অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের ঘটনাস্থল পরিদর্শন : পরিবারের দাবি পরকিয়ার জেরে হত্যা
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি: আলমডাঙ্গা উপজেলার আইলহাঁস লক্ষীপুর গ্রামে নিখোঁজের পরদিন বেগুয়ারখালীর ধান ক্ষেত থেকে হাসিবুল (২৫) নামের এক মুদি ব্যবসায়ীর ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার সকাল ১১টার দিকে ধানের ক্ষেত থেকে লাশ উদ্বার করে পুলিশ। পরে লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম ও কলিমুল্লাহ (সদর সার্কেল) ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেন। তবে হত্যার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করা না গেলেও পরিবারের দাবি নারীঘটিত কারনে তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় নিহতের পরিবার এখনো পর্যন্ত থানায় মামলা করেনি। নিহত হাসিবুল আলমডাঙ্গা উপজেলার আইলহাঁস লক্ষীপুর গ্রামের বিশ্বাসপাড়ার আব্দুল কুদ্দুসের একমাত্র ছেলে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় হাসিবুলের মরদেহ গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফনকার্য সম্পন্ন হয়েছে। এ নিয়ে গ্রাম জুড়ে চলছে চরম আতঙ্ক।পুলিশ ও পারিবারিক সুত্রে জানা গেছে, শুক্রবার রাতে দোকান বন্ধ করে বাড়ি থেকে খাওয়া দাওয়া শেষে একটি ফোন পেয়ে বাইরে চলে যায় হাসিবুল। বাড়ি ফিরতে দেরি হওয়ায় রাত ১১টার দিকে হাসিবুলের স্ত্রী হিরা খাতুন মোবাইল ফোন দিলে একটু পরেই বাড়ি ফিরে আসবে বলে জানায় হাসিবুল। কিন্তু সে রাতে আর বাড়িতে না ফিরলে ভোর থেকে চারিদিকে খোঁজাখুজি শুরু হয়। সকালে একই ইউনিয়নের ঘোলদাঁড়ি গ্রামের মৃত হারান মন্ডলের ছেলে ছানোয়ার হোসেন প্রতিদিনের ন্যায় মাঠে কাজ করতে গেলে হাসিবুলের ক্ষতবিক্ষত লাশ দেখে এলাবাসীর খবর দেয়। পরে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে মর্গে পাঠায়।নিহত হাসিবুলের মা জানায়, একই এলাকার মৃত শুকুর আলীর ছেলে হোটেল ব্যবসায়ী আপিল আলীর চতুর্থ স্ত্রী শিল্পী খাতুনের কারণেই তার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে৷ কিছুদিন আগে আপিল তার বাড়িতে এসে হুমকি দিয়ে গেছে হাসিবুলকে। তিনি বলেন, অপিল হোসেন ব্যবসায়ী হওয়ায় আমার ছেলের দোকান থেকে যাবতীয় মালামাল ক্রয় করতো এবং তার সাথে আমার ছেলের সখ্যতা গড়ে উঠে। বেশ কিছুদিন আগে আপিলের সাথে তার স্ত্রী শিল্পী খাতুনের মনমালিন্য হয়। একপর্যায়ে তার স্ত্রী বাপের বাড়ি চলে যায়। পরে আপিল হাসিবের মাধ্যমে তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিল। আপিল আমার ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তার স্ত্রীর সাথে আমার ছেলের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এই নিয়ে আমার ছেলেকে হুমকি ধাকমি দিয়ে আসছিল সে। এমনকি বাসায় এসে হুমকি দেয় বলে জানায় নিহত হাসিবুলের মা। তিনি আরো বলেন, আপিলের স্ত্রী বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা একটি হোটেলে কাজ করে। তাই আপিলের সন্দেহ আমার স্ত্রীর সাথে আমার ছেলে হাসিবুল চুয়াডাঙ্গায় এসে যোগাযোগ করতো। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিহত হাসিবুল বছর তিনেক আগে এলাকার প্রথম স্ত্রী মোশারফের মেয়েকে তালাক দেয়। এই নিয়ে ঝামেলার সৃষ্টি হলে পরে এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তির মাধ্যমে বিষয়টি মিমাংশা করা হয়।এদিকে, আপিলের বিষয়ে এলাকাবাসী বলেন, আপিলের আইলহাঁস বাজারে একটি খাবারের হোটেল রয়েছে।
