বায়েজীদ (গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি) :
নিষেধাজ্ঞা সত্বেও পলাশবাড়ীতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিনগুণ বেশি মূল্যে স্থাপিত হচ্ছে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন।
সরকার দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে শিক্ষক হাজিরা শতভাগ নিশ্চিত করতে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছিল। নানা অনিয়মের অভিযোগে গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর ডিজিটাল হাজিরা মেশিন স্থাপন বন্ধ করে দেয়। এই নির্দেশনা অমান্য করে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলায় গত অর্থ বছরের ¯িøপ ফান্ড থেকে ২১৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন স্থাপন করা হচ্ছে। কিন্তু ডিজিটাল হাজিরা মেশিন স্থাপন নিয়ে তুঘলকি কারবার চলছে পলাশবাড়ী উপজেলায়।
এমনকি পূর্বের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেওয়া টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন অমান্য করে নি¤œমানের ডিজিটাল হাজিরা মেশিন স্থাপন করা হচ্ছে। মাত্র ৭ হাজার টাকার এই নি¤œমানের ডিজিটাল হাজিরা মেশিন ২২ হাজার টাকা করে নিতে বাধ্য হচ্ছে প্রধান শিক্ষকেরা। প্রতিটি মেশিনে প্রায় ১৫ হাজার টাকা করে বেশি নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ডিজিটাল হাজিরা মেশিন কেনা থেকে উপজেলা শিক্ষা অফিসের সিন্ডিকেটের হাতে উঠছে প্রায় ৩২ লাখ টাকা।
এদিকে, গত ২৩ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ৩৮.০১.০০০০.৭০০.৯৯.০০৩.১৮-৬৩২/৫৭৪ স্বারক মূলে স্লিপ ফান্ডের টাকা থেকে ডিজিটাল বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন না কেনার জন্য মাঠ পর্যায়ে নির্দেশনা প্রদান করে। সেই আলোকে সারাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন স্থাপন কার্যক্রম বন্ধ আছে।
কিন্তু পলাশবাড়ীতে করোনাকালীন বিদ্যালয় বন্ধ থাকার পরেও উপজেলা শিক্ষা অফিস অর্থ আত্বসাতের উদেশ্যে স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির ভাইকে দিয়ে অতিরিক্ত মূল্যে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন নিতে শিক্ষকদের বাধ্য করছে। যা অধিদপ্তরের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
অপরদিকে, পলাশবাড়ী উপজেলায় চলতি ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের ¯িøপ ফান্ড থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য ডিজিটাল হাজিরা মেশিন স্থাপন করা হচ্ছে। কিন্তু চলতি বছরের স্লিপ গাইডলাইনে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন স্থাপনের কোন নির্দেশনা নাই।
একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, গত ২৩ অক্টোবর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে বলা হয় অন্তত ১৫টি স্পেসিফিকেশন দেখে এবং বাজারে প্রচলিত বায়োমেট্রিক মেশিন যেটি কার্যক্ষম ও উপযুক্ত তা সাশ্রয়ী মূল্যে কিনতে হবে। নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানের সরবরাহ করা মেশিনই যে নিতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু পলাশবাড়ী শিক্ষা অফিস প্রধান শিক্ষকদের নির্দিষ্ট সরবরাহকারীর কাছ থেকে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন কিনতে বাধ্য করছে। উপজেলা শিক্ষা অফিস এ্যাকটিভ পাওয়ার লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠান থেকে মেশিন নিতে বলছে। তাদের সরবারহকৃত মেশিন বাজারের নি¤œমানের মেশিন হলেও দাম প্রায় তিনগুন বেশি।
এ্যাকটিভ পাওয়ার লিমিটেড উপজেলা শিক্ষা অফিস ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে হাত করে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। এই সিন্ডিকেটের সহায়তায় জেডকেটেকো ব্রান্ডের ডিজিটাল হাজিরা মেশিন বিদ্যালয়গুলোতে সরবরাহ করা হচ্ছে। যার বাজারে সর্বোচ্চ মূল্য ৬ হাজার টাকা। অনলাইনেও সাড়ে ৬ হাজার টাকায় কেনা যায়। আনুষাঙ্গিক ব্যয় ধরলেও এই মেশিনের মূল্য ৭ হাজার টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু বিদ্যালয়গুলোকে মেশিন প্রতি দিতে হচ্ছে ২২ হাজার টাকা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলার একজন প্রধান শিক্ষক জানান, ২১ সেপ্টেম্বর দুপুরে এই নি¤œমানের ডিজিটাল হাজিরা মেশিন স্থাপনের উদ্বোধন করা হয়েছে। ক্লাস্টার ভিত্তিক ধরে এই হাজিরা মেশিন নিতে হচ্ছে। কিন্তু প্রধান শিক্ষকরা এই নি¤œমানের ডিজিটাল হাজিরা মেশিন নিতে ইচ্ছুক নয়। কিন্তু উপজেলা শিক্ষা অফিস শুধু নিজেদের কমিশন নিশ্চিত করার স্বার্থে তাদের এই মেশিন নিতে বাধ্য করছে।
সরবারহকারী প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট করে দেওয়ার কথা অস্বীকার করে উপজেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুস সালাম জানান, তিনি কোন প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট করে দেননি। তারা শুধু শিক্ষকদের ডিজিটাল হাজিরা মেশিন স্থাপন করার কথা বলেছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির নির্দেশেই এ্যাকটিভ পাওয়ার লিমিটেড থেকে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন শিক্ষকরা নিচ্ছে।
নিষেধাজ্ঞা থাকা স্বতেও কেন হাজিরা মেশিন নিচ্ছেন এই প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, গত ২১ জানুয়ারীর দেওয়া চিঠির আলোকেই হাজিরা মেশিন স্থাপন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুস সালামের দেওয়া তথ্য মতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে গিয়ে দেখা যায়, গত ২১ জানুয়ারীতে দেওয়া চিঠিতে পূর্বে ক্রয়কৃত হাজিরা মেশিন যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে কিনা তা জানতে চাওয়া হলেও নতুন করে ক্রয় করার আদেশ দেওয়া হয়নি।
এদিকে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, এ্যাকটিভ পাওয়ার লিমিটেড নামের যে প্রতিষ্ঠানটি ডিজিটাল মেশিন সরবরাহ করছে তার অংশীদার স্থানীয় একজন জনপ্রতিনিধির ছোট ভাই। অংশীদারের একজন পলাশবাড়ীর একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির ভাই হওয়ায় রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে নি¤œমানের ডিজিটাল হাজিরা মেশিন অতি চড়ামূল্য নিয়ে সরবরাহ করছে।