বায়েজীদ (গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি) :
করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যেই সরকারি শর্ত মেনে গত মধ্য মে থেকে দেশের মার্কেট ও বিপণিবিতানগুলো খুললেও গাইবান্ধায় ক্রেতা সঙ্কটে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। সকাল থেকে দোকান খুলে বসে থাকলেও বিকেল পর্যন্ত অনেকে কিছুই বিক্রি করতে পারছেন না। ক্রেতার দেখা নেই বললেই চলে।
নিত্যপণ্য বাদে অন্য পণ্যের ক্রেতা এলেও তা হাতেগোনা। আবার বিলাসী পণ্যর দোকানে দুই থেকে তিন দিনেও দেখা মেলেনা একজন ক্রেতার। যে দু’চারজন আসছেন তারা পণ্য উল্টেপাল্টে দেখে চলে যাচ্ছেন। সোমবার গাইবান্ধার কয়েকটি মার্কেট ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
গাইবান্ধার স্টেশন রোডে পৌর মার্কেট ঘুরে দেখা গেল, প্রায় প্রতিটি দোকানই ক্রেতাশূন্য। বিক্রেতারা মাস্কে মুখ ঢেকে চুপচাপ বসে আছেন। সারা বছর দুই ঈদ আর পূজাতেই পোশাক-আশাকের ব্যবসার যা লাভ, তা দিয়েই দোকানমালিক ও কর্মচারীদের দিন চলে। করোনাকালে গত ঈদে প্রতিটি মালিকের লোকসান না হলেও লাভ তেমন একটা হয়নি। কর্মচারীরা শতভাগ বেতন পাননি।
এদিকে করোনার সাথে বন্যা যোগ হওয়ায় আসছে ঈদেও লোকসানের আশঙ্কা করছেন তারা। কীভাবে এই সংকট কাটবে, তাই নিয়ে সবাই খুবই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। এমন অবস্থায় দোকান খোলা রেখে পুঁজি ভেঙে সংসার চালাতে হচ্ছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের। তবে ভিন্নচিত্র দেখা গেছে নিত্য ও খাদ্যপণ্যর দোকানগুলোতে।
ব্যবসায়ীরা জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকাল থেকে শোরুম খুলে বসে আছি ক্রেতার দেখা নেই। যাও দুই চারজন ক্রেতা মার্কেটে ঢুকছেন দেখে শুনে চলে যাচ্ছেন, কিনছেন না। এ অবস্থা চললে মাস শেষে কর্মচারীদের বেতন ও দোকান ভাড়া উঠবে কিনা চিন্তায় আছি। দোকান খুলে নতুন করে ঝামেলায় পড়েছি।
দোকান বন্ধ থাকার চেয়ে খোলা রাখায় সংকট আরো বাড়ছে। কারণ বেচাকেনা হোক বা না হোক দোকানের দৈনিক খরচ মেটাতে হচ্ছে।
সরেজমিন গাইবান্ধার সালিমার সুপার মার্কেট, তরফদার ম্যানশন, ইসলাম প্লাজাসহ কাচারী বাজার, সার্কুলার রোড, স্টেশন রোডের মার্কেট-দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, খাদ্য পণ্যের দোকান ছাড়া অন্য পণ্যে চলছে মন্দাভাব। ক্রেতা না মিললেও বিক্রেতারা বসে থাকেন পসরা সাজিয়ে।
অথচ স্বাভাবিক সময় এসব দোকানে প্রতিদিন কেনাকাটায় ক্রেতাদের ভীড়-জটলা লেগেই থাকতো। ব্যবসার এমন মন্দা অবস্থার কথা তাঁরা কখনো ভাবতেও পারেননি।
জেলা শহরের স্টেশন রোডে একটি রেডিমেট পোশাকের দোকানের সত্বাধিকারী শামিম হক জানান, এখন দোকান-মার্কেটে কোনো ক্রেতা নেই। করোনা সংক্রমণ বাড়ায় দোকানে ক্রেতাদের উপস্থিতি কম। তাছাড়া করোনায় মানুষের আয়-রোজগারে টান পড়ায় নিত্যপণ্য ছাড়া বিলাসীপণ্যে আগ্রহ হারিয়েছেন তারা।
এ অবস্থায় মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে এসেছে বন্যা, সহসা ক্রেতা বাড়ার সম্ভাবনা নেই। দিন যত যাচ্ছে ব্যবসায়ীরা আরো বেশি সংকটে পড়ছে। ক্রেতা নেই তবু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধও রাখা সম্ভব নয়। ব্যবসায়ীরা এখন উভয় সংকটে।
গাইবান্ধা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মো. মকছুদার রহমান শাহান বলেন, ‘করোনায় দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত। বৈশ্বিক এই মহামারিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ইতোমধ্যে আমাদের দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সব মিলিয়ে করোনা প্রভাবে সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকা-ে একরকম বিশৃঙ্খল অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতি মোকাবেলা এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের রক্ষায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ব্যবসায়ীদের জন্য স্বল্পসুদে ঋণের ব্যবস্থা করা জরুরী হয়ে পড়েছে।
এ ছাড়াও দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষগুলোর সামাজিক নিরাপত্তা জোরদার এবং করোনায় সৃষ্ট সংকটময় অর্থনৈতিক পরিস্থিতি উত্তরণে সরকার, প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বিত কর্মপরিকল্পনাও প্রয়োজন’।