এই পর্যন্ত চার চারটি বিয়ে করেছে আপিল। প্রথমে আলমডাঙ্গার জামজামি বানিনাথপুর গ্রামের মেয়ে আনজিরা খাতুনকে বিয়ে করেন। বর্তমানে প্রথম স্ত্রীর একটি সিনবাদ (১৭) নামের একটি ছেলে রয়েছে। পরে আঞ্জিরা খাতুন কোন কারনে চলে যায়। দ্বিতীয় বিয়ে করেন, ঝিনাইদহ জেলায় হালিমা খাতুন নামের এক মেয়েকে। কিছুদিন পরই সেও চলে যাই অন্যজনের হাত ধরে। তৃতীয় স্ত্রী হিসাবে বিয়ে করেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের দোস্ত গ্রামের মেয়ে চম্পা খাতুনকে। কয়েক মাস পর চম্পা খাতুন বাপের বাড়ি চলে যায় আপিলকে ছেড়ে। শেষে মেশ চতুর্থ স্ত্রী হিসাবে বিয়ে করেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সরোজগঞ্জ মোহাম্মদ জুম্মাহ গ্রামের হানিফের মেয়ে শিল্পী খাতুনকে। এই শিল্পী খাতুনও আপিলের ছেড়ে চলে যায়। তবে অভিযুক্ত আপিলের মা অস্বীকার করে বলেন, শিল্পীর সাথে হাসিবুলের কোন সম্পর্ক নাই। আমার ছেলে আপিলের হোটেল থাকায় হাসিবের দোকানে যাবতীয় মালামাল ক্রয় করতেন। তাই তাদের মধ্যে একটা ভাল সম্পর্ক গড়ে উঠে। তবে আমার পুত্রবধুর সাথে হাসিবুলের কোন সম্পর্ক নাই। এ বিষয়ে অপিলের প্রথম স্ত্রী আঞ্জিরার ছেলে সিনবাদ জানায়, আমি আমার বাবার সাথেই থাকি। আমার সৎ মা শিল্পীর সাথে তেমন কোন কথাবার্তা বলতে কখনো দেখি নাই।
এদিকে কয়েকজন এলাকাবাসী নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানায়, ভাল নিরীহ মানুষকে কেউ কোন দিন হত্যা করে না৷ নিশ্চয় তার মধ্যে কোন কিন্তু ছিল যা প্রকাশ পাইনি জনসম্মুখে। তবে নিহত হাসিবুল লম্পট টাইপের ছিল বলে জানায় তারা। তবে কি কারনে হাসিবুলকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে এনিয়ে এখনো কোন কিছু জানা যায়নি। তবে ইতিমধ্যে প্রকৃত হত্যার রহস্য উদঘাটনে মাঠে নেমেছে পুলিশ। তবে পুলিশ সঠিক তদন্ত করলে আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে বলে ধারণা এলাকাবাসীর। নিহত হাসিবুল তার দুই বোনের মধ্যে এক মাত্র পুত্র সন্তান। তার পরিবারে পিতামাতাসহ স্ত্রী হিরা খাতুন ও একমাত্র পুত্র হামিম (৬) রয়েছে। গতকাল বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ নিজ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হলে আত্মীয়দের আহাজারিতে এলাকার বাতাশ ভারি হয়েছে উঠছিলো। কেউই ধরে রাখতে পারেনি চোখের পানি। গতকাল বাদ মাগরিব জানাযা শেষে গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে লাশের দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এব্যাপারে চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কলিমুল্লাহ (সদর সার্কেল) ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেন এবং পরিবারে সকলের সাথে কথা বলেন ও দ্রুত হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দেন। একপর্যায়ে তিনি সাংবাদিকদের জানান, নিহতের পারিবারিক সুত্রে অনুযায়ী নারীঘটিত কারনে তাকে হত্যা করা হয়েছে। তবে আমরা নারীঘটিত, নাকি অন্য কোন কারনে তাকে হত্যা করা হয়েছে এনিয়ে তদন্ত চলছে। খুব তাড়াতাড়ি এ হত্যাকা-ের রহস্য উদঘাটন করতে পারবো। আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান বলেন, পারিবারিক সুত্রে অনুযায়ী নারীঘটিত কারনে তাকে হত্যা করা হয়েছে। এ নিয়ে আমাদের তদন্ত চলছে। তবে খুব শিঘ্রই আমরা প্রকৃত রহস্য জানতে পারবো। তিনি আরো বলেন, এ ঘটনায় নিহতের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত কোন অভিযোগ কিংবা মামলা হয়নি। তবে মামলার প্রক্রিয়াধীন বলে জানায় এই কর্মকর্তা।