নিউজ ডেস্ক: চুয়াডাঙ্গার ৪৩০ জন মাদকব্যবসায়ী অন্ধকার পথ ছেড়ে আলোর পথে ফিরেছেন। মাদক সেবন ও বিক্রয় ছেড়ে দিয়ে জেলার এসকল মাদকব্যবসায়ীরা একসাথে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। একসাথে ৪৩০ জনের আত্মসমর্পণ এবারই দেশে প্রথম। গতকাল সোমবার বেলা ১১টায় চুয়াডাঙ্গা সরকারী কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত মাদক ও জঙ্গীবাদ বিরোধী সমাবেশে তারা আত্মসমর্পণ করে। এসময় পুলিশের খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি এসএম মনির-উজ-জামান বিপিএম, পিপিএম নিজহাতে তাদেরকে ফুল দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে অভিনন্দন জানান। আলোর পথে আসা সকলকে সৌজন্য উপহার সামগ্রী দিয়ে তাদের পূণর্বাসনের আশ্বাস দেন ডিআইজি। এর আগে চুয়াডাঙ্গা শহরের শহীদ হাসান চত্বর থেকে মাদক ও জঙ্গীবাদ বিরোধী র্যালী বের হয়। ডিআইজি এসএম মনির-উজ-জামানের নেতৃত্বে র্যালীটি শহরের কবরী রোড ঘুরে সরকারী কলেজে শেষ হয়। পরে সেখানে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
চুয়াডাঙ্গা জেলা কমিউনিটি পুলিশিং সমন্বয় কমিটির আয়োজনে অনুষ্ঠিত মাদক ও জঙ্গীবাদ বিরোধী মহা সমাবেশে চুয়াডাঙ্গার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন পুলিশের খুলনা রেঞ্জের উপ-মহা পরিদর্শক (ডিআইজি) এসএম মনির-উজ-জামান বিপিএম, পিপিএম।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, মাদক এবং জঙ্গী তৎপরতা ছেড়ে আলোর পথে আসুন, আমরা আপনাদের পূণর্বাসনের সুযোগসহ সকল প্রকার আইনী সহায়তা দেবো। যারা আলোর পথে এসেছেন তাদের সাধুবাদ জানিয়ে এবং যারা এখনও আসেননি তাদের আত্মসমর্পণ করার আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, সাধারণ গরীব দুঃখী মানুষের পক্ষে মাদক ব্যবসা বা সেবন করা কঠিন । এদেরকে ব্যবহার করে যারা গডফাদারের ভুমিকা পালন করছেন তাদেরকেও হুশিয়ার করে দিচ্ছি আপনরারাও এই অন্ধকার জগতের জঘন্ন ব্যবসা ছেড়ে আলোর পথে আসুন । তা না হলে আপনাদের বিরুদ্ধে পুলিশ কঠিন অভিযান চালাবে। ডিআইজি বলেন, বালাদেশ ২০২১ সালে মধ্য আয়ের দেশ হবে। এদেশ এগিয়ে নিতে হলে মাদক থেকে সরে আসতে হবে। আপনারা যারা এই মহত কাজে সহযোগীতার হাত বাড়িয়েছেন তাদের সাথে পুলিশ ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবে।
আলোচনাসভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (প্রশাসন ও অপারেশন) মো. একরামুল হাবীব, অতিরিক্ত ডিআইজি (অপরাধ) হাবিবুর রহমান, চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস, চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবির পরিচালক আমির মজিদ, চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সেখ সামসুল আবেদিন খোকন, ঝিনাইদহের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার আজগর আলী শেখ, মাগুরা পুলিশ সুপার মুনিবুর রহমান, মেহেরপুর পুলিশ সুপার আনিছুর রহমান, চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপু, জেলা পুলিশিং সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক এসএম ইসরাফিল, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশাদুল হক বিশ্বাস, জীবননগর উপজেলা চেয়ারম্যান আবু মোঃ আব্দুল লতিফ অমল, আলমডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ হেলাল উদ্দীন, চুয়াডাঙ্গা সরকারী কলেজের উপাধ্যক্ষ, আব্দুল মজিদ প্রামানিক, চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজাদুল ইসলাম আজাদ, চুয়াডাঙ্গা জেলা মুক্তিযুদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক নুরুল ইসলাম মালিক, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক চুয়াডাঙ্গা জজ কোর্টের পিপি সামসুজ্জোহা, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সী আলমগীর হান্নান, জেলা কমিউনিটি পুলিশিং সমন্বয় কমিটির সদস্য সচিব মনিরুজ্জামান, চিৎলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান। এছাড়া বিভিন্ন এলাকার স্থনীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক, সামাজিক ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে জেলার ৪৩০ জন মাদকব্যবসায়ী আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। চুয়াডাঙ্গা মাদকমুক্ত করতে ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন গত ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে মাদকব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানান। ওইসময় মাদকব্যবসায়ীরা পূণর্বাসনের দাবী জানালে, তাদের পূণর্বাসনের আশ্বাস দেন পুলিশ সুপার। এরপর পর্যায়ক্রমে জেলার চার থানার মাদকব্যবসায়ীরা অন্ধকার পথ ছেড়ে আলোর পথে এসে স্বাভাবিক জীবন যাপন করার অঙ্গীকার করে। গতকাল সমাবেশে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধান অতিথি ডিআইজি এসএম মনির-উজ-জামানকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায় চুয়াডাঙ্গা জেলা কমিউনিটি পুলিশিং সমন্বয় কমিটির নির্বাহী সদস্যবৃন্দ। পরে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন পুলিশ লাইন্স জামে মসজিদের পেশ ইমাম ক্বারী মোঃ ইউনুস আলী শেখ, পবিত্র গীতা পাঠ করেন কলেজের অফিস সহকারী অরবিন্দ হালদার, পবিত্র বাইবেল পাঠ করেন পালক সরোজ মল্লিক।