জিকে প্রকল্পের খাল খনন ও দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নেই
নিউজ ডেস্ক:বোরো মৌসুমে আবাদের জন্য কৃষকরা পানির জন্য ব্যাপক আগ্রহে চেয়ে আছে জিকে ক্যানেলে সেচ প্রকল্পের কর্মকর্তাদের দিকে। ধানের দাম কম হওয়ায় সার, তেল, বীজসহ নানা ধরণের ফসলের সামগ্রী মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় অনেকেই জিকে ক্যানেলের সেচের উপরে নির্ভর করে আসছে। ইতোমধ্যে বোরো ধানের আবাদের কারণে প্রয়োজনীয় চাষের পানি সংগ্রহ করছে স্যালোইঞ্জিন ও বৈদ্যুতিক মটরে। এতে বিঘা প্রতি জমির বড় অংশ নিয়ে যায় সেচ মেশিনের মালিকরা। এক সময়ে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প গঙ্গা সেচ প্রকল্পের অধীনে কয়েক লাখ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দেয়া হতো। সেচের মাধ্যমে কুষ্টিয়াসহ ৫টি জেলার চাষীরা বিভিন্ন ধরনের ফসলের আবাদ করতো। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদাসীনতার কারণে জিকের অধীনে বিভিন্ন ছোট বড় ক্যানেল খনন কাজ না করায় ভরাট হয়ে গেছে ক্যানেলগুলো। পানি চলাচল না করায় অবৈধ দখলদারদের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে ক্যানেলগুলো। ফলে পানির অভাবে থমকে গেছে চাষীদের মাঠের বোরো চাষসহ লক্ষাধিক একর ফসলের আবাদ। বর্তমানে বোরো মৌসুমেও চাষের জন্য সেচ প্রকল্পের পানি না পেয়ে বিপাকে পড়েছে-আলমডাঙ্গাসহ কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গা জেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা। তবে, জিকে ক্যানেলের তদারকিতে স্থানীয় কর্মকর্তাদের মাধ্যমে মৌসুমে আবাদী জমির অনুপাতে সেচ পানির বিল প্রয়োগ করা হলেও এই সকল টাকার কোন খোঁজ রাখে না পানি উন্নয়ন বোর্ড কতৃপক্ষ।
তথ্যসূত্রে জানা যায়, ১৯৬৯ সালে কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা ও যশোর জেলার ১ লাখ ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দেয়ার জন্য সরকার ১৯৫৪ সালে পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতুর ১ কিলোমিটার ভাটিতে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা জিকে সেচ প্রকল্পের কাজ শুরু করে। ১ হাজার ৬শ’ ৬৫ কিলোমিটার সেচ খাল দিয়ে বছরে দু’বার সেচ সুবিধা দিয়ে ১ লাখ ২০ হাজার কৃষককে সেচ সুবিধা দেয়া হতো। সে সময় জিকের ক্যানেলে প্রায় সময়ই পানি থাকতো। মানুষ গোসল করা থেকে শুরু করে সকল কাজে ব্যবহার করতো। কিন্তু পানি আগ্রাসনের কারণে একদিকে ভারতের ফারাক্কা পানি চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়া ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের উদাসীনতার কারণে জিকের খালগুলো ভরাট হয়ে গেছে। ঠিকমত পানি না থাকায় জিকের খালগুলো হারিয়েছে তার যৌবন। দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প গঙ্গা সেচ প্রকল্প হুমকীর সম্মুখীন হয়েছে। সেচ প্রকল্পের অধীনে ১ লাখ ৪২ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দিতে পারছেনা। প্রকল্পের ১৯৩ কিলোমিটার প্রধান সেচ খাল ও ১ হাজার ৪শ’ ৬২ কিলোমিটার শাখা খাল পানি শূন্য হয়ে পড়েছে। পানির অভাবে থমকে গেছে চাষীদের মাঠের আউস ও বোরো চাষসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ।
