নিউজ ডেস্ক:
মণপ্রতি আমন ধানের দাম দেড়শ’ টাকা বেশি হওয়ায় মন্দাভাব বিরাজ করছে খুলনার আমনের হাটগুলোতে।
এ কারণে হাটে ধান সরবরাহ কম হওয়ার পাশাপাশি ক্রেতার সংখ্যাও কমে গেছে। হাটগুলোতে সব ধরনের ধানের মূল্য গড়ে মণপ্রতি দেড়শ’ টাকা করে বেড়েছে। লোকসান এড়াতে ব্যাপারিরা ধান কিনতে অনীহা প্রকাশ করছেন।
গেল বোরো মৌসুমে দাম পাননি খুলনার কৃষক। প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে আমন আবাদ করতে হয় এবার। অক্টোবর মাসে হঠাৎ বৃষ্টিতে ক্ষতি হয় ১২ হাজার হেক্টর জমির আমন। পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় উৎপাদন বিঘ্ন, পোকার আক্রমণ ও ইঁদুর নষ্ট করেছে ধানখেত। কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন হয়নি। ভরা মৌসুমে হাটে আমন আমদানির পরিমাণ গেলবারের তুলনায় অর্ধেক।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কয়রা উপজেলার আমাদী, দাকোপ উপজেলার চালনা, বাজুয়া, ডুমুরিয়া উপজেলা সদর, বটিয়াঘাটা উপজেলা সদর ও কৈয়া বাজারে আমন উঠতে শুরু করেছে। ইরি-২৩, রানি স্যালুট, জটাই, ভাইটেল ও ইরি-২৮ জাতের ধান উঠেছে গত দুই সপ্তাহ ধরে।
ডুমুরিয়া উপজেলার ঘোনাবান্দা গ্রামের অধিবাসী ব্যাপারি আনন্দ বিশ্বাস জানান, কৈয়া বাজারের তুলনায় বটিয়াঘাটা উপজেলা সদরে আমন আমদানির পরিমাণ বেড়েছে। ফলন কম, কৃষকরা বাজারে ধান আনলেও উল্লেখযোগ্য ক্রেতা নেই। তার দেওয়া তথ্য মতে, ধানের দামের তুলনায় চালের দাম কম। তাই কৃষকরা আগ্রহ দেখান না।
ব্যাপারি ঋষিকেষ বণিক জানান, শনিবার কৈয়া হাটে এক হাজার মণ আমন বিকিকিনি হয়। ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে প্রতি হাটে আমদানির পরিমাণ ছিল আনুমানিক ২ হাজার মণ।
মল্লিক রাইচ মিলের মালিক জানান, এক বছরের ব্যবধানে ধানের দাম মণপ্রতি দেড়শ’ টাকা বেড়েছে। জটাই ৬০০ টাকার স্থলে ৭৮০ টাকা, ইরি-২৩ ৫৮০ টাকার স্থলে ৭৫০ টাকা, ভাইটেল ৮০০ টাকার স্থলে ৯৫০ টাকা, রানি স্যালুট ৯০০ টাকার স্থলে ১ হাজার ৬০ টাকা ও ইরি-২৮ জাতের ধান ৮০০ টাকার স্থলে ১ হাজার ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ডুমুরিয়া উপজেলার ঘোনা তালতলা গ্রামের কৃষক সুধান্য বৈরাগী জানান, তিন বিঘা জমিতে আমন আবাদে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। অক্টোবরে অতিবৃষ্টি, পানি নিষ্কাশনের সুযোগ না থাকা এবং ঈঁদুরের আক্রমণের ফলে ১৪ মণ ধান পেয়েছেন। সব মিলিয়ে বিক্রি হয়েছে ১৪ হাজার টাকা। তিনি জানান, শ্রমিকের মজুরি যে হারে বাড়ছে ধানের দাম সে হারে বাড়ছে না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গত বছরের ২১ আগষ্ট অতিবৃষ্টিতে ১২ হাজার হেক্টরের আমন ও শাকসবজি বিনষ্ট হয়। দুদিনে ২১৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতে ১৩ হাজার কৃষকের ২৫ কোটি ৪৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকার কৃষিপণ্য ক্ষতি হয়।ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো হচ্ছে পাইকগাছা, ডুমুরিয়া, ফুলতলা, দিঘলিয়া, রূপসা ও কয়রা। এবারে জেলায় ৯১ হাজার ৬২৫ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৩০ হাজার মেট্টিক টন।