এক্স-রে টেকনিশিয়ান দেন রক্তের ক্রস-মেসিং রিপোর্ট!
নিউজ ডেস্ক:চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মোড়ে অবস্থিত গ্রীন লাইফ মেডিকেল সেন্টার নামের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন রোগীসহ সাধারণ মানুষ। ইতোপূর্বেও নানা অভিযোগের কারণে এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারটিকে জরিমানা, সিলগালা ও সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তারপরেও বিভিন্নজনকে আর্থিকভাবে সুবিধা দিয়ে এই প্রতিষ্ঠানটি আবার তাদের কার্যক্রম শুরু করে বৈধ কাগজপত্র বাদেই। আর গ্রীন লাইফ মেডিকেল সেন্টারের রিপোর্ট মানেই নানা অসঙ্গতি ও ভুলে ভরা। গতকাল মঙ্গলবারও দেশ ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন আনোয়ার নামের এক রোগীর রক্তের ক্রস-মেসিং রিপোর্ট ভুল দেয় এই প্রতিষ্ঠানটি। গ্রীন লাইফ মেডিকেল সেন্টার এখন রোগী ঠকানোর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা না নিলে ঘটতে পারে রোগী মৃত্যুর ঘটনা বলে মনে করেন সচেতন মহল।
জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা সদরের কুতুবপুর ইউনিয়নের ভুলটিয়া গ্রামের মৃত সমশের আলীর ছেলে আনোয়ার হোসেনের (৬৩) কিডনির পাথর অপসারণের জন্য তাঁর স্বজনেরা তাঁকে সদর হাসপাতাল মোড়ে অবস্থিত দেশ ক্লিনিকে ভর্তি করেন এবং গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বৃদ্ধ আনোয়ার হোসেনের কিডনিতে অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচারের পর আনোয়ার হোসেনের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে চিকিৎসক শরীরে দ্রুত রক্ত দিতে বলেন। পরে মিলন নামের এক স্বজন তাঁকে এক ব্যাগ রক্ত দেন। মিলনের শরীর থেকে গ্রীন লাইফ মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে রক্ত নেয় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। এ সময় গ্রীন লাইফ মেডিকেল সেন্টারের এক্স-রে টেকনিশিয়ান জাহাঙ্গীর মিলনের শরীর থেকে রক্ত টেনে দেন এবং ক্রস-মেসিং না করেই সে নিজেই ক্রস-মেসিং রিপোর্ট প্রদান করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। একজন এক্স-রে টেকনিশিয়ান কী করে রক্তের ক্রস-মেসিং রিপোর্ট প্রদান করেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সচেতন মহল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতাল এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান, গ্রীন লাইফ মেডিকেল সেন্টারে রোগীদের এক্স-রে করেন জাহাঙ্গীর নামের একজন। তাঁর বৈধ এক্স-রে টেকনিশিয়ান সার্টিফিকেট নেই। তবে হাতে এক্স-রে মেশিন চালাতে জানেন। এর আগে আনেকবার নানাভাবে রোগীদের প্রতারণার সময় ধরা পরে প্রতিষ্ঠান সিলগালা, জরিমানা, আপসনামাসহ সাজা ভোগ করেছে গ্রীন লাইফ মেডিকেল সেন্টার। কিন্তু কয়েকদিন পর যা তাই।
রক্তের ক্রস মেসিং সম্পর্কে জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট আমজাদুল ইসলাম চঞ্চল বলেন, চুয়াডাঙ্গাতে একমাত্র সদর হাসপাতালেই রক্তের ক্রস মেসিং করার ব্যবস্থা রয়েছে। রক্তের ক্রস মেসিং-এর জন্য অবশ্যই উক্ত প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন কেন্দ্রের সনদ থাকতে হবে। একজনের শরীরের রক্ত অন্য জনের শরীরে দেওয়ার পূর্বে রক্তদাতার রক্তে ৫টি ভাইরাস সম্পর্কে জানার পর উক্ত রক্ত গ্রহীতার শরীরে দেওয়া যাবে কি না, তা নির্ধারণ করা হয়। একে রক্তের ক্রস মেসিং বলা হয়।
গ্রীন লাইফ মেডিকেল সেন্টারের পরিচালক মুকুল হোসেন বলেন, ‘গ্রীন লাইফ মেডিকেল সেন্টারে জাহাঙ্গীর নামে কেউ কাজ করেন না। তবে জাহাঙ্গীর কীভাবে ল্যাবে ঢুকে রক্তের ক্রস মেসিং করালেন, তা আমি জানি না।’ এদিক, অনেক চেষ্টা করেও গ্রীন লাইফের এক্স-রে টেকনিশিয়ান জাহাঙ্গীরের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।