চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি: কাফনের কাপড় পরে বিষয়ের বোতল হাতে নিয়ে চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে কৃষ্ণপুর মাঠে তিন ফসলি জমিতে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ প্রকল্পের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে স্থানীয় কৃষকরা। কৃষকদের তোপের মুখে ফিরে যান প্রতিনিধি দল।
বৃহস্পতিবার (০৪ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর মাঠে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনে সরেজমিনে তদন্তে আসে ৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। এসময় কৃষকরা কাফনের কাপড় পরিধান করে ও বিষের বোতল হাতে নিয়ে প্রতিবাদ জানান। গ্রামের কৃষক-কৃষাণীরা বিক্ষোভ প্রদর্শন ও এ প্রকল্প বাতিলের দাবিও জানান। কৃষকদের বিক্ষোভে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বিশৃঙ্খলা ও যেকোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এসময় হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় পুলিশ।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, জীবননগর উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর মাঠের জমি খাদ্য উৎপাদনে একটি কৃষি সমৃদ্ধ মাঠ। এ মাঠের জমিতে সব ধরনের ফসল ফলানো হয়। বর্তমান মাঠটি শষ্য-শ্যামল সবুজে ভরা একটি ফসলি মাঠ।
কিন্তু কয়েক বছর আগে ওই গ্রামের ১৮০ একর জমিতে ৫০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের উদ্যোগ নেয় সিঙ্গাপুরভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ‘সাইক্লেক্ট এনার্জি পিটিই লিমিটেড’। ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল জমি বিক্রির জন্য মালিকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।
প্রকল্পের জন্য যে জমি নির্বাচন করা হয়েছে, তা সবই তিন ফসলির। সেখানে প্রকল্প স্থাপন করলে কৃষির ওপর নির্ভরশীল গ্রামের ৫ হাজারেরও বেশি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বেন। পুরো গ্রামে জমির পরিমাণ ৬০০ একর। যার মধ্যে ৬০ শতাংশই কৃষিজমি।
এছাড়া ২০ শতাংশ বসতভিটা ও বাকি ২০ শতাংশ বাগান ও অন্যান্য স্থাপনা। মাঠের জমিতে সব ধরনের ধান, ডাল, পাট, গম, আলু, ভুট্টা, বাদাম, পেয়ারা, তিল এবং বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি চাষ করা হয়।
ঐ সৌর বিদ্যুৎ স্থাপনের বিষয়ে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ভূমি মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার সরেজমিনে কৃষ্ণপুর গ্রামে তদন্তে আসেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মোছাম্মাৎ মমতাজ বেগম, বিদ্যুৎ বিভাগের (নবায়নযোগ্য জ্বালানি-১) উপ-সচিব ও তদন্ত কমিটির সদস্য আলী আফরোজ, তদন্ত কমিটির সদস্য ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর চুয়াডাঙ্গার উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা ও চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. মিজানুর রহমান।
সরেজমিনে কৃষ্ণপুর গ্রামে দেখা যায়, সকাল থেকে গ্রামের নারী-পুরুষ একত্র হয়ে ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে গ্রামের প্রবেশমুখে মানববন্ধন করছেন। উত্তেজনাকর পরিস্থিতি এড়াতে ওই এলাকার মোড়ে মোড়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পুলিশের কড়া নিরাপত্তায় তদন্ত কমিটি দল গ্রামে পৌঁছালে গ্রামবাসী বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
পরে তদন্ত দল ওই গ্রামের মাঠ ঘুরে দেখেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন জীবননগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হাসিনা মমতাজ, জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস এম জাবীদ হাসানসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
তদন্ত শেষে বিক্ষুব্ধ কৃষকদের শান্ত করে ভূমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মোছাম্মাৎ মমতাজ বেগম বলেন, এই ধরনের জমিতে কী ধরনের ফসল হয়, এলাকাবাসী কী চায়, আমাদেরকে এটা তদন্ত করার জন্য পাঠিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়।
আমরা জমি দেখলাম, এখানকার কৃষি অফিসারের কাছে তথ্য নিয়েছি, আপনাদের কথাও আমরা শুনলাম। সব বিষয় বিবেচনা করে আমরা একটি প্রতিবেদন দেব।
এদিকে স্থানীয় কৃষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা কৃষিকাজ করে খাই। আমাদের মাঠে বছরে তিনটির অধিক ফসল চাষ হয়।
আমাদের মাঠে ভুট্টা, ধান, পাট, আলু, পেয়ারা, বাদাম, সব ধরনের ফসল উৎপাদন হয়। আমরা জীবন দিতে রাজি আছি, কিন্তু আমাদের মাঠ দিতে রাজি নাই।