নিউজ ডেস্ক:
এ বছর সরকারিভাবে ইঁদুর নিধন করে উত্তরাঞ্চলে প্রায় এক লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন আমন ধান রক্ষা করা হয়েছে।
গত এক মাসে দুই কোটি ৩০ লাখ ইঁদুর নিধন করে এই ধান রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি অফিস।
এ ছাড়া প্রতিবছর উত্তরের ১৬ জেলায় প্রায় সাড়ে তিন লাখ মেট্রিক টন আমন ধান ইঁদুরের কারণে কৃষক গোলায় তুলতে পারছে না। যা আমনের মোট উৎপাদনের ৬ শতাংশ। প্রতি মৌসুমে গমের মোট উৎপাদনের ১০ শতাংশ, আলুর ৬ শতাংশ, শাক সবজির ৫ শতাংশ, নারকেলের ১০ শতাংশ ও আনারসের ১০ শতাংশ ফলন ইঁদুর খেয়ে ফেলে।
রংপুর ও রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলে চলতি আমন মৌসুমে প্রায় ২১ লাখ হেক্টরে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। এই পরিমাণ জমি থেকে প্রায় ৫৫ লাখ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উৎপাদনের ৬ শতাংশে ভাগ বসায় ইঁদুর।
আমন ধান কাটা ও মাড়াইয়ের আগে আগে হাজার হাজার ইঁদুর খেতে আক্রমণ করে ধান সাবার করে ফেলে। ইঁদুরের অত্যাচারে কৃষক কাঙ্ক্ষিত ফলন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তবে সরকারিভাবে ইঁদুর নিধন করে এ বছর উত্তরাঞ্চলে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন আমন ধান রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। চলতি বছরের ৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত চলে এই ইঁদুর নিধন অভিযান।
কৃষি অফিস জানায়, চলতি আমন মৌসুমে রংপুর বিভাগে প্রায় দুই কোটি এবং রাজশাহী বিভাগে প্রায় ৩০ লাখের বেশি ইঁদুর নিধন করা হয়েছে।
তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে রংপুর বিভাগে ইঁদুর নিধন করে ১ লাখ ২৪ হাজার মেট্রিক টন ও রাজশাহী বিভাগে প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন ধান রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।
এ ছাড়াও সেচ নালাগুলোতে ইঁদুর নির্বিচারে চলাচল করে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পানি নষ্ট করে সেচ কাজে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটিয়েছে। স্থানীয় জনগণের অসচেতনতার কারণে প্রতিবছরই এই অঞ্চলে ইঁদুরের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। ফলে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না।
জানা গেছে, ইঁদুরের অত্যাচার থেকে ফসল বাঁচাতে ’৭০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে ইঁদুর নিধন শুরু হয়। তবে সরকারিভাবে ১৯৮৩ সাল থেকে আনুষ্ঠানিক দেশে এই ইঁদুর নিধন অভিযান শুরু হয়। কিন্তু কার্যকরভাবে ইঁদুর নিধন করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে মোট উৎপাদনের একটি উল্লেখ্যোগ্য অংশ ইঁদুরের পেটে চলে যায়।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক শাহ আলম জানান, দেশে ১১ প্রজাতির ইঁদুর রয়েছে। এরা যা খায় তার চেয়ে অনেক বেশি খাদ্য শস্য নষ্ট করে। ইঁদুর নিধনে কৃষক আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখিত পরিমাণ আমন ধান রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে বলে তিনি জানান।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা এম. বাশার জানান, জনগণের সচেতনতায় আগের চেয়ে ইঁদুর নিধন অনেকাংশে বেড়েছে। তাই ফসলের ক্ষতির পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কমে এসেছে।