প্রবেশ করে স্টিলের আলমারী তালা ভেঙে ১৬/১৭ ভরি সোনার গহনা ও নগদ ৫ লাখ টাকা চুরি করে নিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত এ সকল ব্যক্তিদের অনেকেই এর প্রতিকার চেয়ে থানায় অভিযোগ দেয়নি। কারণ হিসেবে তারা বলেন, পুলিশ কাউকে আটক ও খোয়া যাওয়া মালামাল উদ্ধার করতে পারেনা। একের পর এক চুরি ঘটনায় সাধারণ লোকজন আতংকে রয়েছেন।
শহরে একের পর এক চুরির ঘটনা ও চুরি হওয়া মালামাল উদ্ধারের বিষয়ে চুয়ডাঙ্গা সদর থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) আবু জিহাদ ফকরুল আলম খানের সাথে কথা হলে, তিনি সময়ের সমীকরণকে জানান, এর মধ্যে কয়েকজন চোরকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছ। তদন্ত চলছে, বাকি চুরির ঘটনার সাথে জড়িতদের আটক করে আইনের আওতায় নেওয়া হবে। এসময় তিনি আরো জানান, প্রতিটা বাজার এলাকায় দু’তিনজন নাইট গার্ড থাকে, এসকল গার্ডগুলোর তথ্য কালেকশন চলছে তাদের কার্যক্রমের বিষয়গুলো তদারকি করা হবে।
এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মো. কলিমুল্লা’র সাথে কথা হলে তিনি সময়ের সমীকরণকে জানান, রেলবাজারে চুরির ঘটনার সাথে জড়িত ৩ জন ও তাদের পৃষ্ঠপোষকসহ দামুড়হুদার এক চোরকে আটক করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত এসকল চোরদের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়াও তিনি জানান, অপর চুরির ঘটনাগুলোর তদন্ত চলছে। এসকল চুরির সাথে জড়িতদের খুব শিঘ্রই আটক করে আইনের আওতায় আনা হবে বলেও জানান তিনি।