জীবননগর পৌর এলাকার সুবোলপুরে বিষধর সাপের উপদ্রব, এলাকাজুড়ে আতঙ্ক
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যান্টিভেনাম না থাকায় কবিরাজই ভরসা, জীবন ঝুঁকির শঙ্কা!
নিউজ ডেস্ক:জীবননগর উপজেলার সাপের গ্রাম নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে জীবননগর পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড সুবোলপুর গ্রাম। এক দিনে চারজনসহ এ পর্যন্ত প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষকে দংশন করেছে বিষধর সাপ। এ নিয়ে গোটা গ্রামবাসীর মধ্যে সাপের আতঙ্ক বিরাজ করছে।
জানা গেছে, গত এক মাসের ব্যবধানে এ গ্রামে প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে সাপে কেটেছে। প্রতিনিয়তই সুবোলপুর গ্রামে সাপের অত্যাচার বেড়েই চলেছে। গতকাল বুধবার সুবোলপুর গ্রামের সিদ্দিক আলীর স্ত্রী খালেদা খাতুন ঘরে ঘুমানো অবস্থায় সাপে কাটে। একই দিনে একই গ্রামের আমজাদ আলীর ছেলে আবুল হোসেন, খোকনের ছেলে রিফাত, আ. আলীমের স্ত্রী পলিসহ এ পর্যন্ত গ্রামের অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষকে সাপে কেটেছে। দিনের পর দিন সাপে কাটা রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় গোটা গ্রামবাসীর মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম আতঙ্ক।
এদিকে, জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যান্টিভেনাম না থাকায় সাপে কাটা রোগীদের চিকিৎসা নিতে হচ্ছে প্রাচীন আমলের কবিরাজের কাছে। যার ফলে এলাকায় কবিরাজের কদরটাও বেশ বেড়ে গেছে। তবে কবিরাজের কাছে চিকিৎসা নিয়ে কতটা ঝুঁকিমুক্ত হচ্ছে, এটা নিয়েও রয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে আশঙ্কা। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বেশ কিছু দিন যাবত বৃষ্টির ফলে মাঠে পানি জমে রয়েছে। ফলে এলাকায় বিষধর সাপের উপদ্রব বেড়েই চলেছে।
জীবননগর পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার আপিল মাহমুদ বলেন, ‘সুবোলপুর গ্রামে প্রতিনিয়ত বাড়ছে সাপে কাটা রোগীর সংখ্যা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যান্টিভেনাম না থাকায় সাপে কাটা রোগীদের নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। জেলা সদর হাসপাতালে অ্যান্টিভেনাম থাকলেও আমাদের এখান থেকে যেতে যেতে রোগীর জীবন নিয়ে দোটানের মধ্যে পড়তে হয়। ফলে এলাকার সাধারণ মানুষের একমাত্র ভরসা এলাকার কবিরাজ। যদি সরকারিভাবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যান্টিভেনাম রাখা হয়, তাহলে আমাদের জন্য অনেক উপকার হত।’
জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. মাহমুদ বিন হেদায়েত সেতু বলেন, ‘হঠাৎ বৃষ্টির কারণে জীবননগর উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামে সাপে কাটার ঘটনা ঘটেছে। সুবোলপুর গ্রামে যে সাপে কাটার ঘটনা ঘটছে, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেনি। আমাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যান্টিভেনাম না থাকলেও আমরা রোগীদের চুয়াডাঙ্গা সদর হাসাপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা করে থাকি। গ্রামের অনেকে কবিরাজের মাধ্যমে চিকিৎসা নেয়। তবে সবার খেয়াল রাখতে হবে যখন সাপে কাটে ওই রোগীকে প্রাথমিকভাবে যে স্থানে সাপে কেটেছে, সেই স্থান থেকে রক্ত বের করতে এবং খারযুক্ত সাবান অর্থাৎ কাপড় কাচা সাবান পানি দিয়ে ভালোভাবে পরিস্কার করতে হবে। তাহলে বিষমুক্ত হবে। তবে সাপে কাটলে বাড়িতে না থেকে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চলে আসতে হবে।’
জীবননগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাজি হাফিজুর রহমান বলেন, জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এখন পর্যন্ত অ্যান্টিভেনাম দেওয়া হয়নি। তবে কুকুরে কামড়ানো ভ্যাকসিনটা দেওয়া হয়েছে। তবে অ্যান্টিভেনামটাও জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেওয়া হবে।
এদিকে স্থানীয়সহ সুশীল সমাজের দাবি, সরকারিভাবে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যান্টিভেনামের ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে সাপের উপদ্রব থেকে জীবননগর উপজেলাবাসীকে মুক্ত করা যাবে।