বিপ্লব নাথ (চট্টগ্রাম) : গত কয়েকদিন ধরে চট্টগ্রামে থেমে থেমে ভারী থেকে মাঝরী ধরণের বৃষ্টি হচ্ছে। এর মধ্যে রবিবার থেকে নগরীতে টানা ভারী বর্ষণে জীবন যাত্র থেমে গেছে অনেকটা। আজ সোমাবার ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে নগরীর নির্ন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। ভারী বৃষ্টির সাথে যোগ হয়েছে জোয়ারের পানি।
আবহাওয়াবিদদের মতে, অমাবস্যার সময় জোয়ারের পানির উচ্চতা বেড়ে যায়। এতে বৃষ্টি, জোয়ার ও অমাবস্যার সম্মিলনে পানিতে অস্বাভাবিকভাবে তলিয়ে গেছে নগরীর অধিকাংশ এলাকা। হাঁটু, কোমর ও বুক ছুঁই ছুঁই পরিমাণের পানিতে থৈ থৈ করছিল নগরের জনপদ। এতে অসহনীয় ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে নগরবাসীকে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর কর্মকর্তা জানান, চট্টগ্রামে মাঝারী থেকে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। তা থেমে থেমে অব্যাহত থাকবে। আজ সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত চট্টগ্রামে ২৪ ঘন্টায় ১৬৫ দশমিক ০৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রের্কড করা হয়েছে।
ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে কোথাও কোথাও পাহাড় ধসের সম্ভাবনা রয়েছে। সমুদ্র বন্দরগুলোকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখানো হয়েছে।
এদিকে টানা বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম মহানগরীতে পানি জমে ফের জলবদ্ধতা দেখা দিয়েছে ফলে সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকা হাঁট পরিমাণ কোথাও কোথাও কোমর সমান পানিতে ডুবে গেছে। এতে করে নাগরিক দুভোর্গ বেড়ে গেছে।
রবিবার গভীর রাত থেকে চট্টগ্রামে টানা বর্ষণ চলছে। সকাল থেকে নগরীর পুরাতন চান্দগাঁও, মোহরা, রাস্তারমাথা, বহদ্দারহাট, ষোলশহর ২ নম্বর গেট, জিইসি মোড়, প্রবর্তক মোড়, কাপাসগোলা, চকবাজার, কালামিয়া বাজার, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, সিডিএ এলাকা, ব্যাপারী পাড়া, শান্তিবাগ, রঙ্গি পাড়া, মহুরি পাড়া, ছোটপুল, বড়পোল, হালিশহর, পোর্ট কানেক্টিং রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টির পানিতে ডুবে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
নগরীর বেশ কিছু স্কুল অফিস ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়ায় এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। নগরীর বিভিন্ন সড়কে পানি বন্দি হয়ে আটকা পড়েছে শত শত যানবাহন। চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন অফিসগামী ও কর্মস্থলে যাওয়া লোকজন।
ঘরবাড়ি, দোকানপাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা এখন পানির নিচে। হাঁটু, কোমর ও বুক সমান পানিতে ভিজে কেউ কেউ যাতায়াত করছে প্রয়োজনীয় গন্তব্যে। বাসার নিচে পানি থাকায় অনেকেই ঘরবন্দী ছিলেন। কোন কোন ভবনের নিচ তলার জেনারেটর রুমেও পানি প্রবেশ করেছে।
পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গৃহস্থলির বিভিন্ন আসবাবপত্র, দোকানপত্রের মালামাল, ব্যবসায়িক স্থাপনাসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি। পানির নিচে থাকায় জলমগ্ন এলাকার সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন কার্যালয়ের কার্যক্রম একপ্রকার বন্ধ থাকে।
এদিকে দেশের বৃহৎ পাইকারী বাজার খাতুনগঞ্জসহ পার্শ্ববর্তী আসাদগঞ্জ, চাক্তাই পানির নিচে অস্বাভাবিকভাবে তলিয়ে গেছে। সেখানে দোকান, গোডাউনে পানি প্রবেশের ফলে বিভিন্ন মজুদকৃত খাদ্য পণ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরাবলেন, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে এত পানি উঠার রেকর্ড ইতিহাসে আগে কখনো হয়নি। এখানে প্রথম এত বেশি পানি হয়েছে। পানিতে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ মিলে ব্যবসায়ীদের শতকোটি টাকা তি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড় ধসের আশংকা প্রকাশ করায় গতকাল চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান চৌধুরী ফেইসবুকে এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের সরে যাওয়ার জন্য আহবান জানিয়েছেন।