আসনে ৮৭ জন প্রার্থীর যাচাই-বাছাই সম্পন্নক্রটিপূর্ণ আর অসঙ্গতির কারণে ২৮ জনের মনোনয়নপত্র বাতিলবিশেষ নিউজ ডেস্ক: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই সম্পন্ন হয়েছে। চুয়াডাঙ্গার দু’টি আসনের ১৮ জন প্রার্থীর মধ্যে চারজনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়াও মেহেরপুরের দু’টি আসনের ৩০ জন প্রার্থীর মধ্যে ১০ জনের এবং ঝিনাইদহের চারটি আসনের ৩৯ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৪ জনের মনোনয়ন গৃহীত হয়নি। আগামী ৯ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। পরদিন চূড়ান্ত প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। যাচাই বাছাইয়ে দেখা হয়- প্রার্থীর নাম, পিতা-মাতার নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, প্রস্তাবকের নাম, সমর্থকের নাম, প্রস্তাবক ও সমর্থকের স্বাক্ষর, তিনি হলফনামা যথাযথভাবে পূরণ পূর্বক তাতে স্বাক্ষর করেছেন কিনা, ব্যাংক হিসাব ফর্দ সংযুক্ত করা হয়েছে কিনা, প্রার্থীর নামে কোনো ফৌজদারি মামলা আছে কিনা বিবিধ বিষয়।গতকাল রোববার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গার দু’টি আসনের ১৮ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই করা হয়। যাচাই বাছাইয়ে বাদ পড়েন জাকের পার্টির একজন, মুসলিম লীগের একজন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী দু’জন। হলফনামায় স্বাক্ষর না করায় চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে জাকের পার্টি মনোনীত মো. আলমাছ হোসেন ও মুসলিম লীগ মনোনীত জেলার একমাত্র নারী প্রার্থী মেরিনা আক্তারের মনোনয়ন বাতিল করেন জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক। এদিকে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে দু’জন স্বতন্ত্র প্রার্থীরই মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। প্রার্থীরা হলেন জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মো. রুহুল আমিন ও নূর হাকীম। কারণ হিসেবে দেখানো হয়, স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে প্রার্থিতা দাখিলের সময় উক্ত আসনের মোট ভোটারের ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর ও প্রয়োজনীয় তথ্য সম্বলিত পত্র জমা দিতে হয় মনোনয়নপত্রের সঙ্গে। সে মোতাবেক তারা যে স্বাক্ষরসহ তথ্য জমা দেয় তার মধ্যে দৈব চয়নের ১০ জনের স্বাক্ষর যাচাই বাছাই করা হয়। এরমধ্যে কয়েক জনের স্বাক্ষর ও বক্তব্যে গড়মিল খুঁজে পাওয়ায় ওই মনোনয়নপত্র বাতিল বলে ঘোষণা করা হয়। বিধিমালা অনুসারে একজনের স্বাক্ষর ও তথ্যে মিল না থাকলেও বাদ দেওয়া যেতে পারে। বৈধ ঘোষিত প্রার্থীরা হলেন- (চুয়াডাঙ্গা-১) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি মনোনীত প্রার্থী চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি’র অন্যতম সদস্য মো. শরীফুজ্জামান, বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মেদ শামসুজ্জামান দুদু, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মুহা. অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস, অন্যতম সদস্য লে. কর্ণেল (অব.) সৈয়দ কামরুজ্জামান, জাসদ (ইনু) মনোনীত প্রার্থী এম সবেদ আলী, জাতীয় পার্টি মনোনীত এড. মো. সোহরাব হোসেন, মো. তৌহিদ হোসেন (জেএসডি) ও মোহাম্মদ জহুরুল ইসলাম (ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ)। চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে ঘোষিত বৈধ প্রার্থীরা হলেন- আ. লীগ মনোনীত বর্তমান সাংসদ হাজী আলী আজগার টগর, বিএনপি মনোনীত দলের কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-কোষাধ্যক্ষ ও চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি’র ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক আলহাজ্ব মাহমুদ হাসান খান বাবু, মো. হাসানুজ্জামান (ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ), মো. আব্দুল লতিফ খান (জাকের পার্টি) ও শেখ লালন আহমেদ (গণফ্রন্ট)। যাচাই বাছাই কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক গোপাল চন্দ্র দাস, পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান পিপিএম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) খোন্দকার ফরহাদ আহমেদ, জেলা নির্বাচন অফিসার তারেক আহমেদ, চার উপজেলা সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও ইউএনও, বিভিন্ন ব্যাংক-বীমা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ।  জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক বলেন, ‘১৮জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই শেষে চারজন প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ বলে গৃহীত হয়নি। এরমধ্যে দু’জন তাদের হলফনামায় স্বাক্ষর করেননি। বাকী দু’জন স্বতন্ত্র প্রার্থী, তাদের দেওয়া কিছু প্রযোজনীয় তথ্যানুসন্ধান করে অমিল পাওয়ায় মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। আগামী ১০ ডিসেম্বর বৈধ প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে।’মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মেহেপুরের দুটি আসনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল রোববার যাচাই-বাছাই শেষে ৩০টি মনোনয়নের বিপরীতে মেহেরপুর-১ আসনে ৫ জন এবং মেহেরপুর-২ আসনের ৫ জন করে ১০ জনের মনোনয়ন বাতিল করে ২০ জনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষনা করেছে জেলা রির্টানিং কর্মকর্তা। এদের মধ্যে দুটি আসনে বিএনপি থেকে ৫ জনকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তারা ৫ জনই বৈধ তালিকায় রয়েছেন। এছাড়া দলীয় মনোনয়ন পত্র না থাকায় মেহেরপুর-১ আসনের ৩ আওয়ামীলীগ প্রার্থী এবং মেহেরপুর-২ আসনে ৫ আওয়ামী লীগ প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। একই সঙ্গে সংযুক্ত ভোটার তালিকা সঠিক না থাকায় মেহেরপুর-১ আসনে দুইজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে।