নিউজ ডেস্ক:
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে ৫০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। তবে অর্থমন্ত্রী স্থানীয় সরকার বিভাগের মাধ্যমে সে আবেদন করার পরামর্শ দিয়েছেন।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি চসিকের মেয়র বৃষ্টি মৌসুমে চট্টগ্রামবাসীর দুর্ভোগের কথা তুলে ধরে অর্থমন্ত্রীর কাছে একটি চিঠি দেন। ওই চিঠিতে জলাবদ্ধতা দূরীকরণসহ নাগরিক সুবিধা বাড়াতে সরকারের সহায়তা কামনা করেন। তিনি কয়েকটি প্রকল্পের কথাও তুলে ধরেন। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের জন্য আড়াই হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন। এর মধ্যে আগে ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণ দেখিয়ে আরো ৫০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ চাওয়া হয়।
সূত্র জানায় এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আবেদন করার পরামর্শ দিয়েছেন। সিটি করপোরেশনগুলো স্থানীয় সরকার বিভাগের অন্তর্ভূক্ত। কাজেই সিটি করপোরেশনের কোনো উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিতে হলে সেটি স্থানীয় সরকারের মাধ্যমেই আসতে হবে। আর তাই অর্থমন্ত্রী নিয়ম অনসুরণ করে আবেদন করতে পরামর্শ দিয়েছেন।
এদিকে শনিবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, নগরীর জলাবদ্ধতার সমস্যা দীর্ঘদিনের। এ সমস্যা সমাধানে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
অর্থমন্ত্রীর কাছে অতিরিক্ত বরাদ্দ চেয়ে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমেই বরাদ্দ চেয়েছি। স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠনো হয়েছিল। অর্থ বিভাগ থেকে বেশকিছু বিষয় জানতে চাওয়া হয়েছিল। সে বিষয়ে আমরা স্থানীয় সরকার বিভাগকে অবহিত করেছি। তারা প্রয়োজনীয় তথ্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানাবে।
তিনি বলেন, বৃষ্টির কারণে ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় অর্থমন্ত্রীর কাছে অতিরিক্ত ৫০০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছিল। সেটির বিষয়ে মাননীয় অর্থমন্ত্রী স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে আবেদন করতে বলেছেন। আমরা সেভাবে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা আগে ২ হাজার কোটি টাকা চেয়েছিলাম। বৃষ্টিতে প্রকল্পের ক্ষতি হওয়ায় নতুন করে আরো ৫০০ কোটি টাকা চেয়েছি।
জানা গেছে, আগাম বর্ষণে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে বিস্তীর্ণ সড়ক, অলিগলি পানিতে তলিয়ে যেতে শুরু করে। বর্ষা মৌসুমে এ অবস্থা তীব্র আকার ধারণ করে। ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সর্বমহলে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়ে। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী হারুন অর রশীদ বলেন, সম্প্রতি চট্টগ্রামে সকাল ৬টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ৬২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। এতে শহরের অধিকাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী। অধিকাংশ বাড়ির নীচতলায় ও দোকানপাটে পানি ঢুকে ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করে। অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালামাল নষ্ট হয়ে যায়।
মাঝারি বর্ষণেই নাগরিক জীবনে নাজুক অবস্থা সৃষ্টি হয়। বর্ষা মৌসুমে তা আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করে। পরিস্থিতি উত্তরণে চাক্তাই খালসহ নগরীর খালগুলো দ্রুত খনন ও নালার গভীরতা বাড়াতে এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানাচ্ছেন।
জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দিতে অস্থায়ী ব্যবস্থা হিসেবে বিভিন্ন সড়ক উঁচুকরণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। এক এলাকার সড়ক উঁচু করলেই নতুন করে অন্য এলাকা পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। চলতি বছর মধ্য চৈত্রে দুই ঘণ্টার বর্ষণে নগরীর আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকা, এক্সেস রোড, ছোটপুল, শান্তিবাগ, সিডিএ আবাসিক এলাকা, বেপারী পাড়া, মুহুরী পাড়া, সিজিএস কলোনি, হালিশহর হাউজিং এস্টেট, মুরাদপুর, বাদুরতলা, কাপাসগোলা, বাকলিয়া, চকবাজার কাঁচাবাজার, কাতালগঞ্জ, বহদ্দারহাট, চান্দগাঁও, নাছিরাবাদ, পতেঙ্গা, দেওয়ানবাজার ও কালুরঘাট শিল্পাঞ্চলসহ বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে যায়।
সূত্র জানায়, এবারের বর্ষণে যেসব স্থানে কোনোদিন পানি ওঠেনি, সে ধরনের অনেক এলাকাতেও নালা উপচে সড়কে পানি গড়িয়ে যেতে দেখা গেছে। অপরদিকে, মুরাদপুর ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ এবং নিচের সড়ক প্রশস্তকরণ কাজে বিভিন্ন ভবন ভেঙে ফেলায় নগরীর প্রধান সড়কে জলাবদ্ধতার পাশাপাশি তীব্র যানজটও সৃষ্টি হয়। এ সময় নগরবাসীকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের মুখোমুখি হতে হয়।
নগরীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা জানান, নালা-নর্দমাগুলোর মাটি উত্তোলনের পর তা অন্যত্র সরিয়ে না নিয়ে শুকানোর নাম করে সড়কের পাশে ফেলে রাখা হয়। ফলে তা ধুলো আকারে আবার নালায় গিয়ে পড়ে। এর মধ্যে বৃষ্টি হলে তা সরাসরি নালায় জমা হয়। এ কারণে নালাগুলো ভরাট হয়েছে। ফলে বৃষ্টির পানি দ্রুত সড়কে উঠে যাচ্ছে।
গত কয়েক বছরে বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি জোয়ারের পানিতে তলিয়ে দেশের প্রধান বাণিজ্যিককেন্দ্র চাক্তাই খাতুনগঞ্জে মজুদ থাকা কোটি কোটি টাকার পণ্য নষ্ট হওয়ায় উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে ব্যবসায়ীদের মাঝে