নিউজ ডেস্ক:
প্রচণ্ড গরমে ঠাণ্ডা কোমল পানীয় স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। গবেষণায় দেখা গেছে, কোমল পানীয়তে কোনো পুষ্টি উপাদান তো নেই-ই বরং দেহের জন্য ক্ষতিকর কিছু রাসায়নিক উপাদান রয়েছে। আমেরিকা, মালয়েশিয়া, জাম্বিয়া এবং সিঙ্গাপুরসহ বেশ কিছু দেশের গবেষণার রিপোর্টে বলা হয়েছে- নিয়মিত কোমল পানীয় খাওয়াতে দাঁতের, হাড়ে, পেশির ও লিভারে জটিল রোগ হয়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় শিশু-কিশোরদের।
কোমল পানীয়ের অন্যতম উপাদান হচ্ছে ক্যাফেইন। ক্যাফেইন একটি আসক্তির মাদক, যা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে উত্তেজিত করে। এটি দেহকে কৃত্রিমভাবে উত্তেজিত করে। হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি করে, সাময়িক বুদ্ধিবৃত্তি বাড়ায় এবং অবসন্নভাব বা শ্রান্তি দূর করে। অত্যধিক ক্যাফেইন গ্রহণের ফলে বর্ধিত হারে মূত্রাশয় ও পাকস্থলীর ক্যান্সার এবং উচ্চরক্ত চাপ দেখা দেয়। এটি শিশুদের মধ্যে জন্মবৈকল্য সৃষ্টি করে। ডায়াবেটিসের কারণ এবং পাকস্থলীর দেয়ালের ক্ষতি করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, শারীরিক কঠোর পরিশ্রমের পর কোমল পানীয় পান করলে ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়ামের অভাব ঘটতে পারে। গবেষকরা বলেন, বেশির ভাগ কোমল পানীয় ফসফরাস, ক্যালসিয়াম এবং হাড়ের ক্ষতিকে দ্রুত করে দেয়।
কৃত্রিম মিষ্টিকারক হিসেবে কোমল পানীয়তে এসপারটেম, এসিসালফেম ও স্যাকারিন ব্যবহার করা হয়। এগুলো স্মৃতি নষ্ট, মৃগীর খিঁচুনি, বমিভাব, ডায়রিয়া, অস্পষ্ট দৃষ্টি, মস্তিষ্কের ক্যান্সার, মূত্রাশয়ের ক্যান্সার সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এসব গ্রহণে লিভার সিরোসিসের মতো জটিল রোগ হতে পারে।
কোমল পানীয়কে সজীবতা ও অম্লস্বাদ আনয়নের জন্য সাইট্রিক অ্যাসিড, ফসফরিক অ্যাসিড এবং কদাচিৎ মেলিক অ্যাসিড ও টারটারিক অ্যাসিড ব্যবহার করা হয়। ব্রিটিশ দন্ত সংস্থার মতে, অতি মিষ্ট পানীয় অথবা অম্লস্বাদযুক্ত পানীয় পান করার পর দাঁত পরিষ্কার করলেও দাঁতের ক্ষতি হয়। ব্রিটেনে এক জরিপে দেখা গেছে, যারা নিয়মিত কোমল পানীয় পান করে তাদের মধ্যে শতকরা ২০ ভাগ দাঁতের রোগে ভোগে। একটি দাঁত কোমল পানীয়তে দু’দিন রেখে দিলে দাঁতটি নরম হয়ে যায়। ফসফরিক অ্যাসিডের ফসফরাস মানুষের পাকস্থলীর হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের সাথে বিক্রিয়া করে বদহজম, গ্যাস এবং পাকস্থলী স্ফীতির সৃষ্টি করে।
অধিক চাপের কার্বন-ডাইঅক্সাইড কোমল পানীয়তে বুঁদ বুঁদ সৃষ্টি করে। কার্বন-ডাইঅক্সাইড একটি বিষাক্ত দূষিত পদার্থ। বাতাসে এর পরিমাণ বাড়লে বাতাস দূষিত হয়। অথচ এই দূষিত কার্বনডাই-অক্সাইড আমরা কোমল পানীয়ের সাথে খাচ্ছি। ফলে ফুসফুসের জটিল রোগ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কোমল পানীয়ের মূল উপাদান ৯৯ শতাংশ ডিসটিলড ওয়াটার। সমীক্ষায় দেখা গেছে, যে যত বেশি ডিসটিলড ওয়াটার পান করবে তার মধ্যে তত খনিজ পদার্থের স্বল্পতা ও অ্যাসিড অবস্থার সৃষ্টি হবে।
কোমল পানীয় সংরক্ষণ মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য কার্বনিক অ্যাসিড, বেনজয়িক অ্যাসিড বা সোডিয়াম বেনজয়েট দেয়া হয়। এগুলো হাঁপানি, ফুসকুড়ি এবং অতি সক্রিয়তার কারণ ঘটায়। বস্তু রিবঞ্জনে কিংবা পরিষ্কার করতে যে সালফার ডাই-অক্সাইড ব্যবহার করা হয়, তা রক্তিমআভা, মূর্ছাভাব, ত্বক স্ফীতি, মাংসপেশি ফোলা, দুর্বলতা, বুকের টান টানভাবের কারণ ঘটায়। হাঁপানিগ্রস্ত রোগীর হাঁপানি বেড়ে যায়।
রঙিন কোমল পানীয় বেশি ক্ষতিকর। কারণ ব্যবহৃত কৃত্রিম রঙ মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর পেপসির টারট্রাজিনের রঙ কমলা-হলুদ। এই রঙ এলার্জিক বিক্রিয়া সৃষ্টি করে বলে নরওয়ে ও সুইডেনে এটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এটি ক্যান্সার সৃষ্টিকারক এজেন্ট। মিরিন্ডা অরেঞ্জে সানসেট ইয়েলো এবং টারট্রাজিন দেয়া হয়। এটিও ক্যান্সার সৃষ্টিকারক। এটিও ওই দেশ ও ফিনল্যান্ডে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অন্য রঙও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর।
কোমল পানীয়কে ঠাণ্ডা রাখার জন্য ইথাইলিন গ্লাইকোল দেয়া হয়। এই রাসায়নিক পদার্থ আর্সেনিকের মতোই ধীরঘাতক। এক ঘণ্টার মধ্যে কেউ চার লিটার কোমল পানীয় খেয়ে মৃত্যুবরণ করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে ১২-১৫ বছর বয়সের স্কুলগামী ৫৯১ জন ছেলে এবং ৭৪৪ জন মেয়ের ওপর গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, অতিরিক্ত পরিমাণে নিয়মিত কার্বনেটেড কোমল পানীয় পান করার ফলে তাদের হাড়ে খনিজ পদার্থের পরিমাণ কমে গেছে। এতে দাঁতের ও হাড়ের বিভিন্ন রকমের রোগ হয়।