মেহেরপুর-১ আসন (সদর ও মুজিবনগর): মেহেরপুর-১ (সদর ও মুজিবনগর) আসনে যাদের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে তারা হলেন- সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য প্রফেসর আব্দুল মান্নান, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এড. মিয়াজান আলী, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি এড. ইয়ারুল ইসলাম। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আব্দুর রহমান, কেন্দ্রীয় শ্রমিক কল্যাণ লীগের সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমানের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। এই আসনে বৈধ প্রার্থী হিসেবে ঘোষনা করা হয়েছে- আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান এমপি ফরহাদ হোসেন, সাবেক সংসদ সদস্য ও  জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জয়নাল আবেদীনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষনা করা হয়েছে। বিএনপি মনোনিত প্রার্থী জেলা বিএনপি’র সভাপতি ও সাবেক এমপি মাসুদ অরুন এবং জেলা বিএনপির নির্বাহী সদস্য জাকির হোসেনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষনা করা হয়েছে। জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আব্দুল হামিদ, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের পক্ষে জেলা সভাপতি আবুল কালাম কাসেমী, জাকের পার্টির পক্ষে সাইদুল আলম এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জেলা জামায়াতের আমির তাজউদ্দিন আহমেদ খানের মনোনয়ন বৈধ ঘোষনা করা হয়েছে।মেহেরপুর-২ আসন (গাংনী): মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনে যাদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে তারা হলেন- জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক, আওয়ামী লীগ  নেতা আহমেদ আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোখলেসুর রহমান মুকুল, জেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নুরজাহান বেগম, জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়াসিম সাজ্জাদ লিখন। মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনে বৈধ প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে- আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহিদুজ্জামান খোকন, বিএনপি মনোনীত প্রার্থী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি আমজাদ হোসেন, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি জাভেদ মাসুদ মিল্টন, বিএনপি নেতা মেজর (অব.) শরিফ হোসেন মুকুল, ওয়াকার্স পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য নুর আহমেদ বকুল, এলডিপির পক্ষে জেলা সভাপতি ও সাবেক এমপি আব্দুল গনি, জেলা জাতীয় পার্টির পক্ষে সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম সেলিম, জাতীয় পার্টির কিতাব আলী, এনডিএম পার্টির জাভেদুর রহমান জনি এবং জাকের পার্টির পক্ষে আলী আকবর, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলের পক্ষে আলিমুজ্জমান মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এই আসনে একমাত্র স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত বর্তমান এমপি মকবুল হোসেনের মনোনয়ন বৈধ তালিকায় রয়েছে। মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং অফিসার আতাউল গনি জানান, দুটি আসনে ৩০ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। এরমধ্যে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নের কাগজ জমা দিতে না পারায় ৮ জন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে যে ভোটারদের স্বাক্ষর সংযুক্ত করা হয়েছিল সেখানে সঠিক না থাকায় ২ জনের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। বাকি ২০ জনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষনা করা হয়েছে।আমাদের ঝিনাইদহ অফিস জানিয়েছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝিনাইদহের ৪ টি আসনের ১৪ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। গতকাল রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত জেলা রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হয়। এতে আদালত থেকে দন্ডপ্রাপ্ত, ঋণ খেলাপি, পৌরকর বাকি, সঠিক কাগজ জমা না দেওয়াসহ নানা কারণে ১৪ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। ঝিনাইদহ জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ জানান, ঝিনাইদহ-১ আসনে দু’টি, ঝিনাইদহ-২ আসনে ৫টি, ঝিনাইদহ-২ আসনে দু’টি ও ঝিনাইদহ-৪ আসনে ৫টি মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। ২৫ জনের মনোনয়ন বৈধ করা হয়েছে। বাতিলগুলো হলো- ঝিনাইদহ-১ আসনে আব্দুল ওহাব (বিএনপি) ও আবু বকর (স্বতন্ত্র), ঝিনাইদহ-২ আসনে- মসিউর রহমান (বিএনপি), আব্দুল মজিদ (বিএনপি), আবু তালেব সেলিম (জাকের পার্টি), ইউসুফ পারভেজ (স্বতন্ত্র), মীর রবিউল ইসলাম (স্বতন্ত্র), ঝিনাইদহ ৩ আসন- ইসমাইল হোসেন (বাংলাদেশ ন্যাশনালিষ্ট পার্টি), কামরুজ্জামান স্বাধীন (জাতীয় পার্টি), ঝিনাইদহ-৪ আসন- ফনি ভূষণ রায় (সিপিবি), মো: ওয়াদুদুর রহমান (বিএনএফ), কামরুল ইসলাম (ন্যাশনাল পিপলস পার্টি), জহুরুল ইসলাম (স্বতন্ত্র) ও আব্দুল মান্নান (আওয়ামী লীগ)। ঝিনাইদহ-২ আসনে বিএনপির এড. আব্দুল মজিদের মনোনয়ন বাতিল করা হলেও তিনি আপিলের সুযোগ পাবেন বলে জানানো হয়েছে। এদিকে সারা দেশের ২৫ জন উপজেলা চেয়ারম্যানের মধ্যে ২২ জনকে নির্বাচন করার সুযোগ দেয়া হলেও ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে বলেও দলটি অভিযোগ করেন। তিনিও অন্যান্যদের মতো উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন বলে জানান।