গত ২০১৫ সাল থেকে আমন ও বোরো মৌসুমে আলমডাঙ্গা উপজেলা অঞ্চলে নির্বিঘœভাবে কয়েক লক্ষ হেক্টর জমি ধানসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ করা হয়। এই অঞ্চলে সর্বসেরা হিসাবে-ধান, পাট, তামাক, পান, ভুট্টার ব্যাপক পরিমাণের চাষ হয়। চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলা দেশের মধ্যে সর্বত্তোম উচ্চতাময় অঞ্চল হওয়ায় এখানে চাষের জন্য ব্যাপক পানির প্রয়োজন হয়ে পড়ে। জিকে ক্যানেল সেচ প্রকল্পের আওতাধীন ও কর্মকর্তাদের উদাসিনতার কারণে আলমডাঙ্গার বিভিন্ন এলাকার সেচকৃত খাল অনেকটাই স্থানীয় বাসীন্দাদের দখলে চলে গেছে। সঠিক তদারকি আর পূর্ণ খনন না করার জন্য এই সকল খাল চলে যাচ্ছে ভুক্তভোগীদের দখলে।
এই অঞ্চলে কয়েক লক্ষ হেক্টর জমিতে পূর্ণ খনন করে সেচ সুবিধা দেয়ার পরিকল্পনা করলেও নানা কারণে তা ব্যাহত হয়। ফলে জিকে সেচ প্রকল্পের অধীনে ৪ লাখ ৮৮ হাজার একর জমি অনাবাদী থেকে যায়। ফলে কুষ্টিয়াসহ ৫ জেলার লাখ লাখ কৃষকের জীবন জীবিকাসহ ৫ কোটি মানুষের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হচ্ছে। জেলার কুমারী, বাড়াদী , আইলহাঁস ও খাসকররাসহ বিভিন্ন শাখা খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় ও অবৈধ দখলদারারা সেখানে বাড়ি ঘর নির্মাণসহ অনেকে চাষের উপযুক্ত স্থান গড়ে তুলেছে। আলমডাঙ্গা উপজেলাসহ পৌর এলাকায় জিকে ক্যানেলের পাড় দখল করে গড়ে তুলেছে অবৈধভাবে ইটপাথরের মার্কেট। এই কারণে ক্যানেলের গভীরতা কমে যাওয়াসহ অনিশ্চয়তার মুখে জিকে সেচ প্রকল্পের কার্যক্রম। তবে এলাকার লোকজন নিজেদের সম্পত্তি অযৌক্তিক দাবি করে অনেকেই খাল ভরাট করে বাড়ি-ঘর মার্কেট তৈরি করেছে। এতে পানি সরবরাহের পথ সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ করে ফেললেও জিকে কর্তৃপক্ষ রয়েছে নিরব। অবৈধ দখলদারদের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে ফসলের আবাদ। অনাবাদী থাকছে হাজার হাজার হেক্টর জমি। খালগুলো আর আগের অবস্থায় নেই। ভরাট হয়ে যাওয়ায় কৃষি আবাদসহ পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। ক্যানেল ভরাট হয়ে যাওয়ায় গোসল করতে পারছেনা মানুষ। পানি শূন্য হয়ে পড়ায় বিভিন্ন সমস্যায় পড়েছে কুষ্টিয়ার জিকে খাল সংলগ্ন মানুষ। তাই পানির জন্য খাল খননের দাবি আলমডাঙ্গাবাসীর।
জিকের প্রধান খালসহ শাখা খালগুলো খনন না করায় সঠিকভাবে পানি পাচ্ছেনা জিকের অধীনে আবাদযোগ্য চাষীরা। ফলে অনাবাদী থাকছে হাজার হাজার একর জমি। চুয়াডাঙ্গা-কুষ্টিয়াসহ ৫ জেলার লাখ লাখ কৃষকের জীবন জীবিকাসহ ৫ কোটি মানুষের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হচ্ছে। জিকে কর্তৃপক্ষ প্রধান খালসহ শাখাখালগুলো খনন ও অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে কৃষকদের পানির নিশ্চয়তাদান করবেন এটাই প্রত্যাশা আলমডাঙ্গাবাসীর।