নিউজ ডেস্ক:
লকডাউনে পুরো চুয়াডাঙ্গা শহর যেন রূপ নিয়েছে নীরবতা পালনের। গত ১৫ দিন সারাদেশের ন্যায় চুয়াডাঙ্গাতেও ছিলো অঘোষিত লকডাউন। সবকিছু বন্ধ থাকা সত্ত্বেও চুয়াডাঙ্গা শহরে মানুষের চলাচল ছিলো প্রায় স্বাভাবিক। গতকাল বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার স্বাক্ষরিত এক প্রেস নোটে বলা হয়েছে, দেশের কয়েকটি জেলায় করোনাভাইরাসের বিস্তার বেশি ঘটেছে। ফলে ওই সব এলাকা লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে কর্মরত লোকজন নিজ নিজ জেলায় ফিরছেন এবং ফেরার চেষ্টা করছেন। সেসব এলাকা থেকে কেউ চুয়াডাঙ্গায় ফিরলে স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে। চুয়াডাঙ্গাকে করোনা ঝুঁকিমুক্ত রাখতে জেলার সঙ্গে পার্শ্ববর্তী জেলার সব প্রবেশপথ এবং আন্তঃউপজেলার সড়কপথে চলাচল নিয়ন্ত্রণ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর অংশ হিসেবে রোগীবাহী গাড়ি, ওষুধ, পণ্যবাহী গাড়ি, কৃষিপণ্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যবাহী গাড়ির মতো জরুরি সেবায় নিয়োজিত যানবাহনের বাইরে সব ধরনের যানবাহন ও মানুষের চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এ ঘোষণার পর চুয়াডাঙ্গা শহরে মানুষের সমাগম নেই। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও ঘরে অবস্থান নিশ্চিত করতে এবং রাস্তায় চলাচল নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী। প্রয়োজন ছাড়া কাউকে রাস্তায় থাকতে দেওয়া হচ্ছে। কেউ বের হলে তাঁকে পুলিশের জেরার মুখে পড়তে হচ্ছে। তবে জরুরি সেবার যান চলাল করছে।
বড়বাজার, কোর্ট মোড়, শহীদ আবুল কাশেম সড়ক, কোর্ট রোডসহ বিভিন্ন স্থানে আইনশৃংখলাবাহিনী অবস্থান নিয়ে আছেন। একসাথে দুজন দেখলে সচেতন করে দেওয়া হচ্ছে। সেই সাথে মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকার দেখলেই থামাচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী।
শহরের বাস টার্মিনালে দেখা যায়নি তেমন লোকসামগমের। শহরের সবথেকে ব্যস্ততম স্থান বড় বাজার চৌরাস্তার মোড়। রাত ১২টা, কিংবা ভোর ৪টা কমপক্ষে হাতে গুণে ৫০জন মানুষের উপস্থিতি তো পাওয়াই যেত। আর দিনের কথা নাই বা বললাম। হাজার হাজার মানুষের চলাচল এ স্থান দিয়ে। আজ সেই চৌরাস্তার মোড়ে কোনো মানুষকে দাঁড়াতেই দেওয়া হচ্ছেনা। কয়েকজন আছেন, তবে তাঁরাও আইনশৃংখলাবাহিনী। প্রতিদিন সকালে যে মাছের আড়তে থাকতো মাছ ব্যবসায়ীদের পদচারণা, মাছের দরদাম হাঁকা, আজ প্রায় শূণ্য সে মাছের বাজার। সবজি থেকে শুরু করে প্রায় সকল ধরনের দোকান পাট বন্ধ। তবে ওষধসহ নিত্যপণ্যের দোকান অল্প কিছুসংখ্যক খোলা আছে। বেশ কিছু ওষধের দোকানও বন্ধ দেখা গেছে। ইতিহাসের পাতায় চুয়াডাঙ্গা শহরের এ যেন এক নতুন রূপ।
পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে যানবাহন ও মানুষের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে জেলা সবকটি প্রবেশপথসহ ১১টি স্থানে পুলিশের তল্লাশিচৌকি বসানো হয়েছে। জরুরি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যবাহী গাড়ি ছাড়া কোনো যানবাহন জেলায় প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে সাধারণ মানুষের চলাফেরায় আরও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। কাঁচাবাজারগুলোকে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য চালু রাখা এবং দূরত্ব বজায় রেখে বেচাকেনার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম বলেন, জেলা প্রশাসকের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে জেলার বদরগঞ্জ, হাসাদহ, পাটিকাবাড়ি ও কুলপালাসহ বিভিন্ন এলাকার ১১টি স্থানে পুলিশ তল্লাশিচৌকি বসিয়েছে। পাশাপাশি পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, করোনার বিস্তার ঠেকাতে বিভিন্ন জেলায় লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। কারণে বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ ও মাদারীপুর জেলা থেকে মানুষ নিজ জেলায় ফিরতে শুরু করেছেন। চুয়াডাঙ্গা জেলা এখনো ভালো অবস্থায় আছে। কিন্তু বাইরে থেকে লোক ঢুকলে পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে। তা মোকাবিলা করতেই এই উদ্যোগ।