নিউজ ডেস্ক:আবহাওয়া অনুকূল থাকায় চুয়াডাঙ্গা জেলায় গম চাষ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। গমে ব্লাস্টের কারণে ২০১৬-১৭, ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ মৌসুমে কৃষি বিভাগ থেকে গম চাষ নিষিদ্ধ ছিল। চলতি মৌসুমে এই এলাকার কৃষকদের গম চাষে অনুমতি দেওয়া হয়। গত মৌসুমে গম চাষে কৃষি বিভাগের নিষেধ সত্ত্বেও কৃষকেরা ৫২১ হেক্টর জমিতে গম চাষ করেছিলেন। জেলায় চলতি মৌসুমে গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৭৪ হেক্টর জমিতে। সে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গম চাষ হয়েছে ৭৭১ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ২শ হেক্টর জমিতে বেশি চাষ হয়েছে গম। তার মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ৩৫ হেক্টর, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৪৯২ হেক্টর ,দামুড়হুদা উপজেলায় ১৩৭ হেক্টর ও জীবননগর উপজেলায় ১০৭ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়েছে।
আলমডাঙ্গা উপজেলার কৃষক আসাদুজ্জামান জানান, তিনি এ বছর ২ বিঘা জমিতে গমের আবাদ করেছেন। গত বছরও তিনি একই পরিমাণ জমিতে গমের আবাদ করেছিলেন, বিঘাপ্রতি ১৮ মণ হারে গম পেয়েছিলেন। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূল থাকায় গমের বম্পার ফলন হবে এবং সেই সঙ্গে বাজারমূল্য ভালো পেলে গমে লাভবান হবেন বলে আশা করছেন তিনি।
একই ইউনিয়নের মনিরুদ্দিন মেম্বার জানান, ‘গত বছর আমি ধানের আবাদ করেছিলাম। ধানের দাম না পওয়ায় আমি এ বছর আমার প্রতিবেশীর কাছ থেকে বীজ নিয়ে ২ বিঘা ৫ কাঠা জমিতে গমের আবাদ করেছি। আমার বীজ, সার, সেচ, লেবারসহ ঘরে ফসল ওঠা পর্যন্ত খরচ হবে ১১-১২ হাজার টাকা। এ বছর আবহাওয়া গম চাষের উপযোগী থাকায় গাছ ভালো হয়েছে। ব্লাস্ট এখন পর্যন্ত লাগেনি। ব্লাস্ট না লাগলে প্রায় ৩৫ থেকে ৩৬ মণ গম উৎপন্ন হবে বলে আশা করছি। গমের বাজার ভালো পেলে ৪৩ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকার গম বিক্রি করতে পারব।’
দামুড়হুদা উপজেলার জুড়োনপুর ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের কৃষক কামরুজ্জামান মিলন মিয়া জানান, ‘কয়েক বছর ধরে ধান চাষ করে ধানের দাম না পাওয়ায় চলতি মৌসুমে কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে বারি-৩৩ জাতের গম আড়াই বিঘা জমিতে আবাদ করেছি। গমের খেত ভালো হয়েছে। আশা করি, ফলন ভালো হবে।’ একই ইউনিয়নের দলিয়ারপুর গ্রামের কৃষক ফজলুর রহমান জানান, ‘২০১৬ সালে গমের আবাদ করেছিলাম। সে বছর গমে ব্লাস্টের কারণে কৃষি বিভাগের নির্দেশে গমে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলাম। ৩ বছর পর চলতি মৌসুমে কৃষি বিভাগের প্রশিক্ষণ নিয়ে গোপালপুর-লক্ষিপুর-দলিয়ারপুর ব্লকে সরকারি ১২ বিঘা প্লটের আড়াই বিঘা জমিতে বারি-৩৩ জাতের গমের আবাদ করেছি। আমাদের এই প্লটে কোনো গমের মাথা সাদা হয়নি। আমরা দুবার স্প্রে করেছি। আমাদের গমের খেত ভালো হয়েছে। আশা করি, ফলন ভালো হবে।’
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নাজমুল হক এই প্রতিবেদককে জানান, এই উপজেলার গমে ব্লাস্ট লাগেনি। জীবননগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমীন আক্তার জানান, এবার ব্লাস্টের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। এই উপজেলায় ১০৭ হেক্টর জমিতে গমের আবাদ হয়েছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে বেশির ভাগ কৃষক বারি-৩৩ জাতের গমের আবাদ করেছেন। এই জাতটি মোটামোটি ব্লাস্ট প্রতিরোধক। সাধারণত গমের যখন শীষ বের হয়, তখনই গমে ব্লাস্ট দেখা যায়।
দামুড়হুদা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, ‘গমের বীজ বপনের সময় ছত্রাকনাশক করে বপন করলে তা মোটামুটি ব্লাস্ট মুক্ত থাকে। তিনি আরও জানান, উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে অনেক কৃষক বারি -৩৩ জাতের গমের আবাদ করার কারণে ব্লাস্টের কোনো রিপোর্ট আমাদের কানে আসেনি। তা ছাড়া এই উপজেলার অনেক কৃষক ক্যাশক্রপ বা বাণিজ্যিক শস্য হিসেবে গমের আবাদ করে থাকেন।’
আলমডাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, যাঁরা কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে গমের আবাদ করেছেন, তাঁদের গমে ব্লাস্ট লাগেনি। কৃষি বিভাগের আওতার বাইরে যারা পুরোনো দেশি বীজ আগাম বপন করেছেন, উপজেলাব্যাপী এমন ২ বিঘা জমিতে ব্লাস্ট লাগার খবর পাওয়া গেছে। তিনি আরও জানান, রাতে শীত, দিনে গরম, হঠাৎ বৃষ্টি, মেঘলা আবহাওয়া, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি-এমন আবহাওয়ায় গমে ব্লাস্ট লাগতে পারে।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক সুফি রফিকুজ্জামান বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহসহ এই এলাকায় ব্লাস্টের কারণে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে গমের আবাদ নিষিদ্ধ ছিল। চলতি বছর থেকে বারি-৩০ থেতে ৩৩ জাতের গমের আবাদ করার নির্দ্দেশনা দিচ্ছি আমরা।’ তিনি আরও বলেন, ‘বীজ বপনের পূর্বে বীজ ছত্রাকনাশক করে বপন করতে পারলে মোটামোটি ব্লাস্টমুক্ত রাখা যায়। তা ছাড়া গমের বীজ বপনের পর ৩টি স্প্রে করতে পারলে ব্লাষ্ট না লাগার সম্ভাবনা থাকে। তারপরও আবহাওয়াজনিত কারণে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষে গমে ব্লাস্ট লাগার সম্ভাবনা থাকে। আলমডাঙ্গা উপজেলায় অল্প পরিমাণ জমিতে ব্লাস্ট লাগার খবর পাওয়া গেছে। ওই সব জমিতে ক্ষতির পরিমাণ খুবই কম। কৃষি বিভাগের পরামর্শে সেটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে। গম যেন ব্লাস্টে আক্রান্ত না হয়, এ জন্য আমাদের পরামর্শ নিতে হবে।’