চুরিকৃত মালামাল উদ্ধার ও ক্রেতাসহ দু’জন আটক

0
12

আলমডাঙ্গায় চুরির মূল হোতা মামা-ভাগ্নের তথ্যে চোর সিন্ডিকেট সনাক্ত
নিউজ ডেস্ক:আলমডাঙ্গায় চোর-চক্রের মূল হোতা মামা-ভাগ্নের তথ্য অনুসরণে বেরিয়ে এলো রহস্যজনক চোর সিন্ডিকেট। থানা পুলিশের চিরুনি অভিযানে মামা-ভাগ্নেসহ চুরিকৃত মালামাল ও ক্রেতাসহ দু’জনকে আটক করেছে। গত মঙ্গলবার ভোর রাতে আলমডাঙ্গার শহরের কালিদাসপুর ব্রিজের নিকট ফটো-পার্ক ডিজিটাল স্টিডিও ঘরে টিনের চাল কেটে ভিতরে প্রবেশ করে। চুরির সময় দোকানের ভেতরে শব্দ পাওয়ায় স্থানীয়রা হাতে নাতে আটক করে পুলিশে দেয় তাদেরকে।
স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, আলমডাঙ্গা উপজেলা কালিদাসপুর ইউনিয়নের আসানগর গ্রামসহ পার্শ্ববতী অঞ্চলে উঠতি বয়সের স্কুলপড়–য়া ছাত্ররা রাতের আধারে চুরি চক্রের সিন্ডিকেট তৈরি করেছে। এরই ধারাবাহিতকায় ইতোপূর্বে শহরের কালিদাসপুর-কুষ্টিয়া সড়কে অবস্থিত সুমনের স’মিল ঘরের তালা ভেঙ্গে শাবল, সমির আলীর কাঠের আসবাবপত্রের আড়ৎ ভেঙ্গে নগদ টাকা, ড্রয়ারে রাখা একটি সোনার আংটি, হাতুড়ি-বাটাল নিয়ে যায়। এছাড়া হবিবরের চাতালের গোডাউনের সাটার ভেঙ্গে কয়েক হাজার টাকা ও ফারুকের দোকান ঘরের সাটার ভেঙ্গে নগদ টাকা চুরি করে। এ দোকানগুলির একটু দূরে আরও দু’টি দোকানের সাটার ভেঙ্গে রেখে যায়। এছাড়া এ ঘটনার ২ দিন আগে একই এলাকার মিজান স্টোরের সাটার ভেঙ্গে সিগারেট, সাবান, মোবাইল রিচার্জ কার্ড ও সফট পানীয় চুরি করে। এই গণচুরির পর থেকে থানা পুলিশ সংশ্লিষ্ট চোরচক্রকে আটক করতে মরিয়া হয়ে উঠে।
এরই মধ্যে গত পরশু ভোরের দিকে কালিদাসপুরের ফটোপার্ক স্টুডিওর ঘরের টিনের চালা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে ২টি ক্যামেরা, নগদ টাকা ও মোবাইলফোনের রিচার্জ কার্ড চুরি করে নিয়ে যাচ্ছিল চোরচক্র। সে সময় স্টুডিওর পেছনের বাড়ির লোকজন টের পেয়ে ধাওয়া করে ধরে ফেলেন এক চোরকে। এ চোরের নাম জান্নাতুল নাঈম রাফি। রাফি বাবা ব্রিটিশ আমেরিকা ট্যোবাকোর দেশ ট্রেড লিংকের চুয়াডাঙ্গার সেলস সুপারভাইজার আলমডাঙ্গার আসাননগর গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে।
আটক কিশোর রাফিকে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের নিকট সে চুরির ব্যাপারে সব তথ্য স্বীকার করে। জানিয়ে দেয় এসকল চুরির সাথে কারা কারা জড়িত। এ চোরচক্রের প্রধান হোতা রাফি নিজে ও তার মামা পরশ। পরশ কালিদাসপুরের আজিম উদ্দীনের ছেলে। মামা-ভাগ্নে রাফি ও পরশের সাথে আরও জড়িত কালিদাসপুরের হেলালের ছেলে সাব্বির ও একই গ্রামের শাফায়েত আলীর ছেলে রাকিব। এ কিশোর চোরচক্রের চোরাই মালামাল বিক্রির দায়িত্বও ছিল মামা-ভাগ্নে রাফি-পরশের উপর।
রাফির দেওয়ার তথ্য মতে শুরু হয় পুলিশি অভিযান। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বেপরোয়াভাবে রাফির সাথে সংযুক্ত চোরচক্রের সদস্যদের খুজতে থাকে পুলিশ। চোর চক্রের মূল হোতা রাফি আটক হওয়ার কথা শুনে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় অনেকে। পুলিশ, চুরির সাথে সম্পৃক্তদের না পেয়ে পরে তাদের পরিবারের লোকজনকে নিয়ে আসে আলমডাঙ্গা থানায়। থানার ওসি আসাদুজ্জামান আসাদের নির্দেশে তাদের পুলিশের নিকট ধরা দেওয়ার জন্য জানানো হয়। পরিবারের লোকজন তাদের সন্তানদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তারা এলাকা ছেড়ে অনেক দূরে পালিয়ে যায়। এই অভিযানে পরশের পিতা আজিম উদ্দীনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসার পর নিজের ছেলেকে ফোনে ডেকে নিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
এদিকে, পুলিশ রাফিকে সঙ্গে নিয়ে যে সকল দোকানে চুরিকৃত মালামাল বিক্রয় করে, সেই দোকানে গিয়ে চোরাই মালামাল উদ্ধার করে। সে সময় আটক করা হয় চোরাই মালামাল ক্রেতা ব্যবসায়ী আলমডাঙ্গা লাল ব্রীজের নিকটবর্তি মুদী ব্যবসায়ী রাশিদুল ইসলামকে। রাশিদুলের বাড়ি হাড়গাড়ি। এরপর আটক করে আলমডাঙ্গা স্টেশন এলাকার ট্যাঙ্গরের জামাই মুদী ব্যবসায়ী সাজ্জাত হোসেনসহ কালিদাসপুরের আরও এক ভাংড়ী ব্যবসায়ীকে। পরে ভাংড়ী ব্যবসায়ীকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। এনিয়ে এলাকাজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে, এই চোর-চক্রের অবিরাম পথ হাটা বন্ধ করায় থানা পুলিশকে সাধুবাদ জানায় এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ী মহল।
এই ঘটনায় আলমডাঙ্গা থানার ওসি আসাদুজ্জামান মুন্সি জানান, চুরি থেকে শুরু করে কোন অপরাধমূলক কর্মকান্ড চালালে তাদের রেহায় দেওয়া হবে না। রাফির তথ্য অনুসরণে পলাতকদের আটক অভিযান অব্যহত থাকবে।