নিউজ ডেস্ক:
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতায় শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলা হলেও চুয়াডাঙ্গার বেশিরভাগ এলাকাতেই এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করা হচ্ছে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ঘোষিত ছুটির কয়েকদিন পার হতে না হতেই শহরের চিত্র স্বাভাবিক সময়ের চেহারা নিয়েছে। একজন আরেকজনের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে কেনাকাটা করছেন। এক ক্রেতার হাতে অন্য ক্রেতার হাত লাগছে। অধিকাংশ মানুষের হাতেই গ্লাভস চোখে পড়েনি। কিছু ক্রেতা মাস্ক ব্যবহার করলেও মাস্ক ছাড়া ক্রেতার সংখ্যা কম নয়। আবার পাশাপাশি দাঁড়ানো কোনো একজন হাঁচি-কাশি দিলে পাশের লোকটি মুখ ঘুরিয়ে সরে যাচ্ছেন। গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে চুয়াডাঙ্গার বড়বাজারসহ বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে পাওয়া গেছে এমন চিত্র। জনসাধারণ এমন অসচেতনতায় করোনাভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
শুক্রবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে শহরের বড় বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রয়োজনীয় কাঁচাবাজার, চাল, ডাল ও মাছ-মাংস কিনতে নানা বয়সী নারী-পুরুষের ভিড়। এই ভিড় ঠেলে সবাই যে যার মতো কেনাকাটা করছেন। করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সরকারের পক্ষ থেকে একে অন্যের সঙ্গে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলা হলেও তার ছিঁটেফোঁটাও নেই। অন্যদের মতো বাজারে মাছ কিনতে আসেন মুখে মাস্ক পরে সুমন পারভেজ। তিনি বলেন, ‘ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলি করে কেনাকাটা করতে হচ্ছে। অধিকাংশ লোকই সচেতন নয়, মুখে মাস্কও নেই। যার ফলে প্রয়োজনে বাজারে এসে অস্বস্তিতে ভুগছি।’ বাজারে মজুরের কাজ করেন হাবিব নামের এক ব্যক্তি। চালের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে। তাঁর মুখে মাস্ক কিংবা হাতে গ্লাভসও নেই। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব চলছে, কেন মাস্ক পরেন না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি বস্তা টানি, তাই মাস্ক পরলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। আল্লাহই ভাইরাস থেকে রক্ষা করবেন।’ মাছের বাজারেও একই অবস্থা। এখানেও ভিড় ঠেলাঠেলি করে লোকজনকে কেনাকাটা করতে দেখা গেছে। রাব্বি নামের একজন মাছ কিনছিলেন। মুখে মাস্ক পরেননি। এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভাইরাস থেকে সুরক্ষায় মাস্ক পরা ভালো। বাজারে আসার সময় মাস্ক সঙ্গে নিতে ভুলে গিয়েছিলাম।
বড় বাজার চৌরাস্তার মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, অসংখ্য নারী-পুরুষের ভিড়। অধিকাংশের মুখেই মাস্ক নেই, গ্লাভস তো দূরের কথা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আফসানা নামের এক নারী বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে, মাস্ক পরা উচিত। কিন্তু রোজকার বাজারের টাকাই তো জোগাড় করা কষ্ট, সেখানে মাস্ক কিনমু কি দিয়া।’ আওয়াল নামের এক ব্যক্তি মাস্ক পরেছেন, হাতে রয়েছে গ্লাভসও। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের লোকজন এখনো করোনাভাইরাসকে গায়ে মাখছেন না। এই ভাইরাস কতটা ভয়াবহ, সেটা আমলে নিচ্ছেন না অনেকেই। আমাদের বেশির ভাগ লোকই ইতালি, স্পেনে করোনাভাইরাসে ভয়াল থাবার কথা জানে বলে মনে হয় না। জানলে এতটা অসচেতন হতে পারত না। এই ভাইরাস থেকে বাঁচতে জনসচেতনতা অত্যন্ত জরুরি।’
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে মানুষকে সচেতন করার কাজ প্রতিনিয়তই করা হচ্ছে। মাইকিং থেকে শুরু করে লিফলেট বিতরণসহ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে পুলিশ এবং সেনাবাহিনী কাজ করছে। এখন প্রত্যেককেই সচেতন হতে হবে। যে দেশগুলো এটা মানেনি, তাদের অবস্থা খুব একটা ভালো না। তাই সবাইকে সচেতন হতে হবে, সামাজিক দূরুত্ব বাজার রেখে চলতে হবে। তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে যার যার ঘরে থাকায় ভালো। অপ্রয়োজনে বাইরে না বেরিয়ে নিরাপদে ঘরে থাকা এখন সময়ের দাবি