নিজিস্ব প্রতিবেদকঃ
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে অসহায় রোগীদের জন্য কেউ আবেদন করে না, সবাই দলীয় কর্মীদের জন্য রোগী কল্যাণে আবেদন করে। আপনারা সবাই রোগীর কল্যাণে কাজ করবেন। আমি বাইরের সমালোচনা করব না, বাইরে ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে কাগজপত্র থাকলে বন্ধ করতে পারব না। বাইরে রোগীদের যে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় যেখানে ৩০০ টাকা খরচ হয়, আমরা যদি হাসপাতালে ১০০ টাকায় তা করতে পারি, তবে কেউ বাইরে টেস্ট করতে যাবে না। তবে সেটা করতে আমাকে সময় দিতে হবে, সুযোগ দিতে হবে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গা রোগী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সভায় সভাপতির বক্তব্যে জেলার সিভিল সার্জন কাম সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সাজ্জাৎ হাসান এসব কথা বলেন। বেলা ১১টায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সম্মেলনকক্ষে রোগী কল্যাণ সমিতির এ সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
হাসপাতালের সার্বিক উন্নয়নের সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ভালো কাজগুলি প্রচার করবেন। আমি হাসপাতালের ২৬ দিন দায়িত্ব নিয়েছি, হাসপাতাল এখন অনেক পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন, প্রতিদিন শৌচাগারগুলো পরিস্কার করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পূর্বে সপ্তাহে একদিনও পরিস্কার করা হতো না। আমরা ১৭ জন সদস্য যদি সক্রিয় থাকি, তাহলে ৩৪ হাত কাজ করবে। ৩৪টি হাত থাকলে, ১৭টি ব্রেণ একসঙ্গে কাজ করতে পারব।’
তিনি আরও বলেন, স্বেচ্ছাসেবকরা হাসপাতালে সেবা করার কথা বলে রোগীদের হয়রানি দীর্ঘদিনের। রোগীদের রেফার্ডের নামে ব্যবসা করার বিষয়েও জেনেছি। আমরা রোগীদের কল্যাণে এমন একটি কমিটি চাই, যেখানে স্বেচ্ছাসেবকদের ফ্রি কাজ না করিয়ে তাদের সম্মানীর ব্যবস্থা করে দিতে পারে। যেন রোগীদের হয়রানি বন্ধ করা সম্ভব হবে।
তিনি হাসপতালে রোগীদের অতিরিক্ত স্বজনদের উপস্থিতির বিষয়টিকে একটি গুরুতর সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করেন। সিভিল সার্জন বলেন, গ্রাম থেকে একজন রোগীর সাথে গাড়িভর্তি করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে হাসপাতালে আসে। তারা খাবার খেয়ে পানির বোতল, উচ্ছিষ্ট যেখানে সেখানে ফেলে হাসপাতাল চত্বর অপরিস্কার করে। এছাড়াও রোগীদের স্বজনদের অতিরিক্ত উপস্থিতি হাসপাতালের শৌচাগারের ওপর চাপ ফেলে। এ বিষয়টিও আমাদের নজর রাখতে হবে।সভায় অতিথির বক্তব্যে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব শরীফুজ্জামান শরীফ বলেন, ‘বিগত দিনের হিসেব নিতে গিয়ে যেন রোগী কল্যাণ সমিতির কাজ বাধাগ্রস্ত না হয়, সেদিকটি আগে বিবেচনা করতে হবে। যারা দুস্থ রোগী তাদের দিকে আমরা খেয়াল রাখব, সদর হাসপাতালই যাদের একমাত্র ভরসা, তাদের আমরা সাধ্যমত সেবা দিতে চাই। চিকিৎসকের এ বিষয়টিতে আরও একটু লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন বলে মনে করছি। শরীফুজ্জামান বলেন, ‘আমরা সবাই এগিয়ে এলে দুস্থ রোগীরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে না। যাদের সক্ষমতা আছে, তারা তাদের ইচ্ছে অনুযায়ী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাবেন, সেটা দেশে বা দেশের বাইরে তা নিয়ে আমাদের মাথা ব্যাথা নেই। আমরা বাইরের ক্লিনিক বন্ধ করতে পারব না। তবে হাসপাতালে রোগীদের সঠিক সেবা দিতে পারার নিশ্চয়তা তৈরি করতে পারলেই তাদের পাশে দাঁড়ানো হবে।’
সভায় এছাড়াও বক্তব্য দেন দৈনিক সময়ের সমীকরণ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক নাজমুল হক স্বপন, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বিপুল আশরাফ, পৌর বিএনপির আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম মনি, সমাজসেবার সহকারী পরিচালক আবু তালেব, রোগী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাঈদ হাসান, দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান, আলমডাঙ্গা কলেজের সহকারী অধ্যাপক মহিতুর রহমান, লিটু বিশ্বাস, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা মৎস্য অফিসার হামিদুর রহমান, সহিদুল ইসলাম, প্রথম আলোর চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রতিনিধি শাহ আলম সনি ও শেয়ার বিজের জেলা প্রতিনিধি মফিজুর রহমান।
সভায় কার্যকরি কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে ৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি প্রস্তাব করা হয়। উপস্থিত সদস্যগণ এতে সমর্থন দেন। কার্যকরি কমিটিতে প্রস্তাবিত হয়েছেন জেলা বিএনপির অ্যাড. ওয়াহেদুজ্জামান বুলা, জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির অ্যাড. রুহুল আমিন, চুয়াডাঙ্গা পৌর বিএনপির আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম মনি ও মফিজুর রহমান মনা। সভায় উপস্থিত রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্যবৃন্দ বিভিন্ন পেশার মধ্যে থেকে কমিটির নাম প্রস্তাব করবেন, যা সাধারণ সভায় অনুমোদন দেওয়া হবে।