বায়েজীদ (গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি) :
ব্রহ্মপুত্র নদের কোলে গাইবান্ধার দূর্গম চরাঞ্চলে এবার ৩০ হাজার পরিবারে জ্বলবে বিদ্যুতের আলো। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ও ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক এক্সপানশন (ডিএনই) নামের প্রকল্পের প্রায় ৬০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড গাইবান্ধার নির্বাহী প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান।
তিনি জানান, আগামী ফেব্রুয়ারীতে বেশ কয়েকটি চরাঞ্চলে প্রথম দফায় বেশ কিছু পরিবারে বিদ্যুত সংযোগ দেয়া সম্ভব হবে আর তিন উপজেলার চরাঞ্চলে ৩০ হাজার পরিবারে বিদ্যুতের আলো জ্বলে উঠবে মার্চে। হাবিবুর রহমান জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ ‘ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে গাইবান্ধা সদর, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চলের প্রায় ৩০ হাজার পরিবারকে সাবমেরিন ক্যাবল সিস্টেমের মাধ্যমে বিদ্যুতের আওতায় আনতে এই বিদ্যুৎ প্রকল্পে ব্যয় হবে প্রায় ১২০ কোটি টাকা।
যমুনা-ব্রহ্মপুত্র বেষ্টিত গাইবান্ধা সদর, সাঘাটা, ফুলছড়ি ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ১৬৫টি চরাঞ্চলে কয়েক লাখ মানুষের বসবাস। দিনের আলো নিভে যাবার পর এসব চরাঞ্চলে অন্ধকারে ছেয়ে যায়। কোন কোন পরিবারে সোলারের আলো জ্বলে উঠলেও অনেকের ভরসা কুপির আলো।
ওই তিন উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে চরাঞ্চলে ব্যাপক পরিবর্তন হবে বলে মন্তব্য করেন গাইবান্ধা নাগরিক পরিষদের সদস্য সচিব আরিফুল ইসলাম বাবু। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ পৌছলে চরাঞ্চলের আর্থসামিজক উন্নয়ন হবে, ছেলেমেয়েরা লেখাপড়ার সুযোগ পাবে, সবমিলিয়ে দুর্গম চরের লাখো মানুষের জীবন মানের উন্নয়ন হবে।
ফুলছড়ি উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শাহ অালম যাদু বলেন, যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের বুকে জেগে ওঠা চরাঞ্চলে অসংখ্য পরিবার কষ্টকর সংগ্রাম করে ফসল ফলিয়ে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করলেও তাদের ভাগ্যে বিদ্যুতের অালো জোটেনি। ফলে এসব চরাঞ্চলের মানুষেরা অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে ছিলেন। বিদ্যুৎ পেলে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে।
নির্বাহী প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান জানান, বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমের আওতায় চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে গাইবান্ধার সদর উপজেলার কামারজানি, গিদারী, মোল্লারচর ও সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া-ফুলছড়ি উপজেলার ফজলুপুর, গজারিয়া, উড়িয়া এবং ফুলছড়ির ব্রহ্মপুত্র নদীরতল ও চরের মাটির নিচ দিয়ে ১১ কিলোমিটার সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগ নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড গাইবান্ধার তত্বাবধানে ৩৬টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবং গাইবান্ধা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রায় ৬০০ কিলোমিটার লাইন ও দুটি বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্র স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। অফগ্রিডে ৩৩/১১ কেভি, ১০ এমভিএ ফুলছড়ি-২ (বাজে ফুলছড়ি) ও ফুলছড়ি-৩ (গাবগাছী) বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে। ওইসব চরাঞ্চলবাসীদের মাঝে বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছাতে ইতিমধ্যে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে চরাঞ্চলবাসী উচ্ছাস প্রকাশ করেছে। তারা বিদ্যুৎ পাবেন, এমনটা কখনো ভাবেনি। নিরবচ্ছিন্ন বৈদ্যুতিক সুবিধা পাবার বিষয়টি তাদের কাছে ছিলো স্বপ্নের মতো।
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের গাইবান্ধা নির্বাহী প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান আরো জানান, চলতি মাসে বিদ্যুতায়নের কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও শুকনো মৌসুমে নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় নৌ যোগে কোনো মালামাল পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। হয়তো আগামী বছরের মার্চ মাসের মধ্যে এটি সম্পন্ন করা যেতে পারে।