আলমসাধু চালক লিটনসহ আপন দু’ভাই রাকিব-সাকিবের মর্মান্তিক মৃত্যু
চালক-হেলপার পলাতক : দু’টি ট্রাক ভাঙচুর : ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এডিসিসহ পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা
ঘটনাস্থল থেকে ফিরে রাহুল রাজ: চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর সড়কের কুলপালা বাজার নামক স্থানে দ্রুতগতি সম্পন্ন রোড মিক্সার ভর্তি লরি/ট্রাকের ধাক্কায় একই পরিবারের দুই ভাইসহ তিনজন নিহত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা
১টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদা পীরপুর গ্রামের আলী হোসেনের ছেলে আলমসাধু চালক লিটন হোসেন (২২), চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গা উপজেলার কুলপালা গ্রামের আকুল শাহের দুই ছেলে রাকিব শাহ (১৮) ও সাকিব শাহ (১৩)। এদিকে দুর্ঘটনার পর প্রায় দেড় ঘন্টা চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর মহাসড়কে সকল প্রকার যান চলাচল বন্ধ করে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা।
সড়ক অবরোধ করে জহুরুল লিমিটেডের ঘাতক ট্রাক (ঢাকা মেট্রো-ট-২০-২৮৬৮)সহ আরও একটি ট্রাক (ঢাকা মেট্রো-ট-২২-১৩৬৯) ভাঙচুর করে তারা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে নেয় চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শী ও পারিবারিক সূত্র জানায়, জীবননগর সৌদি পোল্ট্রি ফিড থেকে মুরগীর খাদ্য বোঝাই করে চুয়াডাঙ্গা হয়ে মেহেরপুর যাচ্ছিলেন আলমসাধু চালক লিটন হোসেন। পথিমধ্যে কুলপালা নামকস্থানে পৌছুলে মেহেরপুরের দিক থেকে রোড মিক্সার ভর্তি দ্রুতগতি সম্পন্ন ১০ চাকার লরি/ট্রাক সামনে থেকে ধাক্কা দেয় আলমসাধুটিকে। এরপর তাকে চাকায় পিষ্ট করে পালানোর সময় রাস্তার পাশে দাড়িয়ে থাকা দুই ভাই রাকিব ও সাকিবকে ধাক্কা দেয় ঘাতক ট্রাকটি।
পরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার বা পাশের একটি নিমগাছে ধাক্কা দিয়ে গতিশুন্য হয়। ততক্ষণে পালিয়ে যায় ঘাতক ট্রাকটির চালক ও হেলপার। খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের একটি ইউনিট এসে গুরুতর আহত অবস্থায় দুই ভাইকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদেরকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় লিটন হোসেনের। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) খোন্দকার ফরহাদ আহমদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কানাই লাল সরকার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর ও আলমডাঙ্গা সার্কেল) মোহাম্মদ কলিমুল্লাহসহ জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কানাই লাল সরকার সময়ের সমীকরণকে বলেন, ‘একটি দুর্ঘটনার সংবাদ পেয়ে সঙ্গীয় ফোর্সসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। দুর্ঘটনাস্থল থেকে আমরা একজন আলমসাধু চালকের মরদেহ উদ্ধার করেছি। আহত আরও দুজনকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যদের সহায়তায় হাসপাতালে নেওয়া হলে তাদের মৃত্যু হয়। সড়কে কিছুটা যানজট লেগেছিল, তাৎক্ষণিক আমাদের পুলিশ সদস্যরা চলাচল স্বাভাবিক করেছে। ঘাতক লরি/ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে। দুর্ঘটনার পর চালক ও হেলপার পালিয়ে গেছে, তাদেরকে আটক করা সম্ভব হয়নি।’
এ প্রসঙ্গে চুয়াডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক আবদুস সালাম জানান, মেহেরপুর থেকে চুয়াডাঙ্গামুখী দ্রুতগতি সম্পন্ন একটি ট্রাক বিপরীত দিক থেকে আসা আলমসাধুকে সামনে থেকে ধাক্কা দেয়। ঘটনাস্থলেই আলমসাধু চালকের মৃত্যু হয়, হাসপাতালে নেওয়ার পর গুরুতর আহত আরও দু’জনের মৃত্যু হয়।
এদিকে, তাদের তিন জনের মরদেহ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। আজ ময়নাতদন্ত শেষে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।