স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহঃ
করোনা সংকটে গরীব অসহায় মানুষের মাঝে সরকার বিভিন্ন ভাবে ত্রাণ সহযোগিতার জন্য কার্ডের ব্যবস্থা করেছেন। এসব কার্ডের তালিকায় নিজের এলাকার প্রকৃত অসহায় ও দুস্থরা স্থান না পাওয়ায় ফেসবুকে একটা আক্ষেপের পোস্ট দেন শনিবার সকালে। স্ট্যাটাসটি দেওয়ার পরই সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে নিজ দলের নেতাকর্মীদের মারপিটে জখম হন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক মিরাজুল ইসলাম। এ সময় তার ডান চোখের নিচে রক্ত জমে গেছে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড কলেজপাড়া এলাকায়। আহত মিরাজুল ইসলাম কালীগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের ২নং ওয়ার্ড শাখার প্রচার সম্পাদক ও কলেজপাড়া গ্রাম কমিটির সভাপতি। মিরাজুল ইসলামের এক ছেলে আলমগীর হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া সংসদের ফুটবল খেলোয়াড়। রোববার সকালে আওয়ামী লীগ নেতা মিরাজুল ইসলামের সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, কলেজপাড়া এলাকায় করোনা সংকটের মধ্যে ১০ টাকার কার্ড, ভিজিডি কার্ডের তালিকা তৈরি হয়। কিন্তু তালিকায় প্রকৃত অসহায় ও দুস্থরা স্থান পায়নি। তিনি এ বিষয়ে শনিবার সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে নিজের ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। এরপর কলেজপাড়া এলাকায় নিজ বাড়ির পাশে একটি দোকনের সামনে সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে ১০/১২ জন এসে হামলা করে। চড়-ঘুষি ও লাথিতে ডান চোখের নিচে রক্ত জমে যায়। শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। আহত মিরাজুল ইসলাম জানান, তিনি মেইন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ফেরি করে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পন্য বিক্রি করেন। কিন্তু বাস বন্ধ থাকায় সেই ব্যবসা বন্ধ। তার স্ত্রী অগ্রনী ব্যাংকের পরিচ্ছন্নকর্মী। ৩ হাজার ৭’শ টাকা বেতন পান। এরমধ্যে মাজার হাড়ের সমস্যা। সেই চিকিৎসা ও ওষুধ কিনতে গেলে প্রায় সব টাকায় শেষ হয়ে যায়। কিছুদিন আগে বাকি করে চাল ও স্ত্রীর গয়না বন্ধক দিয়ে বাজার করে এনেছি। দীর্ঘ ৩৯ বছর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে আছি। এলাকার মানুষ আমাকে বঙ্গবন্ধুর পাগল বলে ডাকে। শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে দেওয়া স্ট্যাটাসটি হুবহু উল্লেখ করা হলো- (জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন মিডিয়া! চলে আসেন কলেজপাড়ায়। দিলিপ দাস এবং নীল রতন বিশ্বাস যদি সরকারী ত্রাণ সহায়তা পায়? তাহলে আমি সহ অনেক অসহায় পরিবার কেন সরকারী সহায়তা থেকে বঞ্চিত থেকে যাই)। মারপিটের শিকার হওয়ার পর তিনি জখম হওয়ার পর শনিবার বেলা ১২ টার দিকে তিনি অন্য একটি পোস্টে জখমের ছবিসহ লিখেন-(বিগত ৩৯ বছর এবং আগামী ৪ বছর আগামসহ মোট ৪৩ বছরের দলীয় অনুদান সরকারি সহায়তা সহ সব হিসাব আজ আমাকে কড়ায় গন্ডায় বুঝিয়ে দিয়েছেন। ধন্যবাদ কালীগঞ্জ পৌরসভার পৌর ও ২ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগকে। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। মিরাজুল ইসলাম আরো জানান, তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুষ্ঠু বিচার চান। যদি তিনি কোন অন্যায় করে থাকেন দল তাকে যে শাস্তি দিবেন তা তিনি মাথা পেতে নিবেন। হামলার ব্যাপারে অভিযুক্ত কালীগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের ২নং ওয়ার্ড শাখার সাধারণ সম্পাদক দীনবন্ধু বিশ্বাস বলেন, মিরাজুল ইসলাম ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক। শুনেছি তালিকার ব্যাপারে শিক্ষক জগদীশ বিশ্বাসের সাথে কথা কাটাকাটি ও এ পর্যায়ে হাতাহাতি হয়েছে। এসব বিষয়ে শনিবার কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র তাকে মিরাজুল ইসলামের সাথে কথা বলতে বলেন। কলেজপাড়ার একটি দোকানের ওখানে যাওয়ার আগেই তাকে মারধর করা হয়েছে। মারধরের সঙ্গে জড়িত কারা এ ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না। স্থানীয় এলাকার একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মিরাজুল ইসলাম খুবই নীরিহ একজন মানুষ। তাকে এভাবে মারধর করা উচিত হয়নি। এ ছাড়া মিরাজুল ইসলামের সাথে জগদীশ স্যারের কোন কথা কাটাকাটি বা মারধরের ঘটনা ঘটেনি। সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে ১০/১২ জনের একটি দল এসে মিরাজুল ইসলামকে মারধর করে চলে যায়। এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পৌর মেয়র আশরাফুল আলম বলেন, বিষয়টি তিনি ফেসবুক থেকে জেনেছেন। মিরাজুল ইসলাম নাকি তালিকার কাজ করা শিক্ষক জগদীশ বিশ্বাস মারধর করেছে। এরপর এলাকার ছেলে পেলে শিক্ষকের মারধর করার জন্য মিরাজুলকে চড়-থাবা দিয়েছে। এ বিষয়ে কেউ যদি বিচার চান, তাহলে বিষয়টি দেখা হবে।