জেলাজুড়ে হাতে গোনা ব্যবসায়ী ছাড়া সবাই লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করছে
নিউজ ডেস্ক:চুয়াডাঙ্গা জেলার প্রতিটি উপজেলার হাট বাজার থেকে শুরু করে চায়ের দোকান, মুদি ও সাধারণ দোকানেও হরহামেশা বিক্রি হচ্ছে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার। এ সকল ব্যবসায়ীরা আইনের তোয়াক্কা না করেই বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স ছাড়া শুধুমাত্র ট্রেড লাইসেন্স নিয়েই খোলামেলাভাবে চালাচ্ছে এ ব্যবসা। গ্যাস সিলিন্ডার বা পেট্রোলসহ দাহ্য পদার্থ বিক্রির ক্ষেত্রে অগ্নিনির্বাপক গ্যাস সিলিন্ডার সংরক্ষণের নিয়ম থাকলেও অধিকাংশ দোকানে নেই সে সুবিধা। জনবহুল বা আবাসিক এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ এ ব্যবসার ফলে প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা। তবে বিস্ফোরক পরিদপ্তর খুলনাসহ স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারীর অভাবে এ ব্যবসা জনসাধারনের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিকে, এ বিষয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলেন জেলা প্রশাসক।
চুয়াডাঙ্গা জেলা জুড়ে ১ হাজারেরও বেশি ব্যবসায়ী থাকলেও ২৫ থেকে ৩০ জন ব্যবসায়ী সরকারের ভ্যাট ট্যাক্স দিয়ে বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স নিয়ে নিয়ম মেনে ব্যবসা করছে। অথচ অবৈধ গ্যাস ব্যবসায়ীদের কারণে এসকল ব্যবসায়ীদের পথে বসার উপক্রম। একই সাথে সংশ্লিষ্ট পরিদপ্তরের লাইসেন্স খাত থেকে লাখ লাখ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, খুচরা এলপি গ্যাস বিক্রেতার অধিকাংশই সংশ্লিষ্ট আইন না মেনেই ব্যবসাটি চালিয়ে যাচ্ছেন। ঝুঁকিপূর্ণ এ জ্বালানির যথাযথ নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখছেন না। আবার বিস্ফোরক পরিদপ্তরের সনদ সংগ্রহেরও তোয়াক্কাও করছেন না। তবে এলপি গ্যাস প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোর ডিলাররা বিস্ফোরক পরিদপ্তরের সনদ নিলেও এ জেলার শহরসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলের খুচরা ব্যবসায়ীরা সিলিন্ডার মজুদের ক্ষেত্রে আইন অনুসরণ করছেন না। ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে সাধারণ ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করলেও ৮টিরও বেশি সিলিন্ডারে আবশ্যকীয় সনদ তাদের নেই। আবার এ সকল সিলিন্ডার মজুদের স্থানও যথেষ্ঠ নিরাপদ নয়। বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বিস্ফোরক পরিদপ্তরের সনদ ছাড়ায় স্থানভেদে ৩০ থেকে শুরু করে শতাধিক এলপি গ্যাস সিলিন্ডার দোকানে মজুদ করেছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।
চায়ের দোকান থেকে শুরু করে মুদি দোকান, বিভিন্ন প্রকারের দোকানে খোলামেলাভাবে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি ও ব্যবহার করছে। আবার ইদানিং দেখা যাচ্ছে, জনবহুল ও আবাসিক এলাকাতেও বিভিন্ন শ্রেণীর দোকানঘর নিয়ে এ ব্যবসা চালানো হচ্ছে। তবে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিসের অগ্নিনির্বাপক গ্যাস সিলিন্ডার সংরক্ষণ রাখার নিয়ম থাকলেও অধিকাংশ দোকানে সে সুবিধা নেই। এসকল ব্যবসায়ীরা আইনের তোয়াক্কা করছেন না বরং আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যেনো তেনো দোকান ও গুদাম ঘরে অসংখ্য পরিমাণ গ্যাস সিলিন্ডার সংরক্ষণ রেখে ব্যবসা করছেন। শুধু তাই নয়, হাট-বাজারেও খোলামেলাভাবে শত শত লোকের মাঝে বিপজ্জনক ঝুঁকিপূর্ণ এ গ্যাস সিলিন্ডার ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেই বিক্রি করছে।
চুয়াডাঙ্গা সদরসহ উপজেলার বেশ কিছু খুচরা এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের বেশির ভাগই আইনগত বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে অবগত। তারপরও এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। কোন কোন ক্ষেত্রে লাইসেন্স প্রাপ্তির দীর্ঘসূত্রতা এবং দালালের কারণে টাকার পরিমাণটা অনেক বেশি লাগার কারনে লাইসেন্স নিতে পিছিয়ে থাকছেন এ সকল ব্যবসায়ীরা।
এদিকে, বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করা এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, লাইসেন্সসহ সরকারের নিয়ম মেনে ব্যবসা করছি। প্রতিবছর বছর লাইসেন্স রেন্যু করছি, সরকারকে ভ্যাট ট্যাক্স প্রদান করছি। অথচ অসাধু কিছু ব্যবসায়ী ইচ্ছে মত যেখানে সেখানে দোকান খুলে হর হামেশা এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করছে। এতে করে তাদের ব্যবসার লাল বাতি জলার অবস্থা। এসময় তিনি আরো বলেন, স্থানীয় প্রশাসন প্রতিটা বিষয়ের তদারকি করলেও এসকল অবৈধ এলপি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসায়ীদের প্রতি কেনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তিনি আশা প্রকাশ করেন অতি শিঘ্রই স্থানীয় প্রশাসন এসকল ব্যবসায়ীদের প্রতি ব্যবস্থা নেবেন। অনেক ব্যবসায়ী এলপি গ্যাস বিক্রির নীতিমালা ও নিয়ম-কানুন জানেন না বা জানার চেষ্টাও করেন না। খুচরা পর্যায়ে প্রায় অধিকাংশ ব্যবসায়ীর এলপি গ্যাস বিক্রির কোনো প্রকার লাইসেন্স নেই। এমনকি তারা জানেও না যে, এলপি গ্যাস বাজারজাত বা বিক্রি করতে হলে বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স লাগে। অজ্ঞতা ও অধিক লাভের আশায় ব্যবসায়ীরা ঝুঁকি নিয়ে এ গ্যাস সিলিন্ডার মজুদ রেখে দেদারছে বিক্রি করছেন। ফলে উপজেলার প্রতিটি বাজারেই চলছে এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসা।
বিস্ফোরক পরিদপ্তর খুলনার সহকারি বিস্ফোরক পরিদর্শক ফরিদ উদ্দীন আহমেদের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি সময়ের সমীকরণকে জানান, লোকবল সংকটের কারনে খুলনা বিভাগের আওতাধীন জেলাগুলোতে এ সকল অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা যাচ্ছে না। তবে কিছুদিনের মধ্যে আমাদের নিয়মিত অভিযান পরিচালনা শুরু হবে। এলপি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসার ক্ষেত্রে যাদের বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স নেই একই সাথে স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নেই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ সময় তিনি আরো বলেন, স্থানীয় প্রশাসনও আইন অনুযায়ী এ সকল ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন।
এদিকে, চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমাদের প্রশাসন এ সকল অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।