নিজস্ব প্রতিবেদেক, ঝিনাইদহঃ এবার ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের ৭৫ বছর বয়সী বৃদ্ধ আদিল উদ্দিনের পাশে দাড়িয়েছেন শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উসমান গনি। বৃদ্ধা স্ত্রী, প্রতিবন্ধী ছেলে, বিধবা মেয়ে ও তার সংসার চালানোর জন্য ২ মাসের খচর নিজের পকেট থেকে দিয়েছেন ইউএনও। এছাড়াও তার প্রতিবন্ধী ছেলে একটি কার্ড করে দেওয়া ব্যবস্থা নিয়েছেন তিনি। জানা গেছে, রোববার সকালে শৈলকুপা থেকে ঝিনাইদহ শহরে আসার পথে গাড়াগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে বৃদ্ধ আদিল উদ্দিনকে ভ্যান চালাতে দেখেন তিনি। বয়সের ভারে বেকিয়ে যাওয়া শরীর নিয়েও ভ্যান চালাচ্ছিলেন তিনি। ব্যাপারটি চোখে পড়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। দুপুরে অফিসে ফিরে লোকটির ঠিকানা সন্ধান করে সোমবার তার অফিসে ডাকেন ইউএনও। পরে ২ মাস সংসার চালানো খরচ দেন ও তার প্রতিবন্ধী ছেলেকে একটি কার্ড করে দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উসমান গনি বলেন, ‘গাড়াগঞ্জ স্ট্যান্ডে অতিবৃদ্ধ এবং বয়সের ভারে কুঁজো হয়ে যাওয়া একজন ব্যক্তির খুব ধীরে ধীরে যাত্রিসহ পা দিয়ে ভ্যান চালিয়ে যাওয়া চোখে পড়ল। দৃশ্যটি প্রথমে দেখে খুব খারাপ লাগল। জানা গেল লোকটি এই এলাকায় ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। আমি ঐ ব্যক্তির ঠিকানা যোগাড় করতে বলি। পরে জানতে পারি, লোকটির নাম মোঃ আদিল উদ্দিন তার বাড়ি শৈলকুপা উপজেলার দুধসর ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামে। সাথে দেখা করার জন্য তাকে সংবাদ দেওয়া হয়। সোমবার সকালে ভ্যান চালিয়ে তিনি আমার অফিসে আসেন। আলাপকালে তার পরিবারের বিস্তারিত তথ্য জানা যায়। লোকটির এক ছেলে প্রতিবন্ধী। অন্য ছেলে ঢাকায় থেকে পড়াশুনা করে, কিন্তু বাবার খোঁজ রাখে না। তিন মেয়ে বিবাহিত। এক মেয়ে বিধবা হয়ে বাবার কাছে থাকে। অর্থাৎ সংসারে বৃদ্ধা স্ত্রী, প্রতিবন্ধী ছেলে, বিধবা মেয়ে ও তিনি নিজে। সংসারে একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তিও তিনি নিজে। বয়সের কারণে সোজা হয়ে হাটতে পারে না। কিন্তু জীবন বাঁচানোর তাগিদে প্রতিদিন ভ্যান নিয়ে বাইরে যেতে হয়। দ্রুত ভ্যান চালাতে পারে না বলে তার ভ্যানে কেউ উঠতে চায়না বলে তিনি জানান। দিনে ৪০/৫০ টাকা আয় হয়। তাই দিয়ে কোন রকম সংসার চলে। কোন কোন দিন না খেয়েও থাকতে হয়। তবে তিনি ভিক্ষা করেন না। আত্ম মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকতে চান। এই বয়সে সংসারে বিশ্রামে থাকার কথা, নাতি-নাতনি নিয়ে আনন্দে থাকার কথা। কিন্তু তার ভাগ্যটা অন্যরকম! আগামী ২ মাস সংসার চালানোর মত নগদ অর্থ তাকে দিলাম। তার প্রতিবন্ধী ছেলেকে একটি প্রতিবন্ধী কার্ড করে দেওয়া হচ্ছে। বৃদ্ধ লোকটিকে কিভাবে স্থায়ীভাবে আয়ের ব্যবস্থা করা যায় এটাই এখন ভাবছি’। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার এই মহতি কাজকে সাধুবাদ জানিয়েছেন জেলার বিভিন্ন মহল।