বায়েজীদ (গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি) :
আকস্মিকভাবে ভয়াবহ আকার ধারণ করা চলমান বন্যায় গোবিন্দগঞ্জ পৌর শহরের ২নং ওয়ার্ডের সম্পূর্ণ,১নং ওয়ার্ডের একাংশ,৩নং ৪নং ৫নং ও ৭নং ওয়ার্ডের একাংশের ঘরবাড়ি ও রাস্তা ঘাট ডুবে চরম দূর্ভোগে পড়েছে শহরবাসী।
জানা গেছে,শহরে অবস্থিত উপজেলার সরকারী-বেসরকারী গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স,পল্লী উন্নয়ন অফিসারের কার্যালয়,রেজিস্ট্রার অফিস এলাকা জলমগ্ন হয়েছে,এছাড়া উপজেলা ডাক বাংলো এলাকা,গোবিন্দগঞ্জ পুলিশ ষ্টেশন এলাকাসহ উপজেলার বিভিন্ন দাপ্তরিক অফিসে বন্যার পানি উঁকি দিচ্ছে এবং এসকল এলাকার চলাচলের রাস্তাঘাট ডুবে গেছে।এতে এসকল প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও সেবা প্রত্যাশীরা চরম দূর্ভোগে পড়েছে।
এদিকে গোবিন্দগঞ্জ-দিনাজপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক ডুবে গেছে।এ মহাসড়ক ডুবে যাওয়ায় যানচলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে।এছাড়াও শহরের ঝিলপাড়া এলাকার বাজার রোড ডুবে গেছে।শহরের বিভিন্ন ছোট্ট ব্যাবসায়ী প্রতিষ্ঠান ও কলকারখানায় পানি প্রবেশ করায় বিভিন্ন ব্যাবসায়িক সরঞ্জাম বিনষ্ট ও ব্যাবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছে ব্যাবসায়ীরা।
এছাড়াও শহরের বিভিন্ন নার্সারীতে পানি প্রবেশ করায় ফল,ফুলসহ বিভিন্ন প্রাজাতির ছোট চারাগাছ ও বীজতলা ডুবে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে কৃষক।শহরের নয়ন-সাথী নার্সারীর স্বত্বাধিকারী জাবেদ আলী জানান, রবিবার আমার নার্সারীতে পানি প্রবেশ করে এরপর ফল,ফুলসহ বিভিন্ন প্রজাতির ২০হাজার চারা পানিতে ডুবে যায়। পেঁপেঁসহ অন্যান্য বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। কিছুু দামী ফুলের কাটিং,গ্রাফটিং পানি পেয়ে পচন ধরেছে।
বন্যার এ পরিস্থিতিতে চরম দূর্ভোগে পড়েছে শহরবাসী।তবে ভুক্তভোগী এ শহরবাসীর দাবী পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের খলসীচাঁদপুর এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কাটা অংশ মেরামত ও স্লাইসগেট নিয়ন্ত্রণ না করায় ঐ অংশ দিয়ে বন্যার পানি এসে শহরবাসী প্লাবিত হয়েছে।তাদের দাবী বাঁধের ভাঙ্গন অংশ মেরামত করলে এবং স্লাইসগেট নিয়ন্ত্রণ করলেই প্লাবন থেকে রক্ষা পেতো শহরবাসী।
পৌরশহরের বোয়ালিয়া বাঁধ নামক স্থান হতে কাইয়াগঞ্জ এলাকা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার একটি বাঁধ রয়েছে।
এই বাঁধটি মূলত গোবিন্দগঞ্জ শহর রক্ষা ওয়াপদা বাঁধ নামে পরিচিত।এ বাঁধে একটি স্লাইসগেট রয়েছে এবং বালু ব্যাবসায়ীরা নদী থেকে বালুর গাড়ী পারাপারের জন্য এই বাঁধের উত্তরের ১টি পয়েন্ট প্রায় ১০ বছর আগে কেটে ফেলেছে।তখন থেকে সেটা আর রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়না।তার কিছু দূরে আরও একটি অংশ ভাঙা রয়েছে। এদিকে স্লাইসগেটও খুলে রাখা হয়।সুতরাং বাঁধের কাটা অংশ রক্ষণাবেক্ষণ না করা ও স্লাইসগেট খোলা রাখায় প্রতি বছর নদীর পানি বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথেই গোবিন্দগঞ্জ শহর এলাকায় পানি প্রবেশ করে।
গত কয়েক বছরের বন্যা ততোটা বড় না হওয়ায় বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারেনি শহরবাসী।তবে এবার আকস্মিকভাবে হঠাৎ পানি বৃদ্ধির গত ২১ বছরের রেকর্ড ভাঙ্গায় বিষয়টি মারাত্মক উপলব্ধি করছে শহরবাসী।পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষের তথ্যে জানা গেছে শুক্রবার (২রা অক্টোবর) সকাল ৬টায় পূর্ববর্তী ২৪ ঘন্টায় গোবিন্দগঞ্জ কাটাখালী পয়েন্টে করতোয়া নদীর পানি ২সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।যা ৯৮এর পর সকল রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।
তাই পরবর্তীতে শহরকে এমন বন্যার পানি হতে রক্ষায় শহর রক্ষা বাঁধটি রক্ষণা বেক্ষণ করতে এবং স্লাইসগেট নিয়ন্ত্রণে রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছে বন্যা কবলিত শহরবাসী।