নিউজ ডেস্ক:
পটুয়াখালীর আট উপজেলাতেই আলুর ফলন ভালো হয়েছে।তবে গলাচিপা উপজেলার মুরাদনগর গ্রামে আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। এ কারণে গ্রামটি আলুর গ্রাম হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে।
গলাচিপা উপজেলা থেকে পানপট্টি যাওয়ার পথে এই মুরাদনগর গ্রাম। রাস্তার দুই পাশ জুড়েই আলুচাষিদের ব্যাপক ব্যস্ততা। পরিবারের সবাই মিলে খেত থেকে তুলছেন, আবার কেউ তা মাথায় নিয়ে এক জায়গায় স্তূপ করে রাখছেন। এমন দৃশ্যই এখানের চারদিকে।
আলু উৎপাদনে মাটি উপযোগী এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে বলে জানান স্থানীয় আলুচাষিরা। পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে এ জেলায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২৯০ হেক্টর জমি। কিন্তু এ বছর ১৭২০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ করা হয়েছে।
এর মধ্য সদর উপজেলায় ৬০ হেক্টর, বাউফল উপজেলায় ২২৫ হেক্টর, গলাচিপা উপজেলায় ১ হাজার হেক্টর, কলাপাড়া উপজেলায় ১০২ হেক্টর, দশমিনা উপজেলায় ৭০ হেক্টর, মির্জাগঞ্জ উপজেলায় ১০৫ হেক্টর, দুমকী উপজেলায় ৫৮ হেক্টর এবং রাঙ্গাবালী উপজেলায় ১০০ হেক্টর জমিতে গোল আলুর আবাদ করা হয়েছে।
তবে গলাচিপা উপজেলার মুরাদনগর গ্রামে বেশি আলুর আবাদ করেছেন কৃষকরা। আলুচাষিরা জানান, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে মুন্সীগঞ্জের পরেই গলাচিপা উপজেলা আলু চাষে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করতে পারবে বলে তাদের বিশ্বাস।
মুরাদনগর গ্রামের আলুচাষি জামাল খান জানান, তিনি এ বছর ৩৫ একর জমিতে আলুর আবাদ করেছেন। আলুর বীজ রোপণ থেকে শুরু করে ৬০ দিনের মাথায় আলু খেত থেকে উত্তোলন শুরু করে দিয়েছেন। স্থানীয় কৃষি বিভাগের সঠিক পরামর্শ, অনুকূল আবহাওয়া এবং উপযোগী মাটি ইত্যাদি কারণে এ বছর আলুর উৎপাদন ভালো হয়েছে।
তিনি জানান, এ আলু যদি চাষ থেকে শুরু করে ৯০ দিনের মাথায় ক্ষেত থেকে উত্তোলন করা যায়, তাহলে এর দাম দেড় গুণ বেশি পাওয়া যেত। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা আর আলু সংরক্ষণের কোন উপায় না থাকায় অল্প সময়ে সল্প দামে এ আলু বাজারজাত করতে হচ্ছে।
মুরাদনগর গ্রামের আরেক আলুচাষি মোকলেসুর রহমান খান জানান, তিনি এ বছর বিএডিসির সহযোগিতায় মাত্র ৩৫ শতাংশ জমিতে আলুর আবাদ করেছেন। বীজ রোপণ থেকে শুরু করে খেত থেকে আলু ঘরে নিতে তার খরচ হয়েছে মাত্র ২২ হাজার টাকা। এ আলু দুই মাসের মাথায় খেত থেকে তুলে বাজারজাত করে তিনি পেয়েছেন ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা। সে ক্ষেত্রে এ বছর উৎপাদিত আলু থেকে তার লাভ হয়েছে ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা।
তিনিও জানালেন, সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ৬০ দিনের মাথায় আলু খেত থেকে তুলে বাজারজাত করতে হয়েছে। অন্যথায় আরো ভালো দাম পাওয়া যেত।
এ গ্রামের আলুচাষি আল-আমীন হাওলাদার জানান, ডিসেম্বর মাস থেকে আলুর আবাদ শুরু করেন তারা। ফেব্রুয়ারির শেষ অথবা মার্চের মাঝামাঝি সময়ে খেত থেকে আলু তোলা শুরু করেন।
তার মতে, সঠিক পরিচর্যা আর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আলুর অধিক ফলন আশা করা যায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নজরুল ইসলাম মাতব্বর জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর এ জেলায় আলুর উৎপাদন ভালো হয়েছে। তারাও কৃষকদের সঠিক পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন।