নিউজ ডেস্ক:চুয়াডাঙ্গায় নতুন করে ৩৩ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার রাত ৯টায় জেলা সিভিল সার্জন অফিস এ তথ্য নিশ্চিত করে। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১ হাজার ৯১ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় সদর হাসপাতালের ইয়োলো জোনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনা উপসর্গে এক নারীসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া নিজ বাড়িতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত বীর মুক্তযোদ্ধা আশু বাঙ্গালীর করোনা রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। তাই উপসর্গ নিয়ে চারজন ও করোনা আক্রান্ত একজনসহ চুয়াডাঙ্গা জেলায় গতকাল পাঁচজন মারা যান। জেলায় নতুন আক্রান্ত ৩৩ জনের মধ্যে সদর উপজেলার ১৯ জন, আলমডাঙ্গা উপজেলার ৪ জন, দামুড়হুদা উপজেলার ৭ জন ও জীবননগর উপজেলার ৩ জন রয়েছে।
জানা যায়, ১২ আগস্ট বুধবার জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ করোনা আক্রান্ত সন্দেহে ১০২ জনের নমুনা সংগ্রহ করে। গতকাল উক্ত ১০২ জনের নমুনার ফলাফল ও সোমবার (১৭ আগস্ট) সংগৃহীত ৮৪টি নমুনার মধ্যে ৫৫ জনের রিপোর্ট এসেছে। এর মধ্যে ১২ আগস্ট সংগৃহীত ১০২ জনের মধ্যে ১৫ জনের রিপোর্ট পজিটিভ ও বাকি ৮৭ জনের রিপোর্ট নেগেটিভ আসে এবং গত সোমবার সংগৃহীত ৮৪টি নমুনার মধ্যে ৫৫টি নমুনার রিপোর্ট এসেছে। যার মধ্যে ১৮ জনের রিপোর্ট পজিটিভ ও ৩৭ জনের রিপোর্ট নেগেটিভ। আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ২৬ জন ও নারী ৭ জন। বয়স ৭ থেকে ৭৫ বছর পর্যন্ত।
এদিকে, গতকাল মারা যাওয়া বীর মুক্তযোদ্ধা আশু বাঙালীর করোনা পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে। গতকাল বিকেল সাড়ে চারটার দিকে নিজ বাড়িতে তিনি মারা যান। জানা যায়, বীর মুক্তযোদ্ধা আশু বাঙালী দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে নিজ বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। সম্প্রতি তাঁর শরীরে করোনা উপসর্গ পরিলক্ষিত হলে গত সোমবার তিনি করোনা পরীক্ষার জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে এসে নমুনা দেন। এদিকে, গতকাল রাতেই উক্ত নমুনার ফলাফল এসে পৌঁছায়। এতে তাঁর শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। করোনা আক্রান্ত সন্দেহে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ গতকাল ৬০টি নমুনা সংগ্রহ করে নমুনা পরীক্ষার কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেছে।
এদিকে, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ইয়োলো জোনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনা উপসর্গ নিয়ে এক নারীসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।
নিহতরা হলেন- দামুড়হুদা উপজেলার পীরপুরকুল্লা গ্রামের মৃত নিয়ত আলীর ছেলে আব্দুস সাত্তার (৬৫), চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার কোর্টপাড়ার সামসুল আরেফিনের স্ত্রী নিগার সুলতানা (৪৬) ও চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার মুক্তিপাড়ার মৃত নিয়াজ আলীর স্ত্রী মাজেদা বেগম (৭০)।
জানা যায়, গত রোববার (১৬ আগস্ট) বেলা দুইটার দিকে পরিবারের সদস্যরা আব্দুস সাত্তারকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়। আব্দুস সাত্তারের শরীরে ঠাণ্ডা, জ্বর, শ্বাসকষ্টসহ করোনা উপসর্গ পরিলক্ষিত হওয়ায় জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে হাসপাতালের ইয়োলো জোনে ভর্তি রাখেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।
সদর হাসপাতালের ইয়োলো জোনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন অপর আরেক রোগী নিগার সুলতানা। তিনি কিছুদিন যাবৎ ঠাণ্ডা, জ্বর, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। নিজ বাড়িতেই তিনি চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে গত সোমবার পরিবারের সদস্যরা তাঁকে সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়। এ সময় নিগার সুলতানার শরীরে করোনা উপসর্গ পরিলক্ষিত হওয়ায় জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে হাসপাতালের ইয়োলো জোনে ভর্তি রাখেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল গতকাল মঙ্গলবার বেলা দেড়টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।
এদিকে, ঠাণ্ডা, জ্বর, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত মাজেদা বেগম (৭০) নিজ বাড়িতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিলেন। অবস্থার অবনতি হলে পরিবারের সদস্যরা তাঁকে গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ইয়োলো জোনে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকালই সন্ধ্যা ৭টার দিকে মারা যান মাজেদা বেগম। মৃত্যুর পর তাঁর শরীর থেকে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
এছাড়া, জীবননগরে করোনা উপসর্গ নিয়ে পরিবহন ব্যবসায়ী জহুরুল ইসলাম খোকনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে নিজ বাড়িতে তাঁর মৃত্যু হয়। নিহত জহুরুল ইসলাম জীবননগর উপজেলার পোস্ট অফিসপাড়ার মৃত শওকত আলীর ছেলে। জানা যায়, জহুরুল ইসলাম খোকন দীর্ঘদিন যাবত জ্বর, ঠাণ্ডাসহ শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। গতকাল আসরের নামাজ শেষে জীবননগর পৌর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে মরহুমের জানাজা শেষে পৌর কেন্দ্রীয় কবরস্থানে করোনা প্রটোকলে তাঁর দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়। এদিকে, শরীরে করোনা উপসর্গ ঠাণ্ডা, জ্বর থাকায় গত সোমবার তিনি করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. শামীম কবির জানান, গতকাল মঙ্গলবার হাসপাতালের ইয়োলো জোনে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর পর করোনা পরীক্ষার জন্য তাঁদের নমুনা সংগ্রহ করে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া সোমবার সংগৃহীত নমুনায় গতকাল বিকেলে মারা যাওয়া আশু বাঙালীর নমুনায় করোনা শনাক্ত হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন অফিসের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী জেলা থেকে এ পর্যন্ত মোট নমুনা সংগ্রহ ৪ হাজার ৫৪১টি, প্রাপ্ত ফলাফল ৪ হাজার ৩৮২টি, পজিটিভ ১ হাজার ৯১ জন ও নেগেটিভ ৩ হাজার ২০১ জন। ফলাফল পেতে বাকি আছে ১৫৯টি নমুনার। গতকাল চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার হোম আইসোলেশন থেকে ১০ জন ও আলমডাঙ্গা উপজেলার হোম আইসোলেশন থেকে ৭ জনসহ নতুন ১৭ জন সুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় মোট সুস্থতার সংখ্যা ৫৬২ জন ও মৃত্যু ২২ জন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জেলায় গতকাল হোম আইসোলেসনে ছিলেন ৪৪৬ জন ও প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে ছিলেন ৫৯ জন।