নিউজ ডেস্ক:
চুয়াডাঙ্গায় গত ২৪ ঘণ্টায় ২০ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। ২০ জনের মধ্যে ১৭ জনই চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বিভিন্ন মহল্লার। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৫১১ জনে। গতকাল শনিবার রাতে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের নিকট কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ পিসিআর ল্যাব থেকে নতুন ৭৭টি নমুনার মধ্যে ৬৬টির ফলাফল আসে। উক্ত ফলাফলে ২০ জনের রিপোর্ট পজিটিভ ও বাকি ৪৬ জনের রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। এছাড়াও একটি ফলোআপ রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। নতুন শনাক্তকৃত ২০ জনের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ১৭ জন ও দামুড়হুদা উপজেলার ৩ জন।
এদিকে, করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া খাদিজা খাতুন ও দোকান কর্মচারী আব্দুল আজিজের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. শামীম কবীর। মৃত্যুবরণকারী খাদিজা খাতুন (৫৮) চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার ফেরিঘাট রোডের বিল্লাল হোসেন স্ত্রী। গত বৃহস্পতিবার করোনা উপসর্গ নিয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি হন খাদিজা খাতুন। তাঁর অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে রাজশাহী রেফার্ড করা হয়। ওই দিন রাত দেড়টার দিকে রাজশাহী নেওয়ার পথে নাটোরে পৌঁছালে তাঁর মৃত্যু হয়। ওইদিনই খাদিজা খাতুনের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। গতকাল তাঁর রিপোর্ট পজিটিভ আসে। অন্যদিকে, মৃত্যুবরণকারী দোকান কর্মচারী আব্দুল আজিজ গত মঙ্গলবার (২১ জুলাই) করোনা উপসর্গ নিয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। পরদিন ভোরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিট ইয়োলো জোনে মারা যান তিনি। ওই দিন জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ তাঁর নমুনা সংগ্রহ করে কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজের পিসিআর ল্যাবে পাঠালে গতকাল শনিবার তাঁর রিপোর্ট পজিটিভ আসে। আব্দুল আজিজ চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার কানা পুকুরপাড়ার মৃত সুলতান শেখের ছেলে। তিনি চুয়াডাঙ্গা বড় বাজারের পলক গিফট গার্ডেনে কর্মচারী হিসেবে ছিলেন।
এদিকে, গতকাল চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ১৭ জন আক্রান্তের মধ্যে পৌর এলাকার ওয়াবদাপাড়ায় ১ জন, সোনালী ব্যাংকের ১ জন, জেলা বিআরটিএ অফিসেন ১ জন, ফেরিঘাট রোডের ২ জন, থানা কাউন্সিল পাড়ায় ১ জন, রেলপাড়ায় ১ জন, বলদিয়া গ্রামে ১ জন, কানাপুকুর পাড়ায় ১ জন, বনানী পাড়ায় ১ জন, ফার্মপাড়ায় ১ জন, বঙ্গজপাড়ায় ১ জন, বেলগাছি গ্রামের ১ জন, গোরস্থানপাড়ায় ১ জন, আলুকদিয়া ইউনিয়নের আকন্দবাড়ীয়া গ্রামে ২ জন, শংকরচন্দ্র ইউনিয়নের ডিঙ্গেদহ গ্রামে ও ছয়ঘরিয়া গ্রামে ১ জন। দামুড়হুদা উপজেলায় ৩ জনের মধ্যে লোকনাথপুর গ্রামে ২ ও চণ্ডিপুর গ্রামে ১ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন সুস্থ হয়েছেন ৪ জন। মোট সুস্থ ২৬৯ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগ করোনা আক্রান্ত সন্দেহে নতুন ১০৫টি নমুনা সংগ্রহ করে কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ পিসিআর ল্যাবে পাঠিয়েছে। জেলায় মোট নমুনা সংগ্রহ করেছে ৩ হাজার ১৯৩টি। প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে আছেন ৫৫ জন ও হোম আইসোলেশনে আছেন ১৭৭ জন। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে আছেন ২২ জন ও হোম কোয়ারেন্টাইনে যুক্ত হয়েছেন ৯০ জন।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. শামীম কবির বলেন, চুয়াডাঙ্গায় ৭৭টি নমুনার মধ্যে ৬৬টি পরীক্ষা করে নতুন ২০ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ১৭ জন ও দামুড়হুদা উপজেলায় ৩ জন। করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া পৌর এলাকার ফেরিঘাট রোডের বাসিন্দা খাদিজা খাতুন ও কানা পুকুরপাড়ার বাদিন্দা আব্দুল আজিজের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। তাঁরা করোনা আক্রান্ত হয়েই মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি আরও বলেন, ‘কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজের পিসিআর ল্যাব থেকে আমাদের কাছে শনাক্তের রিপোর্ট আসার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে আক্রান্তের খবর জানানো হয়। এছাড়াও উক্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকেও জানানো হয়। তাঁরা আক্রান্তদের বাড়ি-ঘর পরিদর্শন করে লকডাউনসহ বাড়ির অবস্থা বুঝে হোম আইসোলেশন অথবা প্রতিষ্ঠানিক আইসোলেশনের ব্যবস্থা নেবেন।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী চুয়াডাঙ্গায় এখন পর্যন্ত সর্বমোট আক্রান্ত ৫১১ জনের মধ্যে সদর উপজেলায় ২৪৫ জন, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ১০৮ জন, দামুড়হুদা উপজেলায় ১১৫ জন ও জীবননগর উপজেলায় ৪৩ জন। সুস্থতার মধ্যে সদর উপজেলায় ৮৯ জন, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৭৫ জন, দামুড়হুদা উপজেলায় ৭৮ জন ও জীবননগর উপজেলায় ২৭ জনসহ মোট ২৬৯ জন। এ পর্যন্ত জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ ৯ জনের মধ্যে সদর উপজেলায় ৪ জন, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ২ জন ও দামুড়হুদা উপজেলায় ৩ জন।